শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাস জীবন

পথচারীদের জন্য ইফতার সাজিয়ে বসে থাকেন নুবা গ্রামের বাসিন্দারা

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৭:৪৭ পিএম, ৪ জুন, ২০১৮

ইনকিলাব ডেস্ক : সুদানের আল-নুবা গ্রাম। এই গ্রামে পবিত্র রমজান মাসের বিকেল অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন। সূর্য হেলে পড়তেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির উঠানে গালিচা বিছাতে। পুরো উঠানজুড়ে গালিচা বিছানোর পর শুরু হয় ইফতার সাজানোর পালা। ভিন্নস্বাদের পানীয় আর সবজি-গোস্ত ও বিশেষ ধরনের কেক দিয়ে সাজানো হয় বড় বড় থালা।
এর পর বাসিন্দারা ছুটতে থাকেন প্রধান সড়কের দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সড়কের মাঝখানে গিয়ে যানবাহন থামাতে থাকেন।
একজন গিয়ে বাস থামান তো আরেকজন গিয়ে বাসের ড্রাইভারকে গাড়ি পার্ক করার জায়গা দেখিয়ে দেন। আর একজন যাত্রীদের ইফতার মাহফিলের জায়গার পথ দেখান। আকস্মিক ঘটনায় পর্যটকরা আশ্চর্য হলেও পরে আসল ঘটনা বুঝতে পারেন। কারণ বাস থামতেই বাসিন্দারা বলতে থাকেন, ‘ভাইয়েরা ইফতারের সময় হয়েছে। আসুন আমাদের সাথে ইফতার করুন’।
ইফতারের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে আল-নুবার বাসিন্দাদের অস্থিরতাও বাড়তে থাকে। পর্যটক ও পথচারীদের সেবায় যেন কোনো ত্রুটি না হয়। সম্মানের সাথে তাদের ইফতার বিছানো গালিচায় বসানো, তাদের সামনে ইফতার দেয়া- সবই চলতে থাকে শৃঙ্খলার সাথে।
ইফতারের ২০ মিনিট পর পর্যটক ও পথচারীদের সম্মানের সাথে আবার বাসে তুলে দেয়া হয়।
পর্যটকরা বুঝতে পারেন, মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান শুধু সংযমের মাস-ই নয়, প্রার্থনা, দান আর ক্ষমার মাসও।
সাধারণত মুসলমানরা পারিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করেন। কিন্তু সুদানের জাজিরা প্রদেশের এই গ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
আল-নুবা গ্রামের ১৬০ কিলোমিটার খার্তুম-ওয়ার্দ মাদানি মহাসড়কের পাশের বাসিন্দারা বলা যায় এক প্রকার জোর করেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ইফতার করান।
ইব্রাহিম আব্দুর রহীমের বাড়ি এই মহাসড়কের পাশেই। পেশায় চিকিৎসক। তিনি প্রতিদিন এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করেন। বলেন, ‘পথচারী ও পর্যটকদের ইফতার করানো আমাদের গ্রামের ঐহিত্য’।
ইব্রাহিম আনন্দের সাথে জানান, যখন ইফতারের সময় হয়, আমরা চেষ্টা করি গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া সব যানবাহন থামাতে এবং তাদের অনেুরোধ করি আমাদের সাথে ইফতার করার জন্য’।
তাদের এই আন্তরিক আতিথিয়তায় মুগ্ধ অতিথিরাও। তাদের সাথে ইফতার করা এক বাস চালক বলেন, ‘তারা মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেন। গাড়ি থামাতে বাধ্য করেন। তারপর যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথে ইফতার করে এবং পরে আবার যাত্রা শুরু করেন’।
আব্দুল্লাহ আদম নামে আরেকজন বলেন, ‘আমরা জানি রমজান মাসে জাজিরার বাসিন্দারা যানবাহন থামিয়ে ইফতার করান। এটা তাদের ঐতিহ্য’।
এ ঐতিহ্য নিয়ে জাজিরার বাসিন্দারা গর্ব করেন এবং একে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন তারা।
কারণ হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস ঈমানদারদের জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদার মুসলমানকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।
এই ইফতারে সাহায্যকারী বছর বিশেকের এক তরুণ বলেন, ‘আমরা ছোটদের কিছু কাজ দেই। কেউ হয়ত গালিচা বিছায়, আবার কেউ খাবার নিয়ে আসে। কাউকে পাঠাই রাস্তায় গাড়ি থামাতে’।
সে জানায়, ‘আমরা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু তাতে কোনো ভয় পাই না আমরা। কারণ আমরা জাজিরার ধর্মপ্রাণ মুসলমান’।
উল্লেখ্য, আল-নুবা গ্রামের বাসিন্দাদের সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার। তারা পেশায় কৃষক এবং সরকারি চাকুরিজীবী। বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামে পথচারী ও পর্যটকদের ইফতার করার প্রচলন চলে আসছে। একটি নিদিষ্ট সময়ের পর বাড়ির ছোটদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বলা যায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা বড়দের সাথে এই কাজে হাত লাগান। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেঁথে যায় এই ঐতিহ্যবাহী প্রচলন। পরে বড় হয়ে তারাও সেই পথে হাঁটেন। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন