রমজান ও ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুমিল্লা শহরে আগমন ঘটছে মৌসুমি ভিক্ষুকের। বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী শিশু কিংবা একেবারে ছোট্ট শিশুকে ভিক্ষুক সাজিয়ে নামানো হচ্ছে কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে। এদের কেউ স্বেচ্ছায় এসেছে, আবার প্রতারকচক্র অনেককে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গ্রামগঞ্জ থেকে ধরে এনে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা এসব ভিক্ষুককে কুমিল্লার শহরের বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স, মসজিদ, হাটবাজার, কবরস্থান, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনালসহ গণজমায়েতের স্থানে বসানো হয়েছে যাকাত-ফেতরার আশায়।
কুমিল্লার শপিং কমপ্লেক্স খন্দকার ম্যানশন ও ছাত্তার প্লাজার আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, ময়লা কাপড় পরা ছোট ছোট শিশু আর নারীরা দাঁড়িয়ে আছে, মার্কেটগুলোতে কিনতে আসা মানুষগুলোর হাত টেনে দরছে ভিক্ষুকরা। রোজার সময় মানুষ দান খয়রাত বেশি করে এ আশায় কুমিল্লায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে যায়। আনু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধা। তিনি কুমিল্লায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। কুমিল্লায় এসেছেন গত মাসে। তিনি বলেন, দেশে কাম-কাজ নাই। তিন বছর ধইরা রোজায় এহানে আইয়া পড়ি। আর এই মাসে হেরা দানখয়রাতও বেশি দেয়। আনু মিয়া ঈদের পরদিন বাড়ি যাবেন। এই সময়টাতে ৫-১০ হাজার টাকা আয়ও করেন একজন ভিক্ষুক।
কুমিল্লার কান্দিরপাড় নিউ মার্কেটের সামনে, ছাত্তার প্লাজা, খন্দকার ম্যানশন, কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে, রাজগঞ্জ বাজার, চকবাজার, জজ কোর্ট এলাকা, ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজার সামনে, রানীর বাজার মাদরাসা, পুলিশ লাইন মসজিদ এসব স্পট ছাড়াও রয়েছে শহরের শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড, রেল ষ্ট্রেশন, জাঙ্গালিয় বাসষ্ট্যান্ড এসব স্থানে ভিক্ষুকরা গজল, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন গান গেয়ে বা ক্ষতস্থান দেখিয়ে ভিক্ষা করে। সরেজমিন দেখা যায়, হাত নেই, পা নেই, অন্ধ, কঙ্কালসার দেহ, অস্বাভাবিক বড় মাথা ও হাত-পা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা এমন বেশ কিছু পুরুষ, মহিলা ও শিশু শহরময় ভিক্ষা করছে। কুমিল্লা জজকোর্টের সামনে দেখা যায়, ছয়-সাত মাস বয়সের একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছে হাজেরা আক্তার। হাজেরার বয়স আনুমানিক নয়-দশ বছর। কোলের শিশুটি কে জানতে চাইলে সে বলে, ছোট ভাই। মায়ে কামে গেছে, হের লাইগ্যা ভাইটারে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। জানা যায়, অনেক মহিলার কোলে থাকে দুগ্ধপোষ্য শিশু। এই শিশুদের বেশির ভাগই তারা আনে বিভিন্ন বস্তি এলাকা থেকে ভাড়া করে। এ ছাড়া একই পরিবারের সবাই মিলেও পাশাপাশি পয়েন্টে ভিক্ষা করে। তারা আরো জানান, কয়েক বছর ধরে এই সময়ে ঈদ পড়ায় উপার্জন শেষে ঈদের পর তারা আবার গ্রামে ফিরে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন