জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষই চায় তার খ্যাতি ও সুনাম বর্ধিত হোক। মান-সম্মান, ইজ্জত-হুরমত প্রশস্ততা লাভ করুক। পরিবারে, সমাজে, দেশে ও বিদেশে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়–ক। সকল স্থানে ও সকল অঙ্গনে তার প্রচার ও প্রসাম ক্রমান্বয়ে সম্প্রাসারিত হোক। এই চাওয়া ও কামনার শেষ নেই, ইতি নেই। যতই দিন যায়, ততই এর তীব্রতা বাড়তেই থাকে। এর শেষ কোথায় খ্যাতি লোভী ব্যক্তি বা শ্রেণী তার কুল কিনারা খুঁজে পায় না। কেন পায় না, কি জন্য পায় না এর পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য, অনেক অজানা কাহিনী।
নাম, যশ, গৌরব, মর্যাদা, প্রভাব ও প্রতিপত্তির মায়াবী আকর্ষণ মানুষকে অহরহ নিজের দিকে টানে, আকর্ষণ করে ও শীতল পরশ বুলায়। মানুষ আপন হতেই এই আকর্ষণের মায়াময় নাগরদোলায় চড়ে বসে নতুন এক সুখ, নতুন এক তৃপ্তির আনন্দ লাভে তন্ময় হয়ে যায়। ভুলে যায় তার অতীত, বিস্মৃত হয়ে যায় তার পুরনো দিনের ইতিহাস ও জীবন যাত্রার কথা। বর্তমানের আপাত মধুর সমীরণ তার বত্রিশ নাড়িকে আরও বেগবান করে তুলে। এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায় নিরলসভাবে। এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও পরিণতি কি, সেদিকে খেয়ালের ঘোড়া দৌড়ানোর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত থাকে না। এতে করে তার পা পিছলানোর বা কোমর ভাঙ্গার সম্ভাবনা দেখা দেয় অকস্মাৎ। এভাবে সে দুমড়ে-মুচড়ে একাকার হয়ে একসময় নিন্দা ও ঘৃণার পশরাকে মাথায় তুলে নিয়ে উদভ্রান্তের মত এদিকে সেদিকে ঘুরে ফিরতে থাকে। না পায় শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও স্থিরতা। এভাবেই তার জীবন তরণী অকুল সাগরের উত্তাল তরঙ্গে আন্দোলিত হতে হতে ডুবে যায় অতল গহীন জলধীর একেবারে তলায়। তার কর্মকাÐ ও স্মৃতিচিহ্নসূহ পর্যায়ক্রমে ধুয়ে মুছে লীন হয়ে যায়। কিন্তু এমন কিছু উপসর্গ রেখে যায়, যা কালের যাত্রায় ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে এবং তার লোভাতুর জীবনের অভিশম্পাৎ প্রস্তুতার সাক্ষী হয়ে যায়।
এমনই একটি ¯্রােতধারা মুসলিম মিল্লাতের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। কিছু সংখ্যক ধনী, সামর্থবান, সম্পদশালী মুসলমান দান-খয়রাত, সদকা ও যাকাত আদায়ের বেলা ঘোষণা দিয়ে নিজেদের কাজকর্ম শুরু করে। নির্দিষ্ট দিনে ও নির্ধারিত সময়ে গরবী-গোরাবা ও নির্ধন নর-নারীরা কিছু পাওয়ার আশায় ঘোষিত স্থানে এনে জড়ো হয়। ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দানকারী ও যাকাত আদায়কারীদের অব্যবস্থার কারণে ভীড়ের চাপে অনেক সময় দান প্রার্থীদের মৃত্যুর মুখ দেখতে হয়। দান পাওয়ার আশায় এসে লাশ হয়ে ঘরে ফিরে যায়। চারদিক হতে ভেসে আসে হাহাকার ও কান্নার রোল। যার রেশ দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হতে থাকে। সে বেদনার শেষ নেই, সমাপ্তি নেই। অথচ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত দানকারী বান্দাহাদেরকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন: ‘হে ঈমানদার বান্দাহগণ, তোমরা তোমাদের দানের কথা প্রচার করে ও দান গ্রহীতাকে কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে ওই ব্যক্তির মত নিস্ফল করো না, যে নিজের ধন থেকে লোক দেখানো জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তার উপমা একটি মসৃন পাথর, যার ওপর কিছু মাটি থাকে। তারপর তার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিস্কার করে রেখে দেয়। যা তারা উপার্যন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না। আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্পদায়কে সৎপথে পারিচালিত করেন না।’ -সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৬৪। অপর দিকে মহান আল্লাহ পাক লোভহীন ও মুক্ত মনের অধিকারী দানকারীদেরকে বিনিময় ও পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যারা আল্লাহর পথে ধর্নৈশ্চর্য ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না ও দানগ্রহীতাকে ক্লেশ দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। -সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৬২। এর দ্বারা স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, খ্যাতি অর্জনের লোভ, দাম্ভিকতা ও ক্লেশ দানের মানসিকতা যে সকল দানকারীদের মাঝে পাওয়া যাবে, তাদের দান কোনোক্রমেই আল্লাহ পাকের দরবারে গৃহীত হেব না। বরং তা নিস্ফল হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন