শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চাঁদপুরে অধ্যক্ষ ও আ.লীগ নেত্রী ফেন্সি খুনের ঘটনায় মেডিকেল ছাত্রের দায় স্বীকার

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৮, ৭:১০ পিএম

অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা ফেন্সি হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। লোমহর্ষক এ খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত এক খুনিকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। আটক যুবক ১৬৪ ধারায় খুনের দায় স্বীকার করে চাঁদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ কায়সার মোশারফ ইউছুফের আদালতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে। রাকিব (২৩) নামের এ খুনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। অধ্যক্ষ ফেন্সির স্বামী অ্যাড. জহিরের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা জহির এর চাচাতো ভাই রাকিব। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রাঢী কান্দি এলাকায় তার বাড়ি । পিতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের একমাত্র সন্তান রাকিব। তাকে গত রোববার ঢাকা থেকে আটক করা হয়।

গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে খুনি রাকিব আটক ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর কথা জানান। তিনি জানান অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা ফেন্সি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তার স্বামী অ্যাড. জহির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা জহির এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। খুনের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে আপাতত আমরা এর চেয়ে বেশি তথ্য প্রদানে অপারগ।

সূত্র জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঠাণ্ডা মাথায় অধ্যক্ষ ফেন্সিকে খুন করে খুনের আলামতও নষ্ট করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে খুনিরা। খুনি রাকিব ও তার চাচাতো ভাই লিমন ঘটনার দিন ইফতারের পর অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানার চাঁদপুর শহরের ষোলঘরের বাসায় যায়। এ সময় তারা বাসার দরজায় দাড়িয়ে অ্যাড. জহিরুল ইসলামের খোজ করেন এবং অধ্যক্ষ ফেন্সিকে জানান, তারা বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্র অ্যাড. জহিরকে দেখাতে এসেছেন। অ্যাড. জহির বাসায় নেই বলার পরপরই খুনিরা অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় ওয়াশরুম(টয়লেট) ব্যবহার করার অনুমতি চায়। একজন নিজেকে মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেয়। এ সময় অধ্যক্ষ ফেন্সি তাদের বলেন আমার মেয়েও ডাক্তার। তোমরা ইফতার করেছো কিনা, খেয়েছো কিনা ? ডাইনিং এ খাবার আছে খেয়ে নেও । দুই খুনি তখন ডাইনিং বসে খেজুর খায়। পরম মমতায় অধ্যক্ষ ফেন্সি খুনিদের আপ্যায়ন করাতে থাকেন। এ সময় এক খুনি বাসার তালা দিয়ে অধ্যক্ষ ফেন্সির পেছন থেকে মাথায় আঘাত করলে তিনি বাসার ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুজনে মিলে তালা ও বাসার ফলকাটা চাকু দিয়ে মাথায় আরো কয়েকটি আঘাত করে। হত্যা নিশ্চিত করতে পলিথিন দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে ধরে। মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর খুনিরা বাসার বাথরুমে প্রবেশ করে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে যায়। এ সময় খুনি রাকিবের হাত কেটে যায়, প্যান্টে রক্তের দাগ লেখে থাকে। দুই খুনি ইমাম হাসান লঞ্চে উঠে। লঞ্চে উঠার আগে ঘাট থেকে হাত ব্যান্ডেজ ক্রয় করে নেয়। রাতেই তারা লঞ্চে ঢাকা চলে যায় । ঢাকা খেকে এক খুনি চাঁদপুর এলেও রাকিব চলে যায় গাজীপুর। খুন করার পর থেকে এ দুই খুনি কেউ কারো সাথে মোবাইলে আর যোগাযোগ করেনি । পুলিশ জানিয়েছে অ্যাড. জহিরের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা জহির এ হত্যাকাণ্ডের মুল পরিকল্পনা করেন । ঘটনার পর পুলিশ জুলেখার মোবাইল জব্দ করেছিলো, সেখানে দেখতে পান রাকিব এবং লিমন ঘটনার দিন জুলেখার সাথে মোবাইলে একাধিকবার কথা বলেছে। এ সূত্র ধরেই ডিবি পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার দিন সকালে রাকিব ঢাকা এবং লিমন মতলব উত্তর থেকে চাঁদপুর আসে । তারা শহরের হাসান আলী স্কুল মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে খুনের পরিকল্পনা এবং নকশা করতে থাকে। ইফতারের পর কিলিং মিশনে যায়। খুনি রাকিবের সাথে জুলেখা জহিরের নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। তারা মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতো ।

পুলিশ জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের সাথে অ্যাড. জহিরের সম্পৃক্ততা কতোটুকু তা নিশ্চিতের জন্য আরো তদন্ত প্রয়োজন। খুনের সাথে কতোজন জড়িত তা এখনো নিশ্চিত করে বলেনি পুলিশ

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে অনেক কথাই বলা যাচ্ছে না । তবে মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। বাকী আসামীদেরও দ্রুত সময়ে আটক করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান ।

কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও গল্লাক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সি খুনের পর পরই পুলিশ তার স্বামী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. জহিরুল ইসলাম ও দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেথা জহিরকে আটক করে ।

গত ৪ জুন ফেন্সিকে হত্যা করে খুনিরা । রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তার মাথায় মারাত্মক জখম ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এ ঘটনার পরদিন অধ্যক্ষ ফেন্সির ছোট ভাই ফোরকান খান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এরপর থেকেই জেল হাজতে রয়েছে অ্যাড. জহিরুল ইসলাম ও জুলেখা জহির ।

জহিরুল ইসলাম আনুমানিক চার বছর আগে সবার অগোচরে জুলেখা বেগমকে বিয়ে করেন। জুলেখার আগেও বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। অ্যাড. জহিরুল ইসলামের সাথে জুলেখা জহিরের বিয়ের পর এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয় ।

অন্যদিকে খুন হওয়া অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সি তিন কন্যার মা । দুই মেয়ে তাদের স্বামীর সাথে দেশের বাইরে থাকেন। এক মেয়ে চিকিৎসক । সে থাকে কুমিল্লায়।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুই মেয়েসহ অধ্যক্ষ ফেন্সির পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে খুনের বিচার দাবী করেন এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে অ্যাড. জহির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জড়িত বলে দাবী করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন