বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাখাইন নিয়ে মিয়ানমার কঠিন পরিস্থিতিতে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আরেকটি রাখাইন কমিশনে বিদেশী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে গত ১১ জুন মিয়ানমার পার্লামেন্টে বিতর্ক ও ভোটভুটি হয়। সেনাবাহিনী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি (এনএলডি) ৪৪০ আসনের পার্লামেন্টে ২৫১ ভোটে প্রস্তাবটি পাস করিয়ে নেয়। বিপক্ষে পড়ে ১৩৮টি ভোট। গত বছর আগস্টে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত নিরাপত্তা চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার জের ধরে সেখানে সেনাবাহিনী যে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালায় তাতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করে দেশটির প্রেসিডেন্টের অফিস। এ নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ককালে তাতমাদাও তথা সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধিন ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ও আরাকান ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) এমপি’রা কমিশনে বিদেশী অন্তর্ভুক্তির নিন্দা করে। বিতর্ক চলাকালে তাতমাদাও ও বিরোধী দলের এমপি’রা যেসব মন্তব্য করে তাতে বুঝা যায় কমিশনে বিদেশী অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সু কি ও এনএলডি সরকারের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইউএসডিপি’র এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল উ থাং আয়ে বলেন, স্বাধীন কমিশনে বিদেশী অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত সংবিধানের লঙ্ঘন। সংবিধান রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাতমাদাও। এই ইস্যুতে তাতমাদাওয়ের সঙ্গে সরকারের বিরোধ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। সেনাবাহিনীর এমপি’রা বলছেন যে বিদেশী অন্তর্ভুক্ত করে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা ও মিয়ানমারের জনগণকে অসম্মান করা হয়েছে। এএনপি’র এমপি উ ও লা সাও বলেন, সরকার ও তাতমাদাও এরই মধ্যে রাখাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করছে। আরেকটি তদন্ত দল করা হলে তা শুধু মিয়ানমারের নাগরিকদের নিয়ে করা উচিত। পার্লামেন্টে জিতে গিয়ে এনএলডি সরকার যে বিতর্কে উৎরে গেলো তা কিন্তু নয়। ওই বিতর্কের মূলে রয়েছে, মিয়ানমার সরকারের প্রতি রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের অভিযোগ স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত ও সেখানে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি প্রদানের জন্য ৯ মে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আহŸান। নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বাধিন রাখাইন পরামর্শক কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারে প্রতি আহŸান জানায়। এ ব্যাপারে কী অগ্রগতি হয়েছে তা এক মাসের মধ্যে জানাতেও বলে নিরাপত্তা পরিষদ। শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে ৬ জুন মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও সই করে। তখন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো যে, ‘এই ত্রিপক্ষীয় এমওইউ বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে একটি কাঠামো তৈরির পথে প্রথম পদক্ষেপ।’ তবে উত্তর রাখাইনে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর প্রত্যাবর্তন চায় না সেনাবাহিনী, ইউএসডিপি ও এএনপি। নিরাপত্তা পরিষদের চাপের কারণেই সরকার এমওইউ সই করতে বাধ্য হয়। রাখাইনে সামরিক অভিযানকালে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) হাজির করার চেষ্টাও চলছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আরসার প্রথম হামলার পর থেকে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তের জন্য অনেকগুলো কমিশন গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি তদন্তে তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়। তবে সেনাবাহিনীর এই তদন্ত অনেক মানবাধিকার সংস্থাই বিশ্বাস করেনি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে রাখাইনের ইনদিনে ১০ মুসলমানকে গণহত্যার খবর প্রকাশের পর সরকার বা সেনাবাহিনীর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার যোগ্যতার উপর আস্থাও নষ্ট হয়েছে। তাই রাখাইন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ হালকা করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বিরোধিতার পরও ঝুকি নিয়ে তদন্ত কমিশনে বিদেশী অন্তর্ভুক্ত করতে এনএলডি রাজি হয় বলে মনে হচ্ছে। সূত্র : এসএএম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
নাসির ২৬ জুন, ২০১৮, ৩:২৮ এএম says : 0
এর জন্য মিয়ানমারকে চরম মূল্য দিতে হবে।
Total Reply(0)
Rumin Reza ২৬ জুন, ২০১৮, ৩:৩৫ পিএম says : 0
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘকে উদ্যোগী হয়ে মিয়ারমারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন