বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কর্মস্থলে দেরিতে উপস্থিতি ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে

মালেক মল্লিক : | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ষ নি¤œ আদালতের বিচারকদের সতর্ক করে সার্কুলার
ষ এ ধরনের ঘটনা মঙ্গলজনক নয় : আইনজীবী
নি¤œ আদালতের বিচারকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তী কার্যদিবসে বিলম্বে কর্মস্থলে উপস্থিত হন। অধিকাংশ বিচারকের ক্ষেত্রে প্রায় একই ভাবে অনিয়ম করতে দেখা যায়। একাধিকবার সার্কুলার জারি করার পরও বিচারকরা পূর্বানুমোদন ব্যাতিরেকে কর্মস্থল ত্যাগ করছেন। নি¤œ আদালতের বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করেছেন না। এতে করে বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে বিচার প্রশাসনে কাজের ধারাবাহিকতা ব্যতয়সহ জনগণের কাছে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। সম্পতি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়্া কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা অমান্য করলে অসদাচরণ বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এদিকে বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে অবিহিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তাদের মতে, এ ধরণের ঘটনা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা অসদাচরণ শামিল।
মামলা জট কমানো এবং বিচার বিভাগের কর্মকাÐ গতিশীল করতে গত মাসে নি¤œ আদারতের বিচারপতির প্রতি ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার দায়িত্ব পালনকালে দুই দফায় নি¤œ আদালতের বিচারকদের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছিলেন। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, নি¤œ আদালতের বিচারকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সার্কুলার জারি করা উদ্য্ােগটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। সবক্ষেত্রে বিষয়টি উদ্বেগজনক না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে উদ্বেগ হতে পারে। কারণ সাধারণ জনগনের চেয়ে বিচাকরা একটি নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করবেন। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। তারা যদি বিচারকার্য পরিচালনায় অবহেলা করেন তাহলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়বে। এটা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। এই জন্য নি¤œ আদালতের বিচারকদের আরো সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী।
সুপ্রিম র্কোট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা অসদাচরণ শামিল। মাসদার হোসেন মামলার সুপারিশ পুরাপুরি বাস্তবায়ণ হলে বিচার বিভাগের এমন সব ঘটনা দেখা যেত না। নি¤œ আদালতের বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্দেশনা মানা বিষয়টি বিচারকদের মন-মানসিকতার উপর র্নিভর করে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, উচ্চ আদালত সার্কুলার জারি করতেই পারেন। একবার সার্কুলার জারি পর যখন পূনরায় সার্কুলার জারি করা হয়। তখন বুঝতে হবে কোথায় না কোথায় সমস্যা আছে। এই দিক থেকে আমার মনে হয় বিষয়টি উদ্বেগ জনক।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশক্রমে জারিকৃত সার্কুলারে বলা হয়েছে, অধস্থন আদালতসূমহে বিচারাধীন মামলার আধিক্য হ্রাস, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার তথা দ্রæত বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন আদালতে কমর্রত সকল পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য কার্যদিবসে কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছিলো। এমনকি বিচারকদেরকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করতেও বলা হয়েছিলো। কিন্তু স¤প্রতি সুপ্রিম কোর্টের গোচরীভূত হয়। এতে বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ, জেলা জজ সমপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ অধস্থন আদালতের অনেক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বর্ণিত নির্দেশনাসূমহ যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যাতীত কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এমনকি সপ্তাহের শেষ দিনে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কর্মস্থল ত্যাগ করছেন এবং পরবর্তী কার্যদিবসে দেরীতে কর্মস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন। এছাড়া অনেকে সপ্তাহের অন্যান্য কার্যদিবসেও কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে একাধিকবার কর্মস্থল ত্যাগ করেন। ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। অরপদিকে বিচার প্রশাসনে কাজের ধারাবাহিকতা ব্যতয়সহ জনগণের কাছে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিচার প্রশাসনে এরূপ অবস্থা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। এমন প্রেক্ষাপটে নি¤œ আদালতের সংশ্লিষ্ট বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণকে নিদ্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ও বিনা অনুমতিতে সপ্তাহের শেষ দিনে বা অন্যান্য কার্যদিবসে কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান না করার নির্দেশ দেয়া গেলো। আইন সচিব, জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, বিভাগীয় বিশেষ জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন, বিচারক দ্রæদ বিচার, বিশেষ জজ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট,চীফ মেট্রাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অধস্থন আদালতের সকল পর্যায়ের বিচারকদের কাছে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
হাইকোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনা দেন:
গত মাসে নি¤œ আদালতের প্রতি ১৫ দফা নির্দেশনা দেন দিয়েছে হাইকোর্ট। গাইবান্ধার দায়রা আদালতের একটি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা রায়ে হাইকোর্টে একটি বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান ও এ সংক্রান্ত মামলা সঠিকভাবে পরিচালনায় বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকারী হাকিম, আমলে গ্রহণকারী হাকিম ও দায়রা আদালতের জজদের প্রতি এ নীতিমালা পালন করতে বলা হয়েছে। বিচারিক আদেশ সঠিকভাবে যাতে দিতে, রিভিশনাল ম্যাটার ও বিবিধ বিষয়ের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা বাঁচাতে এবং বিচার বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার প্রত্যাশায় এ গাইডলাইন দেয়া হয়। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এ নীতিমালা সংবলিত রায়ের কপি সব জেলা জজ, মহানগর ও দায়রা জজদের মাঝে বিতরণ করতে অথবা ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনে আরো সিরিয়াস হতে হবে, সৎ, মেধাবী, সজাগ এবং দক্ষ অফিসারদের দ্বারা পরিচালনার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গতিশীল ও দেশপ্রেমী অঙ্গ হিসেবে জনগণের স্বীকৃতি আদায়ে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) এবং মুখ্য বিচারিক হাকিমের (সিজেএম) সহযোগিতায় সব বিচারক এবং হাকিমদের নিয়ে জেলা/মহানগর দায়রা জজের অফিসে মাসে কমপক্ষে একবার জুডিশিয়াল কনফারেন্স (বিচারিক সম্মেলন) করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন