শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ঐতিহাসিক বৈঠকে ট্রাম্প-কিম

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন সেই বহু প্রতীক্ষিত ঐতিহাসিক শীর্ষবৈঠকে বসছেন। এ জন্য উভয় নেতা আগে ভাগেই এসে পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরে। পরস্পরকে অপমান, হুমকি-ধমকি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর দু’জনের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেমন হবে এ বৈঠক, তা নিয়ে কৌত‚হল রয়েছে বিশ^ জুড়ে বহু মানুষের মনে, চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। সবার চোখ এখন সিঙ্গাপুরের দিকে। খবর আল জাজিরা ও পার্স টুডে।
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি সেভেন বৈঠক থেকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে ট্রাম্প সিঙ্গাপুরে এসেছেন। ট্রাম্প যেন অপেক্ষা করছেন কখন দেখা হবে কিমের সঙ্গে। সিঙ্গাপুরের সান্তোসা দ্বীপে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও উত্তর কোরিয়ার নেতার আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই বৈঠক। এটাই হবে আমেরিকার কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন কোনো নেতার প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকের মাধ্যমে কিম জং উন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা থেকে সরে আসবেন বলে আশা করছে আমেরিকা। বৈঠকে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্তকরণ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
অনেকের প্রশ্ন, মার্কিন বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে ভারসাম্যহীন খেতাব পাওয়া ট্রাম্প আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবেন নাতো? বৈঠকে বসার ঘোষণা দিয়ে তা বাতিল, পরে আবার একই তারিখে বৈঠকে বসার মতো ট্রাম্পের নাটকের কারণে এমন প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে অনেকের মনে। চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। সবার চোখ এখন নিবদ্ধ সিঙ্গাপুরের দিকে। যাহোক, বৈঠক থেকে মানবতার জন্য কল্যাণকর কিছু বেরিয়ে আসুক সবাই তা প্রত্যাশা করছে।
তবে ট্রাম্প সত্যিই বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চান কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি রক্ষার গ্যারান্টি নিয়ে। ইরানের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা ইস্যুতে ট্রাম্প যে বেঈমানি করেছেন তা হয়তো মাথায় রেখেই আলোচনা করবেন উত্তর কোরিয়ার নেতাও।
২০১৫ সালে দীর্ঘ দিনের আলোচনা ও দর কষাকষির পর সই হয়েছিল পরমাণু সমঝোতা চুক্তি জেসিপিওএ। এই সমঝোতায় আমেরিকার পাশাপাশি সই করেছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া। সমঝোতায় দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি যখন একে একে বাস্তবায়ন করছিল ইরান ঠিক সে সময়ই পিছটান দেয় আমেরিকা। সমঝোতা থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় মার্কিন বিশ্বাসঘাতকতার আরেকটি কালো অধ্যায়।
খবরে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদল আজকের বৈঠকের প্রস্তুতি বৈঠক সম্পন্ন করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট আগামীকাল চেয়ারম্যান কিমের সাথে বৈঠকের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সুস্পষ্ট ও অপরিবর্তিত।
উত্তর কোরিয়া বার্তা সংস্থা কেসিএনএ আজকের বৈঠক সম্পর্কে বলে, কোরীয় উপদ্বীপে একটি স্থায়ী ও টেকসই শান্তিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্তকরণ এবং পারস্পরিক উদ্বেগের অন্যান্য বিষয় আলোচনায় প্রধান গুরুত্ব পাবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন সোমবার বলেন যে মঙ্গলবারের বৈঠক নিয়ে তার প্রত্যাশা ও আশা উভয়ই পোষণ করেন। এ শীর্ষবৈঠক হবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সূচনা। তিনি বলেন, দু’নেতার মধ্যকার বৈঠকের একটি পদক্ষেপে গভীরে প্রোথিত বৈরি সম্পর্ক ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংলাপই পারমাণবিক সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউট-এর আলেকজান্ডার নেইল আল জাজিরাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কেরিয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি শান্তি চুক্তি করা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ, প্রমাণযোগ্য, অপরিবর্তনীয় (সিভিআইডি) পরমাণু অস্ত্রুমুক্ত চায়। নেইল মনে করেন যে দু’ নেতা এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেবেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, মঙ্গলবারের বৈঠকের ফলাফল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তবে যা হবে তা হচ্ছে সামনে এগোনো। উত্তর কোরিয়াকে এত সংক্ষিপ্ত সময়ে পরমাণ অস্ত্রমুক্ত করা সফল হবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। সিঙ্গাপুরের আইএনএসইএডি গ্রাজুয়েট বিজনেস স্কুলের আলোচনা বিশেষজ্ঞ হোরাসিও ফ্যালাকো বলেন, উত্তর কোরিয়াকে এখনি সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা যাবে না। তারা নিজেদের এমন একজন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নিরাপদ মনে করে না যিনি উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে আমরা আপনাদের উপর আগুন ও ক্রোধ বর্ষণ করতে যাচ্ছি এবং যে দেশটি ২৫ বছর ধরে উত্তর কোরিয়াকে একটি অশুভ রাষ্ট্র বলে আসছে।
একজন বিশেষজ্ঞ রেসনিক আল জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্প একজন চুক্তি-প্রণেতা হিসেবে নিজের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি করতে চাইবেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন প্রচারকামী। তিনি এ শীর্ষ বৈঠককে সংকট সমাধানের পথ নয়, সংকটের সমাধান হিসেবে দেখছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জাফর ১২ জুন, ২০১৮, ২:৫২ এএম says : 0
আশা করি সংকটের সমাধান হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন