বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পশ্চিমের প্রতি সতর্কবার্তা : এরদোগানের বিজয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ৩:১৮ এএম, ২৭ জুন, ২০১৮

রোববার অনুষ্ঠিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে পার্লামেন্ট, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছে। এরদোগান ৫২.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির প্রথম বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন নির্বাহী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনের ফলাফল মূলত প্রেসিডেন্টের ক্রমবর্ধমানভাবে নেয়া কঠোর ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছে যা পশ্চিমা শক্তির করিডোরে সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এরদোগান ইতোমধ্যে আধুনিক তুরস্কের দীর্ঘতম শাসকের খেতাব অর্জন করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন নির্বাহী প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় পরবর্তীতে যে গতিশীলতার উদ্ভ‚ত হবে, তা বাস্তবে কেমন হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। খবর সিএনএন ও আল জাজিরা।
রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে সোমালিয়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহি মোহাম্মদের মতো নেতারা সাবেক ফুটবলার ও ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়রের এই জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এরদোগান তার বিজয় বক্তৃতায় বলেছেন, ‘২৪ জুনের নির্বাচন তুর্কি জাতি, আমাদের অঞ্চল এবং বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের বিজয়।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল আসলে কি সেটাই বলছে?
ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা
নির্বাচনে এই জয়লাভের ফলে এরদোগান আরো পাঁচ বছরের জন্য বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হলেন। নতুন ব্যবস্থায়, প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে, পার্লামেন্টের ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং প্রেসিডেন্ট ব্যাপকভাবে নির্বাহী কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন বিচারক নিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়াও, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাহী আদেশ জারি করা এবং জরুরি অবস্থা আরোপ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাকে। এছাড়াও, এরদোগান আরেকটি মেয়াদে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন, যার মানে হচ্ছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তার প্রেসিডেন্ট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগান একটি আস্থাশীল ও স্থায়ী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার একটি শক্তিশালী নির্বাহী প্রেসিডেন্সির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট অভনি ওজুরেল মনে করেন, নতুন পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদে তুরস্ককে আরো কার্যকর এবং স্থিতিশীল পদ্ধতিতে শাস্তি হওয়ার সুযোগ দেবে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ‘এরদোগান ও তার টিমকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের সময় এই পদ্ধতির ভুলত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে এবং এটা অর্জনের জন্য নতুন নতুন ডিক্রি ও আইনের প্রয়োজন হবে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমের সঙ্গে আঙ্কারার ক্ষয়ে আসা বন্ধনের বিষয়টিও আরেকটি গুরুত্বপ‚র্ণ বিষয় হয়ে থাকবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি বিরোধীদের ওপর জেল-জুলুম চালিয়েছেন। হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন, মিডিয়া ও বিচারকদের কণ্ঠরুদ্ধ করেছেন। এ বিষয়ে তুরস্কের পশ্চিমা মিত্র এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলি শুরু থেকেই নিন্দা জানিয়ে আসছে। তবে, আঙ্কারা বলছে যে তারা আইন মেনেই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থকদের আটক করাই তাদের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য। এখন নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিপুল ক্ষমুার বিষয় পশ্চিমা শক্তির করিডোরে সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।
ওজুরেল মনে করেন, জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার পর পশ্চিমের সঙ্গে এরদোগানের কঠোর সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার পর তুর্কি বিচার ব্যবস্থার কর্মকাÐে পরিবর্তন আনবে। বিচারবিভাগীয় চ্যানেলগুলি উন্মুক্ত হবে এবং এটা ভিতর ও বাইরে বিদ্যমান উত্তেজনা দ‚র করতে শুরু করবে।’
বিরোধীদের জন্য দুঃসংবাদ
নির্বাচনে বিরোধী দল তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামলেও চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের ফলাফলে তারা হতাশ হয়েছেন। যাইহোক, এরদোগানের ‘নীরব বিরোধিতা’ সত্তে¡ও, প্রায় অর্ধেক তুর্কি তার বিপক্ষে ভোট প্রদান করেছেন। এর মানে হলো, পার্লামেন্টে এসব তুর্কিদের পক্ষে বলার জন্য প্রতিনিধি রয়ে গেছে এবং বিরোধীরা আশা করেছেন নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে অর্জিত গতিশীলতা সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, একে পার্টি এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পার্টির (এমএইচপি) ‘পিপলস অ্যালায়েন্স’ পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে এবং উভয় দলই পার্লামেন্টে এক মঞ্চে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও তাদের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নতুন আইন পাস করার জন্য যথেষ্ট, তবে নতুন সিস্টেমের মধ্যে গৃহীত সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য এই দুই মিত্রের প্রয়োজনীয় ৩৬০টি ভোটের ঘাটতি রয়েছে।
কুর্দিদের জন্য মিশ্র ফলাফল
বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বিরুদ্ধে প্রায় চার দশক ধরে তুর্কি সেনাবাহিনী যুদ্ধ করছে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে ২০১৫ সাল থেকে এরদোগান তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আরো জোরদার করেছেন। গোষ্ঠটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অন্যরা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে থাকে।
রবিবারের নির্বাচনে কুর্দিদের চরম বিরোধী এরদোগানের বিজয় সত্তে¡ও, অনেক কুর্দি গ্রামে উদযাপনও হয়েছে। কারণ কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি) সংসদে প্রবেশের জন্য ১০ শতাংশ প্রয়োজনীয় ভোট পেতে সক্ষম হয়েছেন। এই অর্জন পার্লামেন্ট থেকে কুর্দিদের উপস্থিতি বাদ দেওয়ার এরদোগানের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করেছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে পর থেকে ১২০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এরদোগান তাদের মুক্তি দেবেন কিনা? নির্বাচনী প্রচারণার সময় তুর্কি মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ছিল এবং নির্বাচনের রাতে ফল ঘোষণায় বিরোধী রাজনীতিবিদরা নিজেদেরকে অসহায় অবস্থায় খুঁজে পান।
অর্থনীতি এখনো ঝুঁকিপ‚র্ণ
দেশটির অর্থনীতি কিছুটা নাজুক পর্যায়ে রয়ে গেছে এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার মান ২০ শতাংশ কমে যায়। মুদ্রার অবম‚ল্যায়নের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বর্তমান তহবিলের ঘাটতি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এরদোগানের নতুন প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপ‚র্ণ ইস্যু। তবে সোমবার তুর্কি লিরা ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির বেঞ্চমার্ক স্টক ইনডেক্সের কিছুটা উন্নত হয়েছে। যাইহোক, এই উন্নতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হতে পারে।
২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর তুরস্কের মুদ্রার মান নাটকীয়ভাবে পুন ঘটতে থাকে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার প্রায় ১৮ শতাংশ বাদ দিতে হয়েছে।
সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে এরদোগান বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
সিরিয়া আক্রমণ চলবে
তুরস্কের সামরিক বাহিনী সীমান্ত এলাকা মিলিশিয়া মুক্ত রাখার জন্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিরিয়াতে কুর্দি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে জানুয়ারি থেকে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে।
ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিপন্থী কয়েকটি বাহিনীকে সমর্থন করছে। ফলে তুরস্কের এই আগ্রাসন ন্যাটোর সহযোগী দেশটিকে ক্ষুব্ধ করেছে। গম মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দেয় যে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিরিয়াতে তুরস্কের অপারেশন আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিভ্রান্ত তৈরি করছে এবং এটি কয়েকটি এলাকায় জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে পুনরায় শক্তি অর্জনের সুযোগ দিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Nawroz Chowdhury ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৩৪ এএম says : 0
মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহাণ নেতাকে জানাই আমার শ্রদ্ধেয় সালাম। আল্লাহ তায়ালা আপনার সহায় হোন।
Total Reply(0)
Md Jafor Iqbal ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৩৭ এএম says : 0
Alhamdulillah.Ardogan is powerfull leader of the world.
Total Reply(0)
Mirza Ashiq ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৩৮ এএম says : 0
এগিয়ে যাওয়াই মূল লক্ষ
Total Reply(0)
Rasel Ahmmad ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৪৬ এএম says : 0
The great hero in Muslim Ummah...
Total Reply(0)
Fahim imtiaz ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৪৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবি করুক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন