বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে তাপদাহ বিস্তৃত হচ্ছে দেশজুড়ে

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বয়ে যাওয়া দাবদাহ অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই তা বাড়ছে, চলবে আরো দু-তিন দিন। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র দাবদাহ আর বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি মানুষ, প্রাণিকুল ও উদ্ভিদের জীবনকে করে তুলেছে বিপন্ন। গরমের প্রচ-তায় হিট স্ট্রোকে খুলনার দাকোপে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশূন্য। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।
গরমের প্রচ-তায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকুলও পড়ছে বিপাকে। এছাড়া মাঠঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। পুকুর ও মৎস্য খামারে মৎস্য চাষিরা আছেন উৎকণ্ঠায়।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, তাপপ্রবাহ আরো তীব্র ও বিস্তৃত হয়েছে। সর্বত্র অসহনীয় হয়ে উঠেছে চৈত্র শেষের দিনগুলোতে ভ্যাপসা গরম। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি গরমের মৌসুমে দেশে এ যাবৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬ ও সর্বনিম্ন ২৬.৮, ফরিদপুরে সর্বোচ্চ ৩৯.৬, চট্টগ্রামে ৩৩.২, সিলেটে ৩৪.৪, রাজশাহীতে ৩৯.৭, ঈশ্বরদিতে ৪০, রংপুরে ৩৮, খুলনায় ৩৭.৮, যশোরে ৪০.২, বরিশালে ৩৫.৮ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
পাবনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও রংপুর বিভাগ এবং রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত : একজনের মৃত্যু
খুলনা ব্যুরো : হিটস্ট্রোকে খুলনার দাকোপে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে আরো একজন আহত হয়েছে। জানা গেছে গত রবিবার দুপুরে পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা উপজেলার বরুইতলা চারবান্দা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাজুয়া ইউনিয়নের চৌকিদার রনজিত কুমার চক্রবর্ত্তী (৫৬)। তিনি পথিমধ্যে মোজাম নগর গ্রামের শিবসা নদী পারাপারের সময় খেয়াতে প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে তীব্র গরম, কাঠফাটা রোদ ও লোডশেডিংয়ের কারণে খুলনা, যশোর, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সূর্য ওঠার পরপরই চড়চড় করে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহনীয় দাবদাহে গরম বাড়তে থাকে। এ অঞ্চলে এখন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। তীব্র গরমে এ অঞ্চলের দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ, কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সাধারণত ঘরের বাইরেই কাজ করতে হয় তাদের, কিন্তু, প্রচন্ড তাপদাহে রোদের ভেতরে চলাফেরা করতেই কষ্ট হচ্ছে তাদের।
এরই মধ্যে বোরো ধান কাটার সময় চলে এসেছে। কিন্তু গরমের কারণে মাঠে থাকতে পারছেন না কৃষকরা। আবার সময়মতো ধান কাটতে না পারলে সামনে ঝড় বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন গৃহস্থরা।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপদাহ চলছে। খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে আরও ২/৩ দিন এই অবস্থা থাকবে। রোববার খুলনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ আর সর্বনিম্ন ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, এদিন কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলোতেও।
খুলনা শিশু হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল আমিন জাকির জানান, ৮ এপ্রিল ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৩ শিশু ও ৯ এপ্রিল ২৩ শিশু ভর্তি হয়। তীব্র গরমের কারণেই পানিশূন্যতা তৈরি হওয়ায় এরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়াও গতকাল সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪/৫ জন স্ট্রোকের রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
রিকশাভ্যান চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তীব্র গরমে সারাদিন খাটুনির পর রাতের ঘুমও ঠিকমত হচ্ছে না। তারপরেও জীবিকার তাগিতে এই রোদে রাস্তায় বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। তারা নিউমোনিয়া, পাতলা পায়খানা, আমাশয়, জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
বাগেরহাট আবহওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপ প্রবাহের পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিই এই অতিরিক্ত গরমের অন্যতম কারণ।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান, এই গরমে বেশিক্ষণ খোলা স্থানে থাকলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। ভ্যাপসা গরমে দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। এ কারণে বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কুষ্টিয়া অঞ্চলে
তাপদাহে পুড়ছে কুষ্টিয়া
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে বলে গত সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চৈত্রের শেষ সপ্তাহে গত চার দিন ধরে প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ছে কুষ্টিয়ার পথঘাট-প্রান্তর। ভ্যাপসা গরম বাতাসের হাওয়ায় মানুষের শরীর পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। চৈত্রের খরতাপে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিকুলেও নেমে এসেছে অস্থিরতা। গত রোববার কুষ্টিয়াতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শনিবার ছিলো ৩৭ দশমিত ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন শুক্রবার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ছিলো বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া কুমারখালীতে আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শুক্রবার থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে এ অঞ্চলে। এদিকে, গরমের শুরুতেই শহরে অন্যান্য সময়ের তুলনায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। চৈত্রের তাপদাহে কুষ্টিয়া অঞ্চলে সাধারণ মানুষ প্রয়োজীনয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বেলা ১১টার পর সূর্য মাথার উপরে উঠলে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। ভ্যাপসা গরম ও তাপদহে কদর বেড়েছে শরবত ও রসালো ফলের। তীব্র গরম আর বাইরের সূর্যতাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলের জীবনও।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার পাল জানান, তাপদহ জনিত কারনে প্রধানত হিট স্ট্রোকের আশংকা থাকে। এখন পর্যন্ত সেরকম রোগী ভার্তি হয়নি। বেশ কিছু শ^াস কষ্ট জনিত ও পেটের সম্যসা নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে।
পুড়ছে কাউখালী
কাউখালী উপজেলা সংবাদদাতা : গ্রীষ্মের প্রচ- তাপদাহে পুড়ছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধিতে প্রচ- খরা দেখা দেওয়ায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে মাঠঘাট। জমি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রকার ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম। চলমান ইরি-বোরো মৌসুমে চাষীরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা। অনেক পুকুর, মাছের ঘেরসহ জলাশয় শুকিয়ে গিয়ে মাছ চাষীরা পড়েছে চরম বিপাকে। দীর্ঘদিন যাবৎ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রৌদ্রের তাপ যেন জেঁকে বসেছে সাধারণ মানুষসহ গবাদি পশুপাখির উপর। খড়ার কারণে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগবালাই। হাসপাতাল গিয়ে দেখাগেছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশু ও বয়বৃদ্ধ মানুষের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়া, হাম, আমাশয়, পানিবাহিত রোগবালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন