শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘গুম হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিন, না হয় আমাদেরকেও মেরে ফেলুন’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৮, ৯:৪২ পিএম

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন বেশ কিছু ব্যক্তির স্বজন এক হলেন এক আয়োজনে। তারা সবাই গুম হয়েছেন অভিযোগ তুলে তাদেরকে উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবিও জানান তারা।

আন্তর্জাতিক ‘গুম সপ্তাহ’ উপলক্ষে শনিবার সকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়।

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি নামে একজন বলেন, ‘হয় গুম হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিন না হয় আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন। এভাবে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ না করে একসাথে মরে যেতে চাই। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না।’

গত কয়েক বছর ধরেই আলোচিত এক বিষয় গুম। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের স্বজনদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে, কিন্তু এরপর আর কারও খোঁজ মেলেনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলার নিয়ম আছে। তবে যাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়নি, তাদেরকে তুলে নেয়ার দায় কখনও স্বীকার করে না র‌্যাব-পুলিশ। আর এদেরকে উদ্ধারেও কার্যকর কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি।

মানববন্ধনে নিখোঁজদের স্বজনদের মধ্যে যারা বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ছিল ছোট্ট শিশু লামিয়া আক্তার মীম। তার বাবা কাওসার ছিলেন গাড়িচালক। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বক্তারা আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই নিখোঁজদেরকে পরিবারে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় মীমের বক্তব্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

শিশুটি বলে, ‘আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে। ঈদের জামা কিনে দেবে। অন্যদের মতো বাবার হাত ধরে আমিও হাঁটতে চাই। হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) আন্টি, আপনি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

আন্তর্জাতিক ‘গুম সপ্তাহ’ উপলক্ষে শনিবার সকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

সভাপতির বক্তব্যে নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, ‘আমার মায়ের এখানে আজ আসার কথা ছিল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে কুঁজো হয়ে গেছেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।’

‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে চাই। তাদের সাথে ঈদ করতে চাই।’

‘সূত্রাপুরে গুম হওয়া পারভেজের ছোট্ট মেয়ে হৃদি আজ খুবই অসুস্থ। ঠিকমত খেতে পারে না। রানার বোন পাগল হয়ে গেছে। আমরা এইসব দৃশ্য আর দেখতে চাই না।’

‘আমার বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগম রাতের অন্ধকারে প্রলাপ বকে। গভীর রাতে হঠাৎ হঠাৎ দরজা খুলে রাখে এই বুঝি তার প্রিয় সন্তান সুমন ঘরে ঢুকবে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে কারও সন্তান ঘরে ঢুকছে না। আল্লাহ আমাদেরকে নিয়ে যাও নাহলে আমাদের ভাইদেরকে ফিরিয়ে দিন।’

ছেলের ছবি হাতে নিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেন ছাত্রলীগের রামপুরা থানা শাখার সভাপতি এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগমও।

কর্মসূচিতে অংশ নেয় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও বলেন, তপুর মা প্রায়ই বলেন তারা আওয়ামী লীগ করেন, তাহলে তার ছেলেকে কে গুম করেছে।

বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার মতিনের ছেলে এব যুবলীগ নেতাও গুম হয়েছেন বলেও জানান মান্না।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালাসহ নাগরিক সমাজের সদস্যরাও এ সময় বক্তব্য দেন।

যাদের হদিস নেই সেই ব্যক্তিদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাইফুল রহমান সজিবের বাবা শফিকুর রহমান, আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেবী, নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুব রহমান সুজনের ভাই জাহিদ খান, কাজী ফরহাদের ভাই আমান।

মাহবুবুর রহমান রিপনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান শিপন, আমিনুল ইসলাম জাকিরের ভাই আলমগীর হোসেন আলিক, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমাও তাদের স্বজনকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন