কোনো প্রকার বেতন-ভাতা ছাড়াই ১৮-২০ বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে আসছেন অধিকাংশ নন-এমপিও শিক্ষক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে জমি-জমা বিক্রি করে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। শিক্ষকদের বড় একটা অংশের চাকরির বয়সও শেষের দিকে। শিক্ষকরা বলছেন, এভাবে আর কতদিন চলবে। কতদিন আর না খেয়ে শিক্ষকতা করবো। প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের আশ্বস্ত করেছেন কিন্তু এর বাস্তবায়ন এত দেড়ি হচ্ছে কেন? তবে গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নীতিমালার ভিত্তিতে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সে নীতিমালা মানতে নারাজ শিক্ষকরা।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তদের কষ্টের কথা। রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলা থেকে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন স্কুল শিক্ষক আকরাম হোসেন। বয়সের ভারে অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, “১৯৯৪ সাল থেকে বিনাবেতনে শিক্ষকতা করে আসছি। এ পর্যন্ত কোনো বেতন ভাতা পাই নাই। জমি-জমা বিক্রি করে আজ আমি নিঃশ প্রায়। এভাবে বেতন ভাতা ছাড়াই চাকরি করতে করতে তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার পথে বসার মতো অবস্থা। চাকরির বয়সও শেষ হয়ে আসছে। এভাবে আর কতদিন চলবে?” সিরাগঞ্জ থেকে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, “২১ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষা দিয়ে আসছি। শিক্ষক হিসেবে পরিচিত থাকায় আমরা না পারছি মানুষের কমলা দিতে, না পরছি সংসার চালাতে। এভাবে আর কতো! আমাদের দিকে দেখে সরকারের কি এতটুকুও দয়া হয় না?”
এমপিভুক্তির দাবিতে ১২ দিন অনশনসহ টানা ২৭দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। অনশনকালে গতকাল পর্যন্ত দুই শাতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে স্যালাইন দেওয়া হয় এবং গুরুতর অসুস্থ ২৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। যার মধ্যে ২০ জন শিক্ষক চিকিৎসা শেষে পুনরায় আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন। আজ আমরণ অনশনে সংহতি জানিয়ে শিক্ষকদের সাথে প্রায় একঘন্টা অবস্থান করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোকারম হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, “ননএমপিও শিক্ষকদের অধিকাংশই ১৫-২০ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। যাদের অনেকের চাকরির বয়স একেবারেই শেষের দিকে। এভাবে না খেয়ে আর কত দিন? আমরা তো ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছি।”
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, আজ আমাদের আন্দোলনের ২৭ দিন, আমরণ অনশনের ১২ দিন চলছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলন বন্ধ করে আমরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবারে বাজেটে আমাদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ফের আন্দোলনে নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
প্রধানমন্ত্রী নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও তা মানতে নারাজ শিক্ষকরা। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্তি কার্যকর হলে অনেক প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পড়বে না। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তিতে কোনো গতিও হবে না।
জানা গেছে, সারাদেশে ৫ হাজার ২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার শিক্ষক-কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এরমধ্যে শিক্ষকদের বড় একটা অংশের চাকরির বয়স একবারেই শেষের দিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন