মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মুখের আলসার বা ঘাঁ যদি সাধারণ প্রকৃতির হয়ে থাকে অর্থাৎ জটিল না হয় তবে প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। আবার কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেও মুখের আলসারের তীব্রতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া মুখের আলসার যেন বার বার দেখা না দেয় বা খারাপ কোনো দিকে পরিবর্তিত না হয়, সেটিও কিছু নিয়ম কানুন পালনের মাধ্যমে কার্যকর করা সম্ভব। মুখের আলসারের কিছু অভ্যাসগত কারণ রয়েছে যার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে মুখের আলসার নিরাময় করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ বা মুখ পরিষ্কার না করার কারণে মুখে আলসার বা ঘাঁ হতে পারে। তাই আমাদের সবার সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা উচিত এবং জিহŸা ও মুখের অভ্যন্তর যথাযথভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যে সব টুথপেষ্টে ক্ষয়কারক উপাদান বা এস.এল.এস. বা সোডিয়াম লরিল সালফেট বেশি পরিমাণে থাকে সেগুলো দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিতে পারে।
মুখে আলসার হলে মাউথওয়াশ ব্যবহার না করাই ভাল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাউথওয়াশ ব্যবহারের কারণে মুখের আলসার বা ঘাঁ এর তীব্রতা বহুগুণ বেড়ে যায়। সবচেয়ে ভাল হয় কসমেটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল কসমেটিক মাউথওয়াশ হলো হালকা গরম লবন পানি। লবন মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের আলসারের সংক্রমন রোধ করা সম্ভব। কারণ লবন এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। আর তাছাড়া লবন আমাদের ডাইনিং টেবিলে অথবা রান্না ঘরে সব সময়ই পাওয়া যায়।
খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। মুখের আলসারের ক্ষেত্রে মশলাযুক্ত খাবার ক্রমাগত গ্রহণ করলে মুখের আলসারের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার গ্রহণ করা ঠিক নয় যদি আপনার মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ থাকে। ধূমপান ও এলকোহল সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা ঠিক নয়। মানসিক চাপমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে আলসার মুক্ত থাকার জন্য।
মুখের আলসারে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে যার প্রয়োগের মাধ্যমে সুফল লাভ করা সম্ভব। মুখের আলসার আক্রান্ত স্থান হালকা গরম লবন পানি দ্বারা পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখের আলসারযুক্ত স্থানে বাটার প্রয়োগ করলে আলসারের ব্যথা কমে যায়। আক্রান্ত স্থানে গিøসারিন প্রয়োগের মাধ্যমে আলসার ভাল হওয়ার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে মধু প্রয়োগ করা যেতে পারে। ডাবের পানি অনেক দিন খেলে মুখের সাধারণ আলসার ভাল হয়ে যায়। সম্ভব হলে ডাবের পানি দ্বারা কুলকুচি করা যেতে পারে। পাকা পেঁপে মুখের আলসার সারাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পাকা পেঁপে ক্ষতস্থান কমাতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক দই এবং টক দই মুখের সাধারণ আলসার নিরাময়ে ভুমিকা রাখে। দই প্রোবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। তবে অতিরিক্ত দই খাবেন না। গাজর মুখের আলসারে কার্যকর ভুমিকা রাখে। গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে। আপেলের ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং প্রদাহ নাশকারী কার্যকারিতার জন্য মুখের আলসারে আপেল অত্যন্ত উপকারী খাবার। আপেলকে প্রাকৃতিক মাউথওয়াশও বলা হয়। কলা মুখের আলসারের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন আবরণ সৃর্ষ্টিতে সাহায্য করে থাকে। খাঁটি মধু প্রয়োগ করলে বা খেলে আলসারযুক্ত স্থান দ্রæত ভাল হয়ে যায়। তরকারি হিসেবে কাঁচা কলা খেতে পারেন।
মুখের আলসারের ব্যথা কমাতে হাতের কাছে ওষুধ না পেলে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে যে রস বের হয় তা ক্লোভ অয়েল নামে পরিচিত। এটি মুখের আলসারের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, লবঙ্গ দাঁতের ব্যথাও কমাতে সাহায্য করে। তবে মুখের আলসারের স্থান এবং প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হওয়ায় কারো কারো ক্ষেত্রে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে মুখের আলসারের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে এবং মুখের জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুদিনা পাতা ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং প্রদাহ নাশকারী বলে মুখের আলসারের ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকার রাখে। উপরোক্ত বিধিনিষেধ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুধুমাত্র প্রাথমিক আলসার বা মুখের ঘাঁ এর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। এছাড়া যে সব মুখের আলসার সাধারণ প্রকৃতির হয়ে থাকে অর্থাৎ যার ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক নয় সে ধরণের ক্ষেত্রে মুখের আলসারের প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যকর ভুমিকা রাখবে, যেখানে ডাক্তার পাওয়া সম্ভব নয়। মুখের আলসার যদি ভাইরাস জণিত বা অটোইমমিউন রোগ হয়ে থাকে তবে কালবিলম্ব দেরী না করে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে । কার্যকর চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এধরণের মুখের আলসার কখনই ভালো হবে না।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল : dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন