মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গ্রীষ্মের শুরুতেই ব্যাপক হারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সেই সাথে চৈত্রের এই ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ)-এর অধীনে এলাকায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ চালিত অগভীর ও গভীর নলকূপের পানি সেচ বিঘিœত হচ্ছে। এতে বোরো জমিতে পানি দিতে না পারায় কৃষককুল আতংকিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় এলাকাবাসী চৈত্রের তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের তথ্য জানতে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে যোগাযোগ করেও ওই কার্যালয়ের কারও কাছ থেকে সুষ্ঠু কোনো তথ্যা পাওয়া যায় না। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ বার প্রতিবার আধা ঘণ্টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। কোনো কোনো সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও তারা শতভাগ উদাসীন থাকে বলে ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে থেকে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বিদ্যুৎ কর্মীরা তাদের মুঠোফোনগুলো বন্ধ রাখে। ফলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের মোট চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রটি নওগাঁ ফিডার নামে পরিচিত। কিন্তু নওগাঁ জেলায় বিদ্যুৎ চাহিদা হচ্ছে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট। নামের বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুতের সঞ্চালন কমে গেলেই নওগাঁ ফিডার নামে পরিচিত দুপচাঁচিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বর্তমানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এ উপজেলায় প্রায় দুই হাজারেও অধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে। বার বার বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কলকারখানা সমৃদ্ধ এ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের অধীনে উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। এতে সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে। দেশে বিদ্যুৎ উদপাদনে ঘাটতি রয়েছে এমন তথ্য বিদ্যুৎ বিভাগ বর্তমান পরিসরে কখনো প্রচার না করলেও বিদ্যুৎ এর এই ভিলকিবাজীর কারণে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণসহ বিদ্যুৎ বিভাগ সংক্রান্ত কোন প্রকার তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ ও বগুড়া গ্রীডের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এনএলডিসি (স্ক্যাডা) কর্তৃক বার বার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকার বাণিজ্যিক ও সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা এ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রকে স্ক্যাডামুক্ত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। উল্লেখ্য, এ সংক্রান্তে গত ৮ এপ্রিল দৈনিক ইনকিলাব-এর অভ্যন্তরীণ পাতায় দুপচাঁচিয়ায় লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস ঃ দুর্ভোগে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন