ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কুয়েতের তরফ থেকে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কুয়েতী প্রস্তাব পাস কাটিয়ে নিজেদের সমাধান প্রস্তাব আকারে পেশ করলে সেই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কেউ সমর্থন দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় চলমান সহিংসতার জন্য হামাসকে দায়ী করা হয়েছে। আল-জাজিরার জেমস বয়েস মন্তব্য করেছেন, শেষ কবে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব মাত্র এক ভোট পেয়েছে তা স্মরণ করা কঠিন। তার ভাষ্য, নিজেদের আনা প্রস্তাবে নিজেদের দেওয়া একটি মাত্র ভোট পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘খুবই অপমানজনক।’ সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা লিখেছে, ইসরাইল সীমান্তের কাছে গাজাবাসীর বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি রয়েছেন সাংবাদিক থেকে নার্স। সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি আহতও হয়েছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায়।
জাতিসংঘে শুক্রবার কুয়েতী প্রস্তাবের বিষয়ে ভোট গ্রহণ হয়। রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ মোট ১০টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ইথিওপিয়া ভোট দানে বিরত ছিল। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই কুয়েতী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কুয়েতী প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও পরে তা তিন দফায় সংশোধন করা লেগেছিল। সর্বশেষ সংশোধিত প্রস্তাবে ‘গাজা উপত্যকাসহ দখলকৃত ফিলিস্তিনের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়ার’ সুপারিশ করা হয়েছিল। তারপরও জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে ভেটো দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবটি ‘খুবই এক পেশে।’ তিনিও ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের জন্য গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসকে দায়ী করেছেন।
এই ঘটনার পর ‘প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের’ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হানান আশরাউই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আরও একবার প্রমাণ করল তারা ইসরাইললের অন্ধ সমর্থক এবং ইসরাইল যতবারই আইন ভাঙুক, ইচ্ছা মতো মানুষ মারুক, গণহত্যা চালাক, যুদ্ধাপরাধ করুক, সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র তাদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবে। তার ভাষ্য, ‘এই ভেটো প্রদানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আরও একবার ইসরাইলের আইন ভাঙার অভ্যাস এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নির্মম দখলদারিত্বকে যথার্থতা দেওয়ার চেষ্টা করল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, আন্তর্জাতিক আইন, এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হানা আঘাতের আইনি ও রাজনৈতিক বৈধতা দিলো।
যুক্তরাষ্ট্র তার প্রস্তাবে হামাসসহ সমমনা সকল সংগঠনের তৎপরতা বন্ধের প্রস্তাব করেছে। তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবে ইসরাইলি সরকারের বলপ্রয়োগের ঘটনা ও ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কোনও কিছু বলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই শুধু ওই প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে স্বীকৃত দেশগুলোও সমর্থ দেয়নি। মার্কিন প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের ৩ সদস্য না ভোট দিয়েছে। ভোট দানে বিরত ছিল ১১টি দেশ। সূত্র : আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন