শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সরকার। গত ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তবে ওই চিঠিতে তিনি কার্গো বিমান চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। স্মরণ করা যেতে পারে, গত ৮ মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ না নিলে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে। ওই দিনই ঢাকা-লন্ডন কার্গো সার্ভিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটেন। এর আগে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের কার্গো বিমান প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সঙ্গতকারণেই ব্রিটেনের পদক্ষেপ নেয়ার পর একটি বিচলিত অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে চিঠি লেখেন এবং কার্গো বিমান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আগ্রহও ব্যক্ত করেন। এরপর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে এর নিরাপত্তা তদারকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। এতে সন্তুষ্ট হয়েই ডেভিড ক্যামেরন আলোচ্য চিঠিটি পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বিমানের ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আর আশঙ্কা নেই। তবে কার্গো বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা কবে নাগাদ উঠে যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, ভেলিডেশন সার্টিফিকেট পাওয়া সাপেক্ষে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিবন্ধিত একটি ভেলিডেটর প্রতিষ্ঠান ২৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের পর বোঝা যাবে কবে কার্গো বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত ও ভঙ্গুর, এই অভিযোগ বা বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিমানবন্দরের মালামালের নিরাপত্তা, যাত্রীর নিরাপত্তা, সেবাসুবিধা ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট ও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন যখন অবনত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলে কার্গো বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখন কর্তৃপক্ষের মধ্যে নড়াচড়া দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসেনি। আরো আগেই যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হতো, তাহলে বর্তমান অবস্থার উদ্ভব হতো না। নিরাপত্তার কারণে কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার ফলে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভাবমর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে নমিত হয়েছে। দেশের মর্যাদাও ক্ষুণœ হয়েছে। একটি দেশ তার প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, এর চেয়ে দুর্নামের কথা আর কী হতে পারে? কার্গো বিমান চলাচলের ওপর দু’টি দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে যে বার্তা বিশ্বময় ছড়িয়েছে তা অত্যন্ত নেতিবাচক। এমন আশঙ্কা ছিল, অন্যান্য দেশও অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে পারে। যেকোনো কারণেই হোক, আর কোনো দেশ সে পথে হাঁটেনি। এ কথা কারো অজানা নেই, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনে বাংলাদেশী পণ্যের ভালো বাজার রয়েছে। এই পণ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কার্গো বিমানে পরিবাহিত হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে এই পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, কিংবা হয়তো সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পাঠাতে হয়েছে। এতে রফতানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাজার হারানোর আশঙ্কা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। আশার কথা, ইতোমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান অগ্রগতি ঘটেছে, ডেভিড ক্যামেরনের চিঠিতেও যার প্রমাণ রয়েছে। আগামীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সংহত হবে, এটা স্বভাবতই আমরা প্রত্যাশা করি। আশা করি, অবিলম্বে ব্রিটিশ সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেবে।
যেকোনো দেশের প্রধান বিমানবন্দর সে দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কোনো দেশের প্রধান বিমানবন্দরে নামলেই সে দেশের চালচিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে কোনো বিদেশী নাগরিকের এ দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা জন্মায় না। তারা প্রথমেই নানারকম অব্যবস্থার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা, অপরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক মানের সেবা ও নিরাপত্তার অভাবে তাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। বাংলাদেশী নাগরিকদের এই বিমানবন্দর হয়ে যাওয়া-আসাকালে নানা প্রকার হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। আর যাই হোক, বিমানের শিডিউল যখন বিপর্যস্ত হয়, কিংবা কোনো কারণে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সহায়তা ও সেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে, তখন যাত্রীদের চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়তে হয়। বিমানবন্দরে যাত্রী সুবিধার অভাব ও হয়রানিকর অবস্থা, কার্গো ভিলেজে অব্যবস্থা, মালামাল লোপাট ইত্যাদির ঘটনা কোনো কারণেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। নিরাপত্তার অভাবসহ এ ধরনের দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা, হয়রানি ও ক্ষতির আশু অবসানের বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে থাকবে না। নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য ও সেবার দিক থেকেও যাতে তা আর পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন