শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে মোঃ আবু শহীদ : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি জমি অকৃষিতে পরিনত হওয়া, স্বল্প সময়ে জমিতে অধিক ফসল ফলানোর প্রবনতা, পাট পঁচনের পানি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সোনালি আঁশ পাট চাষ যেন এখন কৃষকের অনিহা আর অবহেলার একটি অংশ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ১ বিঘা জমিতে গড়ে ৭ থেেক ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজার মূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৬০ এর দশকে বিভিন্ন এলাকায় পাটক্রয় কেন্দ্র ছিল, আবার বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরনে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতো। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করত। ফলে ন্যায্য মুল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুকে পড়তো ব্যাপকহারে পাট চাষে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কিছু কিছু জায়গায় তোশা পাট ৯৫ হেক্টর দেশি পাট ৪০ হেক্টরসহ মোট ১৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ-আবাদ এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও এবার ১৩৫ হেক্টরে নেমে আসায় গত বছরের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এভাবে দিন দিন পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষক।
এদিকে অল্পসংখ্যক কৃষক যারা পাট চাষ করছেন, জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে এলেও তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল,বিল শুকিয়ে যাওয়ায় চিন্তিত কৃষক। পানি না থাকায় পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় কৃষক,এতে পাটের গুনগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
উত্তরকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মোন্নাফ জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৩শ থেকে ৪শ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ দিনমজুর লাগে তাতে পুর্বের খরচ মিটিয়ে মণপ্রতি পাটের দাম পড়ে ১ হাজার টাকার উর্দ্ধে। আবার পাট পচনের খালবিল গুলির মধ্যে প্রায় সব খালেই অধিকাংশ সময় পানি থাকেনা,আবার কোনো কোনো খালগুলিতে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশংকায় পাট জাগদেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হয় তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই তাদের। প্রতিবছর মনপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ১ হাজার থকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সুজাপুর ডাবল ব্রীজ গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত দু,বছর থেকে ১বিঘা জমিতে পাট চাষ করে পাট জাগ দেয়া পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই এখন কলা চাষ করি এতে পরিশ্রম কম লাভ বেশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রুম্মান আক্তার বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদী,নালা,খাল,বিল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাট পচানো ও নিড়ানোর অনিশ্চয়তায় পাট চাষের একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন অনেক কৃষক। তারপরেও উপজেলার দৌলতপুর, খয়েরবাড়ী, শিবনগর, আলাদীপুর ও পৌরসভার কিছু অংশে পাট চাষ হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন