ডেঙ্গু জ্বর হলো এক ধরনের ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। ডেঙ্গুর চার রকমের ভাইরাস আছে, এটি সংক্রামিত হয় মশার মাধ্যমে। এককালে অনেক দেশে এটিকে হাড়-ভাঙ্গা রোগ বলা হত, কারণ এতে শরীরের গ্রন্থি ও পেশীতে অসম্ভব ব্যথা হয়।
ডেঙ্গু প্রধানত হয় গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে। সাধারণত বর্ষাকােেল বা বর্ষার একটু পরেই এর প্রকোপ শুরু হয়। ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে ডাক্তারদের পরিচয় ২০০ বছরেরও আগে থেকে তবে আগে এটির এত প্রাদুর্ভাব ছিল না, বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) হিসেবে প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ইদানিং ডেঙ্গু মহামারীর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জার মত একটা অসুখ-ডেঙ্গু রক্তস্রাবি জ্বর (ডেঙ্গু হিমোরাহেজিক ফিবার) এটি সাধারণ ডেঙ্গুর থেকে বেশি ভয়াবহ।
কিভাবে সংক্রামিত হয় ঃ ম্যালেরিয়ার মতো ডেঙ্গুর ভাইরাসও মানুষের দেহে সংক্রামিত হয় মশার কামড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে মশাটি হল এডিস জাতের বিভিন্ন মশা। এ মশাগুলো ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত লোককে কামড়িয়ে প্রথমে নিজেরা রোগগ্রস্থ হয়। পরে সুস্থ ব্যক্তিদের কামড়ে তাদের রোগগ্রস্ত করে।
ভাইরাসের ধরণ ঃ ডেঙ্গু চার ধরনের ভাইরাসের যে কোনও একটির জন্য হতে পারে। এ ভাইরাসগুলো হল- ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ বা ডেন-৪। মুশকিল হল একটি ভাইরাসের আক্রমণে ডেঙ্গু হলে শুধু সে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। ফলে অন্য ভাইরাসের আক্রমণে আবারো ডেঙ্গু হতে পারে। অর্থাৎ সারা জীবনে একটি লোকের চারবারও ডেঙ্গু হতে পারে।
রোগের লক্ষণ ঃ সাধারণত ডেঙ্গু রোগবাহী মশা কামড়াবার ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে জ্বর দিয়ে রোগটি শুরু হয়। জ্বর প্রায় ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে, সে সঙ্গে ভীষণ মাথা ধরা, চোখের পিছনে ব্যথা, গ্রন্থি ও পেশীতে তীব্র যন্ত্রণা, বমি-বমি ভাব বা বমি হয়। জ্বর আরম্ভ হবার তিন-চার দিনের মধ্যে গায়ে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর এ উপসর্গগুলো নাও থাকতে পারে।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঃ ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা করে রোগটা ধরতে পারেন। তবে মহামারীর ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ দেখেই ডাক্তাররা বুঝতে পারেন।
চিকিৎসা ঃ ডেঙ্গুর কোন চিকিৎসা নেই। সাধারণত দু-সপ্তাহে রোগী সুস্থ হয়। যেটা দরকার সেটা হলো- বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নেওয়া। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল জিনিস খাওয়া, জ্বর কমানোর ঔষধ খাওয়া (আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের উপদেশ হল অ্যাসপিরিনের বদলে অ্যাসিটামিনোফেন অথবা অন্য কোন ব্যথা কমাবার ঔষধ খাওয়া)। রক্তস্রাবী ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হবার সম্ভাবনা থাকে। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণে সে সংখ্যা শতকরা এক ভাগের চেয়ে কম।
প্রতিরোধ ঃ বেশ কিছু প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে কিন্তু সেগুলো উন্নত দেশগুলিতেও সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ডেঙ্গু থেকে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় হলো এডিস মশার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় বিশেষ করে খুব ভোরে বা সন্ধ্যার দিকে। তাই ডেঙ্গুর সিজনে গায়ে লম্বা হাতার শার্ট, ফুল প্যান্ট, মোজা ইত্যাদি পরিধান করে থাকাটা ভালো। এছাড়া মশা তাড়াবার ঔষধ (যাতে ডিইইটি আছে) যতটা সম্ভব ব্যবহার করা উচিত। বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমে থাকলে, যেমন গাছের টব, খোলা গামলা সেগুলো থেকে পানি ফেলে দিয়ে মশার বংশবৃদ্ধি খানিকটা রোধ করা যায়। এটা কি ভয়াবহ রোগ? সাধারণত ডেঙ্গুতে তেমন ভয়াবহতা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠে কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ সারাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। তবে ডেঙ্গু যদি জটিল আকার নেয়, বিশেষ করে যদি রক্তস্রাবী ডেঙ্গুতে পরিণত হয়, তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ আছে। এ রোগে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
-আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন