শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তি নিয়ে ঢাকায় ফেরা

ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কি.মি. যানজট : দৌলতদিয়ায় ৩ কি.মি. দীর্ঘ যানবাহনের সারি : কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ঢাকামুখি যাত্রীর ঢল : তিল ধারণের ঠাঁই নেই বাস ট্রেন লঞ্চে

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৮, ১২:২১ এএম

সড়কপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়। গতকাল বিকালে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে তোলা -ইনকিলাব


ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়ছে। ঈদের পর ষষ্ঠ দিন রাজধানীমুখি বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অস্বাভাবিক ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঈদের আগে থেকেই সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে চলছে ট্রেন। ফিরতি পথে বাস সংকটে পড়েছেন যাত্রীরা। আর লঞ্চের টিকিটও হয়েছে সোনার হরিণ। সড়কপথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়কপথের যাত্রীরা আটকা পড়েছেন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে। সেখানেও গাড়ির সারি ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। সব মিলে ঈদ উদযাপনের আনন্দ শেষে ভোগান্তি নিয়েই ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। আজ শনিবার এই ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারনা করছেন ভুক্তভোগিরা।
এবারের ঈদে যাত্রীদের প্রথম পছন্দত ছিল ট্রেন। ১৫ দিন আগে থেকে রাতভর প্লাটফরমে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই টিকিট পাননি। যারা পেয়েছেন তারা স্বস্তিমতো ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন নি ভিড়ের চাপে। বিশেষ করে ১২ জুনের পরে যারা রওনা করেছেন তারা খুবই কষ্ট করেছেন। ঈদ শেষে ফিরতে গিয়ে ট্রেন যাত্রীদের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হয়নি। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের টিকিট প্রকাশ্যে কালো বাজারে বিক্রি হয়েছে। এমপিদের ডিও লেটার দিয়ে টিকিট নিয়ে সেই টিকিট কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে দিনাজপুর স্টেশনে। সেখানকার যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকায় বসে টিকিট এজেন্ট সিএনএসের এজেন্টরা কারসাজি করে টিকিট আটকে রাখছে। সেই টিকিট চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এজন যাত্রী জানান, তিনি এসি চেয়ারের টিকিট তিনগুণ বেশি দামে ২৭ টাকায় কিনেছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) মহাব্যবহস্থাপক মুজিবুর রহমানে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এদিকে, ঈদের আগে থেকেই সময় মেনে চলেনি বেশ কিছু ট্রেন। ঈদের একদিন পর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা-থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস চলাচল করছে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা বিলম্বে। এতে করে গতকাল শুক্রবারের রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকায় ফিরবে আজ শনিবার। ঢাকা-লালমনিরহাট রেলপথে চলাচলকারি লালমনি এক্সপ্রেস চলছে সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে। ঢাকা-চিলাহাটী রেলপথের নীলসাগর এক্সপ্রেস চলাচল করছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা বিলম্বে। ঢাকা-দিনাজপুর রেলপথের দ্রæতযান ও একতা এক্সপ্রেসও এক ঘণ্টার বেশি সময় বিলম্বে যাতায়াত করছে। অন্যদিকে, ঢাকা-রাজশাহী রেলপথের পদ্মা এক্সপ্রেস চলাচল করছে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে। এতো দেরি করে চলাচল করার পরেও ঢাকামুখি সবগুলো ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রচÐ গরমে যাত্রীদের নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবস্থা নেই বলে জানান, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসা এক যাত্রী। তিনি বলেন, ভিড়ের কারনে ট্রেন ধীর গতিতে চলছে। এজন্যও সিডিউলে ব্যাঘাত ঘটছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কি.মি. যানজট
এদিকে, সড়কপথে ঢাকামুখি যাত্রীদেরকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যারজটে পড়ে উত্তরের ১৮টি জেলার হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের কুরণী পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঢাকামুখি যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগে মহাসড়কের চার লেন খুলে দেয়া হলেও বর্তমানে কয়েকটি ব্রিজের উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যানচলাচলে বিঘœ ঘটছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গাড়ির চাপ আরো বেড়ে গেলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১২টার দিকে মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ঢাকাগামী যান চলাচল আটকা পড়লে যানজট স্থায়ী হয়। এক পর্যায়ে যানজট মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর উপজেলার কুরণী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। এছাড়া মির্জাপুরের দেওহাটা থেকে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরাতন সড়কেও প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল।
দৌলতদিয়ায় ৩ কি.মি. দীর্ঘ যানবাহনের সারি
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যান ও যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট, ফেরি ঘাট ও বাস টার্মিনাল এলাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষের প্রচÐ চাপ দেখা যায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাককে নদী পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বাইপাস সড়কে শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, লোকাল যানবাহনের যাত্রীদের উপচে পড়া চাপ ছিল লঞ্চ ঘাটে। ঘাটে লঞ্চ কম থাকায় যাত্রীদেরকে ফেরিতে পারাপার হওয়ার জন্য অনুরোধ করছে লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষ। যানবাহনের চালকরা জানান, ভাঙাচোরা রাতা আর ঘাটের যানজটে তারা অতিষ্ট। গত কয়েক দিন ঘাট পরিস্থিতি ভালো পেলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। এতে করে যানবাহনের যাত্রী ও তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ঢাকামুখি যাত্রীর ঢল
অন্যদিকে, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই কাঁঠালবাড়ী ঘাটে রাজধানীমুখী যাত্রীর ঢল দেকা গেছে বলে আমাদের স্থানীয় সংবাদদাতা জানান। বেলা ১২টার পর থেকে যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে কাঁঠালবাড়ী ঘাট কর্তৃপক্ষকে। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিগুলো শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়েই যাত্রী শূন্য ফেরত আসছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। ঢাকামুখি একজন যাত্রী জানান, কাঁঠালবাড়ী বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে নৌযানে উঠছেন। লঞ্চ ও স্পিডবোট কাউন্টারের সামনে যাত্রীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লঞ্চ ও ফেরির ছাদ থেকে শুরু করে নৌযানগুলোর প্রতিটি স্থানে যাত্রী তোলা হচ্ছে। ঘাটের প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। ওই যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপকে পুঁজি করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। নৌযানগুলো ঢাকাগামী যাত্রীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন