শামসুল ইসলাম : সরকার ঘোষিত সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজের টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে বেসরকারী হজযাত্রীদের পুরো টাকা হাব সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টে স্বল্প সময়ের জন্য জমা নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে হাবের সকল সদস্যের মতামত নেয়ার জন্য আগামী ১৯ এপ্রিল রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে হাবের এজিএম আহ্বান করা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল হাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের ৮ম সভায় এজিএমের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ’র স্বাক্ষরিত এক নোটিশে আগামী ১৯ এপ্রিল এজিএমে হাবের সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টে হজের টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারে মতামত পেশ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাবের অধিকাংশ সদস্যই হাবের সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টে সর্বনি¤œ হজ প্যাকের পুরো টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ এ উদ্যোগকে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি’র ৭.১-এর ধারার পরিপন্থি বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হাব সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টে বেসরকারী ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজযাত্রীর সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজের ৩ লাখ ৪ হাজার ৯০৩ টাকা করে আদায় করা সম্ভব হলে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৪ টাকা জমা হবে। এতে কম টাকায় হাজী সংগ্রহে গ্রুপ লিডারদের দীর্ঘদিনের অসম প্রতিযোগিতা রোধ হবে। আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীগণ প্রতারণার কবল থেকে রেহাই পাবেন। হজে গিয়ে মক্কা-মদিনায় আর হজযাত্রীদের রাস্তায় রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। হাবের সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টে এবারই প্রথম হজযাত্রীদের পুরো হজের টাকা জমা দেয়ার পক্ষে হাবের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারী জেদ্দায় সউদী-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার আর বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজে যাবেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত হাজী ক্যাম্পস্থ আইটি ফার্মের মাধ্যমে সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর ডাটা এন্ট্রির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৮ জন আর প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৩০ জনে। বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছু’র ডাটা এন্ট্রি হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৭ জনে। কোটার অতিরিক্ত প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীগণ আগামী বছর (২০১৭) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হজে যেতে পারবেন। এদিকে গতকাল সোমবার ১৫০ হাজীর কোটা বাস্তবায়ন কমিটি’র আহ্বায়ক মুফতী হেদায়াতুল্লাহ হাদী’র উদ্যোগে ২৩টি ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সি সর্বনি¤œ কোটা ১৫০ হজযাত্রীর কোটা পূরণকারী হজ এজেন্সিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত অন্তর্ভুক্তি করণের দাবীতে ভারপ্রাপ্ত ধর্ম সচিব মোঃ আব্দুল জলিলের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এ আবেদনে সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করে যেসব হজ এজেন্সি ১৫০ জনের কম হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানানো হয়েছে।
চলতি বছর হজযাত্রীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সউদী সরকার নির্ধারিত সর্বনি¤œ কোটা ১৫০ জন হজযাত্রীর সমন্বয় এখনো অধিকাংশ হজ এজেন্সি করতে পারেনি। দেড়শ’ হজযাত্রীর নীচে প্রাক-নিবন্ধনকারী হজ এজেন্সিগুলো বিপাকে পড়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কোটার কম প্রাক-নিবন্ধনকারী এজেন্সিগুলোকে অন্য এজেন্সি’র সাথে সমন্বয় করে দেড়শ’ কোটা পূরণ করার নিদের্শ দিয়েছে। হাবের পক্ষ থেকে সমন্বয় করে দেড়শ’ হজযাত্রীর কোটা পূরণের সময় বৃদ্ধি করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন শুরুর আগের দিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) শহিদুল্লাহ তালুকদার এক সার্কুলারে এজেন্সিগুলোকে নিদের্শ দিয়েছিলেন দেড়শ’ হজযাত্রীর নীচে কেউ যাতে ইউজার আইডি ব্যবহার করে প্রাক-নিবন্ধন না করেন। হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহও অনুরুপ নিদের্শনা জারি করেছিলেন। কিন্তু অনেকেই এই নিদের্শনা তোয়াক্কা না করে দেড়শ’ হজযাত্রীর কমেই প্রাক-নিবন্ধন করে বসে রয়েছেন। এসব এজেন্সিগুলোকে এখন সমন্বয় করে দেড়শ’ কোটা পূরণ করতে বলা হচ্ছে। গতকাল বিকেলে ৬৬/এ, নয়া পল্টনস্থ ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, আটাবের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খাদেমুল হুজ্জাজ মোঃ তাজুল ইসলাম দারোগা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সি’র মালিকদের সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টায় ৩০ নয়াপল্টনস্থ একটি হোটেলে ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিগুলোর সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে এক জরুরি মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে। তাজুল ইসলাম দারোগা হাবের সেন্ট্রাল একাউন্টে বেসরকারি হজযাত্রীদের পুরো টাকা জমা করার উদ্যোক্তাদের ধিক্কার জানিয়ে বলেন, হাব কোনো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে পারি না। তিনি বলেন, জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির ৭.১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেক হজ এজেন্সি স্ব স্ব ব্যাংক একাউন্টে হজযাত্রীদের হজের পুরো টাকা জমা করবে। সরকারকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলার জন্য যারা হাবের সেন্ট্রাল একাউন্টে হজের টাকা জমা নিতে চাইছেন প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে আশ্রায় নেয়া হবে বলেও হাবের ঐ সাবেক নেতা তাজুল ইসলাম দারোগা উল্লেখ করেন।
হাদী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি হেদায়াতুল্লাহ হাদী হাব সেন্ট্রাল একাউন্টে হজযাত্রীদের পুরো টাকা জমা নেয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যারা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন তারা কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহের মূল হোতা। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজের চাইতে কম টাকায় জনপ্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় হজে নিতে যেসব প্রতারক গ্রুপ লিডার হাজিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিথ্যা প্রলোভন দিচ্ছে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করতেই সেন্ট্রাল একাউন্টে হজের টাকা জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শত শত হজযাত্রী প্রতারণার শিকার থেকে রেহাই পাবেন এবং বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন থাকবে। হাবের সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার রাতে ইনকিলাবকে বলেন, কতিপয় দালাল ফরিয়াড়া কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। তারা কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করে হজযাত্রীদের মক্কা-মদিনায় নিয়ে কষ্ট দেয়। এসব স্বার্থান্বেষী মহলই হাব সেন্ট্রাল একাউন্টে হজযাত্রীদের পুরো টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করছে। অধিকাংশ হজ এজেন্সির মালিকরাই হাবের সেন্ট্রাল একাউন্টে হজের পুরো টাকা জমা দিতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বাসায় গতরাতে হাব নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ধর্ম সচিব আব্দুল জলিলও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। হাবের পক্ষে হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার উপস্থিত ছিলেন। হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, হাবের সেন্ট্রাল একাউন্টে হজের পুরো টাকা জমা হলে আর কোনো হজযাত্রী প্রতারণার শিকার হবে না। হাজীরা মক্কা-মদিনায় গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে না। হাব মহাসচিব বলেন, হাজীদের স্বার্থেই হাবের সেন্ট্রাল একাউন্টে হজের টাকা জমা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাবে হজের টাকা জমা হলে হাব থেকে এজেন্সি’র মালিকরা কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই যথা সময়ে টাকা তুলে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, যারা হাবে টাকা জমা দেয়ার বিরোধিতা করছে তারা কম টাকায় হাজি নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ধর্মমন্ত্রী হাবের একাউন্টে হজের টাকা জমা দিলে হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে না বলেও উল্লেখ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন