মহানবী সা. মদীনায় হিজরত করে গিয়ে শুনতে পেলেন, মদীনার লোকেরা বছরে দু’টি জাতীয় উৎসব করে। এগুলো আরবদের নয়। শক্তিশালী পারস্য সংস্কৃতি। অগ্নি উপাসক পারসিকরা বছরে ‘নওরোজ’ অর্থ নববর্ষ, আর ‘মিহিরজান’ অর্থ, আনন্দ উৎসব পালন করে। মদীনার ইহুদি ও মোশরিকরা এসবে শরীক হয়। মহানবী সা. মুসলিম জাতিকে বিজাতীয় উৎসবে শরীক হতে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। বললেন, শিরক মিশ্রিত উৎসব তাদের। এতে মুসলমানরা যাবে না। এতে বোঝা গেল ‘উৎসব সবার’ এ কথাটি ঠিক নয়। মহানবী সা. বললেন, ‘যারা বিজাতীয়দের উৎসবের যোগ দিয়ে তাদের সমাবেশকে বড় করে তারা তাদেরই শামিল।’-আল হাদীস। প্রিয় নবী সা. আরও বলেছেন, ‘যে যে জাতির মত কোনো কাজ করে, সে সে জাতিরই অন্তর্ভূক্ত।’-আল হাদীস। মুসলমানরা সতর্ক হয়ে গেলেন। ঈদের দিন প্রিয় নবী সা. তার ভাষণে বললেন, ‘সকল জাতিরই উৎসব আছে, আমাদের উৎসব এটি।’-আল হাদীস। সুতরাং ঈদুল ফিতরই মুসলিম জাতির বিশ্বজনীন প্রধান উৎসব। দুনিয়ার কোনো মুসলমান যদি ভাষাগত বা আঞ্চলিক জাতিগত কোনো উৎসবকে প্রধান উৎসব বানায় তাহলে তারা ভুল করবে। এ সিদ্ধান্ত হবে সরাসরি মহানবী সা. এর সিদ্ধান্ত বিরোধী। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের প্রধান উৎসব হতে হবে ‘ঈদ’।
‘ঈদ’ অর্থ বার বার ফিরে আসে এমন উৎসব। আনন্দ। মুসলমানদের ঈদ দু’টি। এক. একমাস রোজা রাখার পর প্রথম রোজা ছাড়ার দিন। আরবীতে ফিতর শব্দের অর্থ নাস্তা করা। ইংলিশে যাকে ব্রেকফাস্ট বলে। রোজা ছাড়ার দিনটিকে বলে ‘ঈদুল ফিতর’। শাব্দিক অর্থ ‘ব্রেকফাস্ট’। দুই. ‘ঈদুল আযহা’ অর্থাৎ যিলহজ্জের ১০ তারিখ, দিনের প্রথম প্রহরে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে পশু কোরবানী করা। দিনের প্রহরকে বলে ‘আযহা’ বা ‘যোহা। কোরবানীর পশুকেও বলে আযহা, উযহিয়া, আযাহি। আরবী শব্দগুলোতে অন্তর্গত মিল রয়েছে। কোরবানীর দিন আসলে তিনটি। ১০, ১১, ১২। ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানী করা চলে। এর পরদিন ১৩ তারিখও উৎসবের মধ্যে পড়ে। বর্ণিত এ সবগুলো দিনকে বলা হয়, ‘আইয়্যামে তাশরিক’। বেশি বেশি ‘আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ’ ইত্যদি পড়ার দিন। দুই ঈদের খুতবার প্রতিটি বাক্যের ফাঁকে ফাঁকে ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পড়া সুন্নাত। এ ক’দিন ফরজ নামাজের শেষে নামাজীরা অন্তত একবার ওপরের দোয়াটি পড়বেন। পুরুষেরা উচ্চকণ্ঠে, নারীরা ক্ষীণকণ্ঠে।
‘ফিতরা’ কারা দিবে? এমন প্রশ্ন মানুষ করে। জবাব হলো, ঈদুল ফিতরের দিন যার ঘরবাড়ী, আসবাব পত্র ও স্বর্ণ-রূপা, টাকা-পয়সা মিলিয়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তিনিই ফিতরা দিবেন। অর্থাৎ, স্বচ্ছল মুসলমানেরা খুব দরিদ্র মুসলমানদের ঈদ পালনে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে। একজন লোক তার পরিবারের সাতজন সদস্যের পক্ষ থেকে কমবেশি ৫০০ টাকা হতদরিদ্রদের ফিতরা দিয়ে দিবেন। প্রায় কাছাকাছি সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানীও দিতে হবে। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছ থেকে মাসআলা জেনে নিবেন। আপনার ওপর কোরবানী ওয়াজিব কি না। আপনার ফিতরা দিতে হবে কি না। ঈদুল ফিতরে দু’রাকাত নামাজ ওয়াজিব। এটি জামাতের সাথেই পড়তে হয়। শরীয়তসম্মত সুবিধাদি থাকলে নারী ও শিশুরাও অংশ নিতে পারে। ঈদুল ফিতরের দিনের কিছু সুন্নত: খুব ভোরে গোসল করা, সুগন্ধি লাগানো, পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পরা, নামাজে যাওয়ার আগে কিছু না কিছু মুখে দেওয়া। যেমন: খেজুর, মিষ্টি, সেমাই, পায়েস ইত্যাদি। ঈদগাহ যাওয়ার পথে বেশি বেশি তাকবীর পড়া, ঈদগাহে একপথে যাওয়া, সম্ভব হলে অন্য পথে ফিরে আসা। ঈদুল আযহার সময় সাহাবায়ে কেরাম আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুলতেন। রাস্তা-ঘাট, বাজারে কেবলই তাকবীর শোনা যেত। আমাদের দেশে এ রেওয়াজ নাই বললেই চলে। মুসলমানরা কোনো সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানেও না’রায়ে তাকবীর দেয় না। অথচ এ সম্পর্কে সরাসরি পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা আছে। আমলের জন্য একটি বরকতময় হাদীস দিয়ে কথা শেষ করতে চাই। প্রিয় নবী সা. বলেছেন, ‘দুই ঈদের পূর্ববর্তী রাত যে ব্যক্তি ইবাদত বন্দেগীতে জাগ্রত থাকবে, তার অন্তর কোনোদিন মরবে না। এমনকি যেদিন সব মানুষের অন্তর মরে যাবে, সেদিনও না (হাশরের দিন)।’ -আল হাদীস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন