বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

দীন ও ঈমানের মেহনত

মুফতী শামছুল হক সা‘দী আল-হাবীবী | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১:৫৫ এএম

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ৩ নাম্বার সূরা, সূরা আল-ইমরান, ৪ নাম্বার পারা, ১৪ না: পৃষ্ঠা, হাফেযী:৭৬ পৃষ্ঠা, ২০ নাম্বার রুকুর ১৩ নাম্বার লাইনের ১৯৩ না: আয়াতের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম রযিইয়াল্লহু আনহুম আজমাঈনের বিবৃতিকে এভাবে উল্লেখ করেছেন,

অর্থাৎ, হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে/ দায়ী‘কে ঈমানের প্রতি আহবান করতে তথা ঈমানের প্রতি দা‘ওয়াত দিতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। এ আয়াতে কারীমায় প্রিয় নাবী কারীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঈমানী মেহনাতের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ইমামুত তাবলীগ আল্লামা হাফেয ইল্ইয়াস দেহলভী সিদ্দীক্বী রহ. বলেছেন যে, লোকে বলে তাবলীগ জামা‘আত,তাবলীগ জামা‘আত। আমি যদি নাম রাখতাম তাহলে নাম রাখতাম “ঈমানী আন্দোলন”। ‘হামারে তাহরীক তাহরীকে ঈমান’ “আমাদের আন্দোলন ঈমানী আন্দোলন” তথা আমাদের মেহনাত ঈমানী মেহনাত।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহা গ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ২ নং সূরা, সূরা বাকারা ১ নং পারা, ২ নং পৃষ্ঠা, হাফেযী: ৪ পৃষ্ঠা, ২ নং রুকূর ১১ নং লাইনের ১৩ নং আয়াতে বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম রযিইয়াল্লহু আনহুম আজমাঈন যেভাবে ঈমান এনেছেন তোমরাও সেভাবে ঈমান আন। এ আয়াতে কারীমা দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম রযিইয়াল্লহু আনহুম আজমাঈন ঈমানের মাপকাঠি প্রমাণিত হলেন। ঐ পরিমাণ ঈমান আনা ফরজ যেই পরিমাণ ঈমান ছিল সাহাবায়ে কেরাম রযিইয়াল্লহু আনহুম আজমাঈনের । নিজেদের ঈমান বৃদ্ধি করার জন্য আমাদেরকে বেশি বেশি ঈমানের প্রতি দা‘ওয়াত দিতে হবে তথা ঈমানী মেহনাত করতে হবে। বল যেমনিভাবে দেয়ালে মারলে নিজের দিকে ফিরে আসে ঠিক তেমনিভাবে অন্যকে ঈমানের প্রতি দা‘ওয়াত দিলে নিজের ঈমান বাড়ে। মুসনাদে আহমাদ, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব নামক হাদীস গ্রন্থের ২য় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠায় এসেছে, প্রিয় নাবী কারীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিজেদের ঈমান তাজা করতে থাক। কেউ আরজ করল, ইয়া রসূলাল্ল-হ্। আমরা নিজেদের ঈমানকে কিভাবে তাজা করব? তিনি বললেন, বেশি বেশি লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলতে থাক।
অর্থাৎ, বেশি বেশি ঈমানী কালেমা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লহ্’র দা‘ওয়াত দিতে থাক। মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ৪ নং সূরা, সূরা নিসা, ৫ নং পারা, ১৯ নং পৃষ্ঠা, হাফেযী:১০১ পৃষ্ঠা, ২০না:’র রুকূর ৫ না:’র লাইনের ১৩৬ না:’র আয়াতে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ, মহান আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর পরিপূর্ণ ঈমান আন। এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঈমানদারদেরকে ঈমানের দা‘ওয়াত
দিয়েছেন তথা নামের মুসলমানদের কামের মুসলমান হওয়ার দা‘ওয়াত দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈমানদারদেরকে ঈমানের দা‘ওয়াত দেওয়া যাবে তথা নামের মুসলমানদেরকে কামের মুসলমান হওয়ার দা‘ওয়াত দেওয়া যাবে। তবে কাফেরদেরকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে হবে, যেমনটি বোঝা যায় মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হাদীসের পাঠ/ ইবারত দ্বারা। অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ কর, শান্তি পাবে তথা মুসলমান হও শান্তি পাবে। তাছাড়া এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কাফেরদেরকেও ঈমানের দা‘ওয়াত দেওয়া যাবে। কাজ করা দরকার, মেহনাত করা দরকার। অবান্তর/ আলতু ফালতু প্রশ্ন না করে আমরা যে যেভাবে পারি ঈমানের দা‘ওয়াত হোক আর ইসলামের দা‘ওয়াত হোক অথবা উভয়টিই হোক শুরু করা উচিৎ। প্রাণান্তকর চেষ্টা, প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। এ চেষ্টা শুধু নিজের জন্যই কল্যাণকর নয় বরং গোটা মুসলিম উম্মাহ্র অস্তিত্ব সংরক্ষণ, বিস্তৃতি ও দুনিয়া-আখিরাতের জন্য কল্যাণকর, বড়ই উপকারী। জ্ঞানী যাঁরা বোঝে তাঁরা শুধু ইশারায়।
দা‘ওয়াত ও তাবলীগ আল্লাহ্র রাস্তা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ১২না:’র সূরা, সূরা ইউসূফ, ১৩না:’পারা, ৭না:’র পৃষ্ঠা, হাফেযী:২৪৯ পৃষ্ঠা, ১২না:’র রুকূর ৬ নং লাইনের ১০৮ নং আয়াতে বলেছেন, অর্থাৎ, বলুন হে প্রিয় রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে, ইহা আমার রাস্তা আমি পূর্ণ ইয়াক্বীনের সাথে/ বুঝে শুনে মহান আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দিই এবং যারা আমার অনুসারী/ উম্মাত তারাও মহান আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়। আর একথাতো দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাস্তা মানে আল্লাহর রাস্তা। তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন ৭৬১ পৃষ্ঠার পাঠ দ্বারা বোঝা যায় যে, দা‘ওয়াতের কাজ ফরজ। অবশ্য সম্মিলিতভাবে ফরজে কিফায়াহ আর এককভাবে ফরজে আইন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহা গ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ৫না:’র সূরা, সূরা মা-ইদাহ্, ৬না:’র পারা, ১৮না:’র পৃষ্ঠা, হাফেযী:১২০ পৃষ্ঠা, ১০ নং রুকূর ১০ নং লাইনের ৬৭ নং আয়াতের মধ্যে বলেছেন,
অর্থাৎ, হে প্রিয় রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা নাঝিল হয়েছে তার তাবলীগ করুন।আল-জামিউস্সগীর ১ম খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠায় আছে, প্রিয় নাবী কারীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি তাবলীগকারী আর আল্লাহ তা‘আলাই হিদায়াতদানকারী। তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড, ৯৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড, ৩৪ পৃষ্ঠায় এসেছে, যে ব্যক্তি দ্বীনী/ ধর্মীয় ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে। আর এ বিষয়টি তো দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, অনেক আনপড় সাথী তাবলীগ জামা‘আতে দ্বীনী/ ধর্মীয় ইলম অন্বেষণ করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাকে। তাই অত্র হাদীসের ব্যাপকতা দ্বারা তাবলীগ যে আল্লাহর রাস্তা তা প্রমাণিত হল। তাছাড়া ইতঃপূর্বে আমরা সূরা ইউসুফ ১০৮ নং আয়াতের দ্বারা প্রকারান্তরে দা‘ওয়াতের কাজও যে আল্লাহর রাস্তা তা বুঝতে পেরেছি।
বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত প্রচলিত তাবলীগ নবুওয়াতী তাবলীগের অনুরূপ:
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ২৬ নাম্বার সূরা, সূরা শু‘আরা, ১৯ নাম্বার পারা, ১০ নং পৃষ্ঠা, হাফেযী:৩৭২ পৃষ্ঠা, ৬ নাম্বার রুকুর ৯,১০,১১ নাম্বার লাইনের ১০৭,১০৮,১০৯,১১০ নং আয়াত এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমের ৩৬ নাম্বার সূরা, সূরা ইয়া-সীন, ২২ নাম্বার পারা, ২০ নং পৃষ্ঠা, হাফেযী:৪৪২ পৃষ্ঠা, ২ নাম্বার রুকূর ১৫ নাম্বার লাইনের ২১ নং আয়াত অনুযায়ী নবুওয়াতী দা‘ওয়াত ও তাবলীগের প্রধান বৈশিষ্ট্য দু’টি: ১.মহান আল্লাহ ও আখিরাতমুখী দা‘ওয়াত দেওয়া। ২. কোনো প্রকার বিনিময় বা বেতন/হাদিয়া/চাঁদা/ভাড়া/বখশিশ ইত্যাদি ছাড়াই তথা বিনা পারিশ্রমিকে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা। আলহামদুলিল্লাহ্, এ বৈশিষ্ট্য দু’টি সমগ্র বিশ্বে প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আতের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। তাই প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত নবুওয়াতী তাবলীগেরই অনুরূপ।
৭ লক্ষ, ৪৯ কোটি, অগণিত সাওয়াবের দলিল ইবনে মাজাহ্ শরীফ ১৯৮ পৃষ্ঠা, ২০৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৩৩৫ পৃষ্ঠা, ৫ নং হাদীস অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিজ প্রয়োজনে এক টাকা খরচ করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাকে ৭ লক্ষ টাকা সদক্বাহ্ করার সাওয়াব দান করেন। আর আবূ দাঊদ শরীফ ৩৩৮ পৃষ্ঠা ও ২৪৯৮ নং হাদীস অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় একটি নেক আমল করলে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। সাত শ’ কে সাত লক্ষ দিয়ে গুণ করলে ঊনপঞ্চাশ কোটি হয়
অর্থাৎ আল্লাহ্র রাস্তায় একটি নেক আমল করলে ঊনপঞ্চাশ কোটি নেক আমলের সওয়াব হয়। হাকীমুল উম্মাত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত আল্লামা হাফেয আশরাফ আলী থানভী রহ. স্বীয় অমর তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে বয়ানুল কুরআন” উর্দূ ছোট সাইজের মধ্যে মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমের ৬৮ নং সূরা, সূরা ক্বলাম, ২৯ নং পারা, ৩ নং পৃষ্ঠা, হাফেযী: ৫৬৫ পৃষ্ঠা, ১ নং রুকূর, ১৪ নং লাইনের ৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আপনাকে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের বিনিময়ে বিগয়রে হিসাব/অগণিত সওয়াব দেওয়া হবে। অতএব, এই মহামূল্যবান ঈমানী মেহনাত, দা‘ওয়াত ও তাবলীগের মেহনাতে যথাসম্ভব শরীক হওয়ার জন্য আমি আমাকেসহ সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে বিনয়াবনত চিত্তে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে “ঈমানী মেহনাতে” শরীক হওয়ার তাওফীক দান করুন, কবূল করুন, আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
akter ২২ জুন, ২০১৮, ৯:১৭ পিএম says : 0
tabliq shomporke lekhati 100% thik / right dhonnobad
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন