শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

গুপ্তধনের সন্ধানে

প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোহেল রানা
(পূর্ব প্রকাশের পর) রহিম ও বাবু : কই, কই বলে বাম দিকে তাকাই এবং বলে দ্যাখ দ্যাখ হাবুর মত গর্তের ভিতর আর কেউ আছে কিনা?
হাবু : আরে না-না, একটু ডানদিকে খেয়াল করে দ্যাখ।
রহিম : দেখে ফেলেছি। তাই তো, চল গিয়ে দেখি, আসলে ওটা কী?
বাবু : আরে ওটা কিছু না, যাওয়ার দরকার নাই।
হাবু : এতক্ষণ যখন ঘোরাঘুির করলাম, ওটা যে কী না দেখে যাব না।
তিনবন্ধু গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলল গর্তের দিকে। কোন ভয়ভীতি তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। রহিম মাঝে মধ্যে অট্টহাসি দিচ্ছে এবং বলছে- ‘বলেছিলাম না কিছু একটা পাব।’
হাবু : ধ্যাত, পাওয়া-টাওয়া পরে, আগে গিয়েই দেখি না ওর ভিতরে কী আছে।
রহিম : কী আছে মানে? মেজাজটা গরম করিস না তোরা, নরম সুরে বল গু-প্ত-ধ-ন আছে।
আস্তে আস্তে গর্তের পাশে গিয়ে পৌঁছাল সবাই। রহিম আগেই লাফ দিল গর্তের ভিতর। তারপর হাবু ও বাবু। সত্যিই একটা জরাজীর্ণ বাক্স পড়ে আছে। মুখে একটা তালাও দেয়া। বাক্সটি যতœ সহকারে গর্ত থেকে উপরে তুলে আনল তিনজনে। বাক্সটির ওজন একটু বেশি ভারি ছিল। রহিম বলেই ফেলল দেখলি ওজনটা তো বেশ। মনে হয় মোটা অংকের গুপ্তধন আছে। রহিমের কথা শুনে হাবু আর বাবু একসঙ্গে বলে উঠল -‘হলেও হতে পারে দোস্ত’।
রহিম : গুপ্তধন, আহা-রে গুপ্তধন, আমাদের কপালে লেগেই গেল। এই আনন্দ তো আর ধরে রাখা যায় না। হায়রে কা-মহিলা (সাবু)। তুই যদি আমাদের সাথে থাকতি তাহলে ধনী হয়ে যেতি। বড়লোক হবো আহা বড়লোক।
রহিমের অবস্থা দেখে হাবু ও বাবু হাসিতে ফেটে পড়ে। তারা উভয়েই বলে রহিম নাচানাচি না করে চল সবাই মিলে বাক্সটি বাড়িতে নিয়ে যাই, তারপর দেখা যাবে এর ভিতরে কী আছে।
রহিম : আরে বোকা, বাক্স নয় বল সিন্দুক, আর এর ভিতরে কি আছে মানে বল গু-প্ত-ধ-ন। আহারে বড়লোক হবো, ব-ড়-লো-ক।
রাত তখন ৮টা। লোকজন চলাচল কমে গেছে। গ্রামের মানুষ তো এমনিতেই বনের ধারেকাছে আসত না। তারপরও রাত হয়ে গেছে, থাকার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। তিন বন্ধুতে অনেক যতœ করে সবার আড়ালে বাক্সটি নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাল। সবার একই কথা গুপ্তধন ভাগাভাগি করে তারপর বাড়িতে যাবে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রহিম তো বলেই ফেলল না বাবা বাক্স তোদের কাছে রাখা যাবে না, পারলে আমার বাড়িতে রেখে যা। হাবু ও বাবু তার কথায় রাজি হলো না। গুপ্তধন না নিয়ে তারাও বাড়িতে যাবে না বলে ঠিক করল। কঠিন সংকল্প নিয়ে সবাই একটি অন্ধকার জায়গায় বাক্সটি নিয়ে গেল। রহিম একটা বড় ইট দিয়ে বাক্সটির তালা ভেঙে ফেলল। বাবু ও হাবু মুখ থুবড়িয়ে পড়ল বাক্সের উপরে এবং তাড়াতাড়ি বাক্সের ঢাকনা খুলে ফেলল। ঢাকনা খুলে দেখা গেল তার ভিতরে আর একটি ছোট বাক্স। রহিম লাফ দিয়ে উঠল এবং বলল, ‘মনে হয় অনেক দামি জিনিস আছে রে বাবু।’ হাবু ছোট বাক্সটি বের করে নিয়ে আসলো বাইরের দিকে। কিন্তু তাতে কোন তালা মারা ছিল না। হাবু খুলতে গেলে রহিম নিষেধ করল। রহিম নিজেই খুলবে। সে বলেই ফেলল- ‘পাগল এসব খোলার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার আছে না, তোরা সব নাপাক অবস্থায় আছিস। বাথরুম করে পানি নিস না। আমাকে ছেড়ে দে আমিই খুলব বাক্সটি। রহিম ভাবভঙ্গি দেখিয়ে বাক্সের কাছে এগিয়ে আসল। রহিমের কথায় বাবু ও হাবু কিছুটা কষ্ট পেলেও গুপ্তধনের আশায় তারা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে রহিমকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসল। রহিম বিস্মিল্লাহ্ বলে বাক্সটি খুলেই ভিতরের জিনিস দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বাক্সের ভিতরে বড় ইটের সঙ্গে একটি বিড়াল বাঁধা আছে এবং গলায় একটা কাগজে মোটা অক্ষরে রহিম লেখা আছে। বাক্স খোলার পর বিড়ালটি পালিয়ে গেল। বিড়ালের মুখে টেপ লাগানো থাকায় তার কোনো শব্দই তারা শুনতে পায়নি। যাইহোক, এই অবস্থা দেখে বাবু ও হাবু হাসিতে ফেটে পড়ল। রহিম তো রেগে আগুন। সে অনুভব করল বাবু, হাবু ছাড়াও অন্য একটি হাসির শব্দ। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পেল বাবু ও হাবুর পিছনে সাবু দাঁড়িয়ে হাসছে। রহিমের আর বুঝতে বাকি রইল না এই কাজটি কার। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন