শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ২ জুলাই, ২০১৮

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ ধর্মীয় শিক্ষাবহির্ভূত, তবে তাদের অনেকে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলেন। আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমানদের এক বিরাট অংশ ধর্মীয় প্রাথমিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত এবং ধর্ম-কর্ম পালন করতে অভ্যস্ত, কিন্তু বর্তমানে মুসলিম ঘরানাগুলোর সন্তানদের এক বড় অংশ ধর্মবিমুখ হয়ে বড় হয়ে উঠছে, অনুরূপ দরিদ্র শ্রমজীবী মুসলমানদের বহু সন্তান লেখাপড়া তথা সুশিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়ে বিপথেও পরিচালিত হচ্ছে। এদের অনেকে শিশু শ্রমিক হিসেবে বেড়ে উঠছে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনীহা ও যারা আধুনিক শিক্ষার প্রতি ধাবিত হচ্ছে, তাদের মধ্যেও এমন আছে যারা মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়েও ইসলামের অতি প্রয়োজনীয় প্রাথমিক বিষয়গুলো পর্যন্ত জানে না। এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা না করেও বলা যায়, আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্মের এক উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম সন্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে অথচ ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাও তাদের নেই। এব্যাপারে অভিভাবকদের দায়িত্ববোধের অভাবকেই প্রথমত দায়ী করা যায়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অন্তত: তাদেরকে যদি ন্যুনতম জ্ঞান দেয়া হতো এবং ইসলাম ধর্মের অতি প্রয়োজনীয় করণীয় বিষয় গুলো শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হত, তাহলে বড় হয়ে বিপথে যেতে হত না।
আবশ্যকীয় প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রত্যেক মুসলিম সন্তানের কর্তব্য। আর এ শিক্ষা দান করা বা সুযোগ করে দেওয়া প্রত্যেক পিতা-মাতা, অভিভাবকের অপরিহার্য দায়িত্ব। ধর্মীয় শিক্ষা তথা ধর্মীয় জ্ঞান লাভের উপর ইসলাম যে গুরুত্ব আরোপ করেছে, তা কি আমরা সবাই জানি? কোরআন ও হাদীসে এ জ্ঞান লাভ সংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা রয়েছে। নি¤েœ হজরত আলী (রা:) এবং বিখ্যাত সাহাবী হজরত মাআজ ইবনে জাবাল (রা:) এর কিছু মূল্যবান উক্তি-বাণী উল্লেখ করা হল, যা অনুসরণ যোগ্য।
‘মখজনে আখলাক’ নামক গ্রন্থে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে যে, একদা দশজন লোক হজরত আলীর (রা:) খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল; ‘হে আমিরুল মোমেনীন! আমরা আপনাকে মাত্র একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। আমরা আশা করি যে, আপনি আমাদের প্রত্যেককে তার ভিন্ন র্ভিন্ন জবাব দান করবেন’। তারা প্রশ্ন করল; ‘হে আমিরুল মোমেনীন! জ্ঞান উত্তম, না ধন-সম্পদ?’
এই প্রশ্নের উত্তরে হজরত আলী (রা:) বললেন; ‘১. জ্ঞান উত্তম, কেননা ধন-সম্পত্তি তোমাকেই হেফাজত করতে হয়, আর জ্ঞান তোমরাই হেফাজত করে থাক। ২. জ্ঞান উত্তম, কেননা ধন-সম্পত্তি ফেরাউন ও হামানের উত্তরাধিকার, আর জ্ঞান নবীগণের মীরাজ। ৩. জ্ঞান উত্তম, কেননা ধন-সম্পত্তি খরচ করলে কমে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উন্নতি সাধিত হয়। ৪. জ্ঞান উত্তম, কেননা দেরী হলে মাল পুরাতন হয়ে যায়, পক্ষান্তরে জ্ঞানের কোন ক্ষতিই হয় না। ৫. জ্ঞান উত্তম, কেননা মালের জন্য সব সময় চোরের ভয় থাকে, কিন্তু জ্ঞানের জন্য এরূপ কোন আশঙ্কা নেই। ৬. জ্ঞান উত্তম, কেননা ধনী ব্যক্তিকে কোন কোন সময় কৃপণ বলা হয়, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিকে করিম বা দাতা বলা হয়। ৭. জ্ঞান উত্তম, কেননা জ্ঞান দ্বারা অন্তর আলোকিত হয়ে ওঠে, আর মাল অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। ৮. জ্ঞান উত্তম, কেননা ধন-দওলতের প্রাচুর্য্যরে ফলে ফেরাউন প্রভুত্ব-খোদায়ী দাবী করেছিল, কিন্তু জ্ঞান বিশালতার দরুন হজরত রসূলে করিম (সা:) সর্বদা এইরূপ বলতেন, ‘মা আবাদনাকা হাক্কা ইবাদাতিকা’। অর্থাৎ (হে খোদা!) আমরা যথাযথভাবে তোমার উপযোগী এবাদত বন্দেগী করতে পারিনি। ৯. জ্ঞান উত্তম, কেননা অর্থলোভে বহু শত্রæ সৃষ্টি হয়। আর জ্ঞান দ্বারা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১০. জ্ঞান উত্তম, কেননা কেয়ামতের দিবসে ধন-সম্পদের হিসাব দিতে হবে কিন্তু জ্ঞানের জন্য কোন হিসাব দিতে হবে না।’
হজরত মাআজ ইবনে জাবাল (রা:) বর্ণনা করেন; “রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘১. দ্বীনী শিক্ষা (জ্ঞান) অর্জন কর, ২. জ্ঞান লাভ করলে অন্তরে আল্লাহর ভয় জন্মে, ৩. জ্ঞান অনুসন্ধান এবাদত স্বরূপ, ৪. জ্ঞান চর্চা করা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার সমতুল্য, ৫. জ্ঞান চর্চা করা জেহাদ স্বরূপ, ৬. অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া দান স্বরূপ, ৭. প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জ্ঞান বিতরণ করা পুণ্যের কাজ, ৮. জ্ঞান হালাল ও হারাম বস্তুকে চেনার প্রতীক স্বরূপ, ৯. জ্ঞানী ব্যক্তিরা বেহেশতি ও সৎ লোকেদের পথের দিশারী, ১০. একাকী অবস্থায় জ্ঞান সাথী ও দরিদ্র অবস্থায় বন্ধু, ১১. জ্ঞান একাকী অবস্থায় আলাপী বন্ধু স্বরূপ, ১২. জ্ঞান সুখ ও দু:খে পথ প্রদর্শক, ১৩. দুষমনের মোকাবেলার জন্য জ্ঞান মজবুত অস্ত্র, ১৪. বন্ধুদের নিকট জ্ঞান সৌন্দর্য্য, ১৫. আল্লাহ তাআলা জ্ঞানের বদওলতে অধ:পতিত জাতিগুলোকে উন্নত করেন এবং জ্ঞানীদের পথ প্রদর্শক ও নেতা মনোনীত করেন, লোক তাদের অনুসরণ করে, ১৬. জ্ঞান অন্তরের কালিমা দূর করে মানুষের মধ্যে মর্যাদা দান করে, ১৭. জ্ঞান অন্ধকারে আলো বিতরণ করে, ১৮. জ্ঞান মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করে, ১৯. জ্ঞান চর্চা করা রোজা রাখার ন্যায় পূণ্যের কাজ, ২০. জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করা রাত্রের এবাদতের ন্যায়, ২১. জ্ঞান দ্বারা মানুষ আত্মীয় সুলভ ব্যবহার করতে শেখে এবং হালাল-হারাম চিনতে পারে, ২২. আমল জ্ঞানের অধীনে এবং জ্ঞান আমলের পথ প্রদর্শক স্বরূপ, ২৩. সৎ লোকেদের জ্ঞান দান করা হয় এবং অসৎ লোকেরা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। (ইবনে আবদুল বার)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Masum Billah ২ জুলাই, ২০১৮, ৪:৫৪ এএম says : 1
Good
Total Reply(0)
লোকমান ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:০৯ এএম says : 1
জীবনের সকল কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনী শিক্ষার বিকল্প নেই।
Total Reply(0)
এমদাদুল হক ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:১০ এএম says : 1
ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি জাগতিক শিক্ষারও গুরুত্ব রয়েছে। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি।
Total Reply(0)
আবদুল হান্নান ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:১১ এএম says : 1
দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমেই সমাজে ঈমান-আমল, আল্লাহ ভীতি ও আখিরাত-মুখিতা সৃষ্টি হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়া যেমন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখিরাতের কামিয়াবী অর্জন করা যায় না তেমনি দুনিয়ার জীবনও দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম ও শোষণ থেকে মুক্ত করা যায় না।
Total Reply(0)
শাফায়েত ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:১৫ এএম says : 1
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করার তৌফিক দান করুন এবং তদনুযায়ী আমল করার সুযোগ করে দিন।
Total Reply(1)
মনিরুল ইসলাম ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:৫৬ এএম says : 4
আমিন
MD AKMAL HOSEN ২ জুলাই, ২০১৮, ১০:৫৯ এএম says : 1
মাশাআল্লাহ সুন্দর কলাম পড়ে অনেক ভাল লাগল এবং অজানা বিষয় জানতে পারলাম। যাজাকাল্লাহ
Total Reply(0)
MD ZAHURUL ২ জুলাই, ২০১৮, ৫:৪১ পিএম says : 1
The government should make syllabus in such away so that every children can get knowledge about their religion.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন