বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্দুকযুদ্ধ অব্যাহত নিহত আরও ১২

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে দশ জেলায় বন্দুকযুদ্ধে আরো ১২ জন নিহত হয়েছে। আইন-শ্খৃলা বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার ভোর পর্যন্ত কথিত এসব বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের ভাষ্য। মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৯ মে রাত থেকে এ কয়দিনে ৬৫ জনের মৃত্যু হল দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এসব বন্দুকযুদ্ধের যে বিবরণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আসছে, তা মোটামুটি একই রকম। তাদের দাবি, অভিযানের সময় মাদক চক্রের সদস্যরা গুলি চালালে পাল্টা গুলিবর্ষণ হয়, তাতেই এদের মৃত্যু ঘটে। তবে বিভিন্ন সময় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে, ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় তাদের স্বজনদের। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে বর্ণনা করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভূরুঙ্গামারীতে শনিবার ভোরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তার নাম ইব্রাহীম আলী (৩৪)। সে দক্ষিন বাঁশজানী গ্রামের মৃত ইনসাফ আলীর পুত্র। ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, শনিবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তঘেষা দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের জন্য গেলে মাদক চোরাকারবারীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের উপর আক্রমন চালালে এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে মাদক পাচার সিন্ডিকেট প্রধান ইব্রাহীমকে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে আনলে চিকিৎসকরা তাকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে সকাল ৯ টায় তার মৃত্যু ঘটে।
মোঃ আবদুল আলীম খান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় পুলিশের সাথে বন্দুকযদ্ধে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৫) নিহত হয়েছে। থানা ওসি সৈয়দ আবু মোঃ শাহজাহান কবির জানান, উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া টু রামচন্দ্রপুর সড়কে শনিবার রাত ২টায় ঘটেছে। নিহত বাবুল উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের আশাবাড়ী গ্রামের দীঘিরপাড় এলাকার মৃত আব্দুল মালেক (মালু মিয়া) এর ছেলে এবং নিহত আলমাস একই ইউনিয়নের উত্তর তেতাভ‚মি গ্রামের মৃত আসাদ উদ্দিনের ছেলে। এদের মধ্যে বাবুল ৮টি এবং আলমাস ১৬টি মামলার আসামী ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাজা, একটি রাম দা, এক রাউন্ড গুলি, একটি বিদেশী পিস্তল, দুইটি পিস্তলের কার্তুজের খোসা এবং ৫/৬ টি পাথরের টুকরা উদ্ধার করে। এই ব্যাপারে এস আই তীথংকর দাশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইন, মাদক উদ্ধার ও পুলিশ অচল এবং অপমৃত্যুসহ থানায় তিনটি মামলা দায়ের করেছেন।
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কচুয়া থানা পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ৫ মাদক মামলার আসামী ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বাবলু (৩৫) নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ১০নং আশ্রাফপুর ইউনিয়নের বনরা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত বাবলু ওই গ্রামের সুলতার মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় ৫টি মাদক মামলা রয়েছে। তার বাড়ী থেকে পুলিশ ১শ’ ১০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। কচুয়া থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, এসময় পুলিশ ঘটনার স্থল থেকে ২টি রাম দা ও দেশীয় অস্ত্রসহ ৭ পিস ককটেল উদ্ধার করে। দিনাজপুর অফিস্ জানায়, গত শুক্রবার দিনগত রাতে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে র‌্যাবের সাথে এবং সদরে পুলিশের সাথে দুটি পৃথক বন্দুকযুদ্ধে ২ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের দাবী নিহত দু’জনই মাদক ব্যবসায়ী। প্রথম ঘটনাটি ঘটে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে। র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-১৩ দিনাজপুর ক্যাম্পের সদস্যরা মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে নিয়মিত টহল দিচ্ছিল। উল্লেখিত এলাকায় পৌছালে ৮/১০ জনের একটি দলের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করে র‌্যাব সদস্যরা তাদের দিকে এগিয়ে যায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গুলি চালালে র‌্যাবও জীবন বাঁচাতে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে গেলে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে তল্লাশী চালায়। এ সময় একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। পরে জানা যায় তার নাম সাপদারুল (৪০)। সে উপজেলার নন্দাইগাঁও গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের পুত্র। এ সময় তার কাঁছ থেকে ১টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও ৯৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের দাবী সে মাদক ব্যবসায়ী এবং তার নামে বিভিন্ন থানায় ২৫ থেকে ২৭টি মামলা রয়েছে। অপর ঘটনাটি ঘটে দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায়। এখানে পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলিতে সালাম নিহত হয়। এ সময় তার কাছে থাকা একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি হাসুয়া, ৩টি ককটেল, ২’শ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতের পরিবারের দাবী, দু’দিন আগে সালামকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছিল।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীতে কবির হোসেন (৫০) নামের এক ডাকাত গুলিতে নিহত হয়েছে। সে পরশুরাম ধনিন্ডা গ্রামের আবুল খালেক বেতু মিয়ার ছেলে। ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খাঁন চৌধুরী জানান, শনিবার ভোরে রুহুতিয়া বিক্স ফিল্ড এলাকায় গোলাগুলির খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরে তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। তার লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ধারনা ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। পরে এক পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কবির মারা যায় । তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ১০টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর এলাকায় র‌্যাবের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলিতে রেন্টু মিয়া(৩৫) এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন জানান, একদল মাদক ব্যাবসায়ী জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর এলাকায় অবস্থান করছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার মধ্যরাতে ওই এলাকায় র‌্যাব অভিযান চালায়। এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায় এবং মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে রেন্টু মিয়াকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। নিহত রেন্টু মিয়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শাহজাহান (৩০) নামে শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের তেলওয়ারী গন্ডিমোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহজাহানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৮ টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইন, পাচটি গুলির খোসা, ১টি রামদা, ১টি কিরিচ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুরে(মন্দিরপুর) এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের মৃত আছের উদ্দিন শেখের পুত্র। পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশী তৈরী শার্টারগান, ৩ রাউন্ড গুলি, ৪ রাউন্ড গুলির খালি খোসা ও ২শত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। নিহত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৯টি মামলা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে কথিত বন্দুক যুদ্ধে মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৪) নামে এক মাদকব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত মোবারক সদর উপজেলার ছিট চিলারং গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে। গতকাল শনিবার ভোর রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ি গ্রামে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ১শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বলে দাবি সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়ার।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার জাকির তবক গ্রামে দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গোলাগুলিতে সবির হোসেন খান (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মাদক বিক্রি ও ভাগাভাগি নিয়ে মনির ও সবির হোসেনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে অনেকে পালিয়ে যায়। পরে রাস্তার পাশে সবিরের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Monirul ২৭ মে, ২০১৮, ১২:২৪ এএম says : 0
I am happy.kill more of drug seller.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন