শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সমঝোতা বিবাদের চেয়ে সবসময়ই উত্তম

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২ জুলাই, ২০১৮

ইসলাম একই সাথে একটি ধর্ম, একটি জীবন ব্যবস্থা, একটি অতুলনীয় সভ্যতা। যেহেতু মানবজাতির জন্য তাদের মহান ¯্রষ্টা ইসলামকেই জীবন বিধান হিসাবে মনোনীত করেছেন, অতএব এর কোনো তুলনা হয় না। দীর্ঘ প্রায় দেড় হাজার বছর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলাম।
একশ বছর ধরে ইসলাম বাস্তবায়িত না থাকায় পৃথিবী ও মানব সভ্যতা ধ্বংসের খাদের কিনারে পৌঁছে গেছে প্রায়। মানুষ নিজেদের ধ্বংস করার এত আয়োজন করেছে যে, ইচ্ছায় বা ভুলক্রমে মানব সভ্যতা ধ্বংস করে দেওয়া এখন কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। এ অবস্থা থেকে মানুষের মুক্তি কেবল ইসলামই দিতে পারে। নবী করিম সা. থেকে পরবর্তী চার খলীফা সুশাসন ও ন্যায়বিচারের যে সব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা মানবজাতির জন্য চিরন্তন সম্পদ। এর মধ্যে অল্পেতুষ্টি ও আপস একটি বড়গুণ। সমঝোতা ও শান্তিপ্রিয়তা মানুষের জীবনে অনেক সাফল্য এনে দেয়। অপরদিকে জেদ, অহংকার ও অনমনীয়তা মানুষকে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ করে। ঈমান ও নীতির ব্যাপারে মানুষকে আপোসহীন হতে হবে। তবে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ধৈর্য, ত্যাগ, তুষ্টি, সমঝোতা, সংলাপ অবলম্বন করে টিকে থাকতে হবে। ক্ষমা, ঔদার্য ও ভালোবাসার মাধ্যমে শত্রæকেও জয় করতে হবে। এসব কথা কোরআন হাদীসেরই মর্মবাণী। মানুষ যদি নিজের জীবনে এসব প্রয়োগ করে তাহলে জীবন যুদ্ধে সে পরাজিত হবে না। বিবাদের চেয়ে সমঝোতা যে উত্তম, এবিষয়ে একটি উদাহরণ ইসলামের ইতিহাস থেকে পেশ করছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষ নিজেদের দিন-দুনিয়া, ক্ষমতা, রাজনীতিসহ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে এ উদাহরণ থেকে উপকৃত হতে পারবেন।
এক ব্যক্তি নগরীর মসজিদে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন, এসময় অপর ব্যক্তি এসে তার সাথে একই দস্তরখানে নিজের খাবার নিয়ে বসলেন। ঘটনাক্রমে তৃতীয় এক ব্যক্তিকে মসজিদে বসে থাকতে দেখে তারা দু’জনই তাকে খাবারে ডাকলেন। প্রথম ব্যক্তির ছিল ৫ টি রুটি। দ্বিতীয় ব্যক্তির ৩ টি রুটি। তৃতীয় জনের কিছ্ইু ছিল না। তারা মুসলমানের সৌজন্য হিসাবে কোনো বানিজ্যিক চিন্তা ছাড়াই সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন। যখন বিদায়ের পালা তখন তৃতীয় লোকটি আগের দু’জনকে ৮ টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে চলে গেলেন। তখন ৫ রুটির মালিক বললেন, ভাই তুমি ৩ টি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে যাও, আমি ৫ টি রেখে দেই। মুসাফির ভাই হিসাবে তাকে আমরা দাওয়াত করলাম, আবার তিনি আমাদের টাকাও দিয়ে গেলেন। তখন ৩ রুটিওয়ালা বলল, এ টাকা তো তিনি রুটির দাম হিসাবে দেননি। এমনিতেই দিয়েছেন, সুতরাং টাকা সমানভাবে ভাগ হবে। আপনার ৪ টি স্বর্ণমুদ্রা আর আমার ৪ টি। কিন্তু প্রথমজন বললেন, তিনি ৮ রুটি দেখেই ৮ টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছেন। আমরা যেমন তাকে দাওয়াত করেছিলাম এখন উল্টো তিনিই আমাদের খানা খাইয়ে দিলেন। তবে এ বিষয়টি সহজে সমাধান হলো না। দুয়েকজন যারা ঘটনাটি শুনলেন তারা বললেন, যেহেতু রুটি ৮ টি, স্বর্ণমুদ্রাও ৮ টি তাহলে আপনারা আপোস করে নিন। সমঝোতার মাধ্যমে ৫ টাকা ও ৩ টাকা নিয়ে নিন। সমান চাওয়ার প্রয়োজন কি? আপনাদের কারও তো ব্যবসার উদ্দেশ্য ছিল না। টাকা পাওয়ার আশাও ছিল না। যেহেতু ওই ভাই রুটির পরিমাণ দেখেই টাকা দিয়েছেন, তাহলে রুটি হিসাবেই তা ভাগ হওয়া উচিত। কিন্তু ৩ রুটিওয়ালা কিছুতেই কারও কথা মানতে রাজী নন। তার গুঁয়াতুর্মি দেখে ৫ রুটিওয়ালাও ১ টি স্বর্ণমুদ্রা ছেড়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না। তখন ৩ রুটিওয়ালা এ নিয়ে আদালতে গেল। ঘটনাক্রমে এটি ছিল মুসলিম খেলাফতের প্রধান বিচারালয়। বিচারপতি ছিলেন, হযরত আলী রা.। ঘটনার বিবরণ শুনে তিনি ৩ রুটিওয়ালাকে বললেন, যেভাবে কথা হয়েছে সেভাবেই আপনি মেনে নাও। ৩ টাকা নিলে অনেক লাভবান হবেন। সমঝোতার পথ সবসময়ই সুন্দর। হিসাব বা বিচার অনেক সময় লাভজনক হয় না। উপস্থিত সবাই হযরত আলী রা. এর কথায় সন্তুষ্ট হয়ে সমঝোতা মানলেও ৩ রুটিওয়ালা গোঁ ধরে বসল। লাভ ক্ষতি যাই হোক আমার ন্যায় বিচার চাই। হযরত আলী রা. তখন রায় দিলেন, বললেন, ৫ রুটিওয়ালাকে ৭ টাকা দিয়ে দাও আর ৩ রুটিওয়ালা পাবে ১ টাকা। বিচার শুনে সবাই হতভম্ভ। কিন্তু নবী করিম সা. এর চতুর্থ খলীফা মহাজ্ঞানী ও মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ট বিচারপতি হযরত আলী রা. এর ন্যায় বিচার নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ কোনোদিনই ছিল না। তিনি ছিলেন খোদাদত্ত বিচার ক্ষমতার অধিকারী। তখন ৩ রুটিওয়ালা বলল, হযরত আমি এক টাকাই নিলাম এবং সন্তুষ্টচিত্তে আপনার বিচার মেনে নিলাম। কিন্তু আমার আবেদন এই যে, আমাকে ১ টাকা পাওয়ার কারণ ও এমন অভাবনীয় হিসাবটি বুঝিয়ে দেওয়া হোক। তখন হযরত আলী রা. বললেন, তোমাদের মোট রুটি ছিল আটটি। খেয়েছো ৩ জন মিলে। অর্থাৎ রুটিগুলি ২৪ টুকরা হয়েছে। প্রত্যেকে যদি ৮ টুকরা করে খেয়ে থাকো, তাহলে তোমার ৩ রুটির ৯ টুকরা থেকে পথিক মাত্র ১ টি টুকরা খেয়েছে। আর অপরজনের ৫ রুটির ১৫ টুকরা থেকে পথিক খেয়েছে ৭ টুকরা। এ হিসাবেই আমি অঙ্ক করে টাকা ভাগ করে দিলাম। ওই ব্যক্তি সরল মনে তোমাকে ৩ টাকা নিতে বলেছিল, আর তুমি ১ টাকাও ছাড় না দিয়ে সমান ভাগ নিতে চেয়েছিলে। এ ছিল সহজ ও আপোসের ব্যাপার। অন্য মানুষেরাও এমনকি আমিও তোমাকে সমঝোতা মেনে নিতে বলেছিলাম, কিন্তু তুমি হিসাবের পাওনা আর সুবিচার ইত্যাদি বলে মামলাটি আদালতে তুলেছো। আর বিচার যখন হয় তখন তা অঙ্কের বাইরে যায় না। অতএব, যত মামলা আপোস ও সমঝোতায় শেষ হয় ততই ভালো। আদালতে গড়ালে তা নীতি হিসাব প্রমাণ ও বিধানের আলোকেই শেষ হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘সমঝোতাই উত্তম’।- আল কোরআন। উপস্থিত সবাই খুশি হলো, এমনকি ৩ রুটিওয়ালাও আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে বলল, হযরত টাকা যদিও আমি কম পেয়েছি, তথাপি আপনাকে দেখে ও আপনার কথা শুনে সারাজীবনের জন্য মহামূল্যবান শিক্ষা ও উপদেশ লাভ করলাম। আমি ধন্য। এতে বোঝা গেল সমঝোতা বিবাদের চেয়ে সবসময়ই উত্তম।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Emon ১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৩৪ এএম says : 0
Islam is the complete code of life
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান ১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৩৫ এএম says : 0
একদম ঠিক কথা বলেছেন।
Total Reply(0)
জাকির ১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৩৬ এএম says : 0
ধারাবাহিক এই কলামটি আমাদের চিন্তা চেতনাকে প্রসারিত করবে।
Total Reply(0)
সোহরাব, সহকারী শিক্ষক ৩ জুলাই, ২০১৮, ৭:১২ পিএম says : 0
এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন সকলের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন