দীন ইসলামের মূল হচ্ছে সকল নবী এবং রাসূলগণের একক ও সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় জীবন যাত্রার সামষ্টিক রূপ। এই মূল দু’টি কথার ওপর নির্ভরশীল। এর একটি হচ্ছে পরিপূর্ণ তাওহীদের বিশ্বাস এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সামগ্রিকভাবে রিসালাতের বিকাশ।
মোট কথা, আল্লাহ তায়ালাকে তাওহীদের সকল গুণাবলীর মাঝে পরিপূর্ণরূপে ও শরীকহীন রূপে মেনে নেয়া এবং তার পয়গম্বর ও রাসূলগণেকে সমভাবে সত্যাবাদী এবং সত্যাশ্রয়ী স্বীকার করা। কোরআনুল কারীমে এই বিশেষত্বটি এভাবে তুলে দরা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে: ‘তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য দীন চায়? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনীচ্ছায় তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে। আর তার দিকেই তারা প্রত্যানীত হবে। বলুন, আমরা আল্লাহ হতে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তার বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রদান করা হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না, এবং তারই নিকট আত্মসমর্পণকারী। আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনোও কবুল করা হবে না। এবং সে পরেলোকে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। -সূরা আল ইমরানে: আয়াত ৮৩-৮৫। এই আয়াত সমূহের দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহর ওপর এবং সকল রাসূলগণের ওপর ঈমান আনয়ন করাই হলো আল্লাহর দীন এবং এরই নাম হচ্ছে ইসলাম। যে ব্যক্তি নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই দীনকে কবুল করবে না, সে আখেরাতে অবশই ক্ষতিগ্রস্থশীল হবে।
কোরআনুল কারীমে পরিষ্কারভাবে ইহুদী ও খৃষ্টানদের পথভ্রষ্ট হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, তারা ঐশী গ্রন্থসমূহের ভ্রান্ত বিশ্লেষণ করত। আর আয়াতে মুতাশাবিহাতগুলোর অর্থ ও মর্ম উদঘাটনে সীমা লংঘন করত। তাই তারা দীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নানা রকম মতবাদরে আবর্তে জড়িয়ে পড়ত। এতদ সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘অবশ্যই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের নিকট তাদের নিকট জ্ঞান আসবার পর সত্যানৈক্য ঘটিয়ে ছিল। আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। এরপরও যদি তারা আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তবে বলুন, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারীগণও।’ -সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৯-২০।
এরপর রাসূলুল্লাহ সা. কে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, তিনি যেন ইহুদী এবং খৃষ্টানদেরকে এ প্রশ্ন করেন যে, তারা কি ইসলাম কবুল করবে না কি করবে না? এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইহুদী ও খৃষ্টান) তাদেরকে ও আরবের নিরক্ষর কাফেরদেরকে বুলুন, তোমরাও কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে নিশ্চয় তারা পথ পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনার কর্তব্য শুধু প্রচার করা। আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। -সূরা আল ইমরান: আয়াত ২০। এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, ইহুদী এবং খ্রষ্টানদেরকে ইসলাম কবুল করার ফলে পরিপূর্ণ হেদায়েত লাভ করার খোশ-খবরী প্রদান করা হয়েছে। এর সত্যিকার অর্থ এই যে, পরিপূর্ণ হেদায়েত হলো দীন ইসলাম এবং এটাই হলো প্রকৃত ও সত্যিকার দীন যা ইহুদী, নাসারা এবং পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের উম্মতগণ হারিয়ে ফেলে ছিল এবং যাকে রাসুলুল্লাহ সা. এর মাধ্যমে পূণরায় পরিপূর্ণরূপে পৃথিবীতে পেশ করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের উম্মতগণ যে হেদায়েত লাভ করেছিল তা পরিপূর্ণ ছিল না। বস্তুত: তা ছিল সংক্ষিপ্ত ও অসম্পূর্ণ। আর দীন ইসলাম যে হেদায়েত নিয়ে এসেছে তা হলো কামেল ও পরপূর্ণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন