বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অমরত্ব পেয়েই গেল রিয়াল, জিদান, রোনালদো

কি অর্জন করেছি তা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি আমরা -জিনেদিন জিদান রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্বপ্ন ভাঙা-গড়ার এক ফাইনাল দেখল ফুটবল বিশ্ব। দেখল একজন গোলরক্ষকের অমার্জনীয় দুটি ভুল। যে ভুলের পূর্ণ ফয়দা আদায় করে লিভারপুলকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। পরশু রাতে কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ফাইনালে ইয়ুর্গুন ক্লপের দলকে ৩-১ গোলে হারায় জিনেদিন জিদানের দল। বিজয়ী দলের পক্ষে জোড়া গোল করেন গ্যারেথ বেল, বাকিটা করিম বেনজেমার। লিভারপুলের হয়ে একটি গোল শোধ দেন সাদিও মানে।
রিয়ালের এই জয়ে লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিয়ুসের অবদানটাও কম নয়। মাদ্রিদের দল তিন গোলের দুটি-ই পায় প্রতিপক্ষের জার্মান গোলরক্ষকের অমার্জনীয় দুই ভুলে। এজন্য ম্যাচ শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে হাত জোড় করে ভক্তদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন কারিয়ুস। বেলের করা বাকি গোলটা ছিল অসাধারণ। এছাড়া গোলের তেমন সুযোগ তৈরী করতে পারেনি রিয়াল।
তবে কারিয়ুস নয়, অল রেডরা তার চেয়ে বড় ধাক্কা পায় মোহাম্মাদ সালাহকে হারিয়ে। যে মিশরীয় ফরোয়ার্ডের কাধে চড়ে তাদের এই পর্যন্ত আসা, ম্যাচের বয়স অর্ধঘন্টা স্পর্শ করার আগেই দলের সেই সবচেয়ে বড় তারকাকে হারিয়ে মানষিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে লিভারপুল। পরবর্তিতে যার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। ২৫ বছর বয়সী মাঠ ছাড়ার আগে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল লাল বাহিনীর দখলে।
শুধু সালাহ নয়, চোখের পানিতে মাঠ ছাড়েন রিয়ালের স্প্যানিশ রাইট ব্যাক দানি কারবাহালও। দুজনের চোটের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি; তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তাদের অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য দুই দেশের জাতীয় দলের কোচের কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে।
ম্যাচের ৩০তম মিনিটে সালাহকে হাত দিয়ে টেনে সার্জিও রামোস শুধু ভূপাতিতই করেননি, রিয়াল অধিনায়কে চাপা পড়ে সালাহ’র শরীর। সেই চাপায় ঢাকা পড়তে বসেছে মিশরের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। কাঁধে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন লিভারপুল স্ট্রাইকার। এর ঠিক ৬ মিনিট পর একই ভাগ্য বরণ করেন কারবাহাল। তার আঘাতটা গোড়ালিতে। এরপরই ম্যাচে ফেরে রিয়াল। তবে গোলশূন্য থেকেই শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মাথায় কারিয়ুসের হাস্যকর ভুলে গোল পেয়ে যায় রিয়াল। ফাঁকায় বলের দখল নিয়ে হাত দিয়েই তা সতীর্থের কাছে বাড়াচ্ছিলেন কারিয়ুস। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী বেনজেমা পা বাড়িয়ে বলের দিক পাল্টে জালের দিকে ঠেলে দেন। কারিয়ুসের তখন চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি ছিল ফরাসি স্ট্রাইকারের ৫৬তম গোল।
এর চার মিনিট পর কর্নার থেকে ডি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে দলকে সমতায় ফেরান সাদিও মানে। আসরে সেনেগাল স্ট্রাইকারের এটি দশম গোল। তবে ৬১তম মিনিটে ইস্কোর বদলি নেমে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেন বেল। বদলি নামার তিন মিনিট পর মার্সেলোর ক্রস থেকে দৃষ্টিনন্দন ওভারহেড কিকে দলকে এগিয়ে নেন ওয়েলস তারকা। এরপরও সমতায় ফেরার ভালো সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু মানের শট বার কাঁপিয়ে ফিরে আসে।
৮৩তম মিনিটে আরেকটি মারাত্বক ভুল করেন কারিয়ুস। দুর থেকে বেলের বুলেট গতির শট তার হাত ফসকে জালে জড়ায়। এরপর আর ম্যাচে ফিলতে পারেনি প্রিমিয়ার লিগের দলটি। ত্রয়োদশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে লস বø্যাঙ্কোসরা।
এ নিয়ে গত পাঁচ মৌসুমে চারবারই চ্যাম্পিয়ন হলো রিয়াল। ইউরোপিয়ান কাপের নাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হওয়ার পর এই প্রথম কোন দল টানা তিনবার শিরোপা জিতল। মৌসুমে রিয়ালের পারফরম্যান্সে ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। কোপা দেল রে থেকে আগেভাগে ছিটকে পড়ার পর লিগের শিরোপা লড়াইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি তারা। তবে ইউরোপ সেরার মুকুট ধরে রেখে মৌসুম শেষ করতে পারায় ভীষণ খুশি কোচ জিদান। বিটি স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘আমার খুব ভাল লাগছে। এই ক্লাব ও দলের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দারুণ কিছু। এটা এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। কী অর্জন করেছি তা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি আমরা।’ প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিন ইউরোপ সেরার মুকুট মাথায় তোলা এই কিংবদন্তি বলেন, ‘এটাই এই ক্লাবের স্ট্যাটাস। এটা কিংবদন্তিতুল্য একটি ক্লাব। এটা এমন একটি ক্লাব যারা ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। অবশ্যই, এই ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আমি খুবই খুশি।’ ম্যাচে জোড়া গোল করা বেলকেও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি ফরাসি কোচ, ‘গ্যারেথের গোল ছিল চমৎকার, তাকে অভিনন্দন।’
এদিকে যখন নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার উচ্ছাস প্রতিপক্ষ শিবিরে তখন সব হারানোর বেদনা। হারের কারণ হিসেবে সালাহ’র চোটকে বড় করে দেখছেন লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেল্ডারসন, ‘যখন সালাহ চোট পেল, এরপর তারা বল নিয়ে আধিপত্য করতে শুরু করল। তারা প্রথমার্ধে একটা গোল করেছিল, যেটা ছিল অফসাইড; কিন্তু আমরা ম্যাচে ছিলাম। তখনও আমাদের বিশ্বাস ছিল লড়াই চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু দুটি গোল হয়ে গেল যা অন্য রাতে হতো না।’ তিনি বলেন, ‘আজ রাতে আমরা যথেষ্ঠ ভালো ছিলাম না। তবে আমি দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। যে সমর্থকরা মাঠে এসেছিলেন, তাদের নিয়েও গর্বিত। আশা করি, আমরা এগিয়ে যেতে পারব এবং আরও অনেক ফাইনালে খেলতে পারব; সামনে তা কাজে লাগাতে পারব।’
রিয়াল মাদ্রিদ ৩ : ১ লিভারপুল

০ আধুনিক সংস্করণে প্রথম দল হিসেবে টানা তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য কীর্তি গড়ল রিয়াল মাদ্রিদ। সব মিলিয়ে বায়ার্ন মিউনিখের (১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬) পর প্রথম দল হিসেবে টানা তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন।

০ প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেন ২০১৬ সালে মাদ্রিদের ক্লাবটির দায়িত্ব নেয়া জিনেদিন জিদান। আগের দুই ফাইনালে জুভেন্টাস ও নগর প্রতিদ্ব›দ্বী অ্যাটলেটিকোকে হারিয়েছিল রিয়াল।

০ প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর ও পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

০ ইউরোপ সেরার মঞ্চে এর আগে রিয়াল সবশেষ ফাইনালে হেরেছিল ১৯৮১ সালে; লিভারপুলের কাছে। তারপর থেকে এনিয়ে সাতবার ফাইনাল খেলে সবকটিতে জিতল মাদ্রিদের ক্লাবটি।

০ ২০০৫ সালে নিজেদের পাঁচ শিরোপার শেষটি জিতেছিল লিভারপুল। ২০০৭ সালের পর আবার ফাইনালে হারল ইংল্যান্ডের দলটি।


০ বেশি গোল করা দুটি দল উঠেছিল শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে। লিভারপুল (৪০টি) এগিয়ে ছিল রিয়ালের (৩০টি) চেয়ে।

০ ২০১৩ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলা দল গুলোর মধ্যে লিভারপুল একাদশের গড় কম; ২৬ বছর ১৭০ দিন। ২০১৩ সালের ফাইনালে খেলা বরুসিয়া ডর্টমুন্ড খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ২৫ বছর ২৫৫ দিন। সেবার বরুসিয়ার দায়িত্বে ছিলেন লিভারপুলের বর্তমান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।

০ ২০১৬-১৭ আসরের ফাইনালেও এই একই একাদশ নিয়ে খেলেছিল রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এর আগে কোনো ক্লাব পরপর দুই মৌসুমের ফাইনালে একই একাদশ নিয়ে খেলেনি।

০ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ চারটি গোল করলেন করিম বেনজেমা। এর আগে ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে ৪ গোল করেছিলেন দিদিয়ের দ্রগবা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন