মধ্যপ্রাচ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিষফোঁড়া অবৈধ ইসরাইলি রাষ্ট্র কর্তৃক ফিলিস্তিনের একটি ক্ষুদ্র খন্ড দখল করার পর এখন গোটা ফিলিস্তিন ভূখন্ড দখল করার স্বপ্নে বিভোর ইসরাইল। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের অপরিণামদর্শিতার কুফল হিসেবে ইহুদিদের নিকট কিছু ভূখন্ড বিক্রি করে ফিলিস্তিনিরা যে সর্বনাশ ডেকে এনেছিল তার খেসারত তাদেরকে দিতে হচ্ছে এখনও পদে পদে। বহিরাগত উদ্বাস্তু ইহুদিরা ইতোমধ্যেই মসলমানদের প্রথম কেবলা ‘মসজিদে আকসা’ (বায়তুল মোকাদ্দাস-জেরুজালেম) সহ ফিলিস্তিনের বিশাল এলাকা গ্রাস করে ফেলেছে এবং আমেরিকার সক্রিয় সাহায্য সমর্থনে জেরুজালেমকে ‘তেল আবিব’-এর পরিবর্তে রাজধানী বানানোর পাঁয়তারা করছে। শান্তিকামী বিশ^বাসী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার।
ইহুদিরা এমন এক খবিস জাতি, যাদের বিশ্বাস ঘাতকতা, চুক্তি ভঙ্গ এবং রসূলুল্লাহ (সা:) কে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্র ইত্যাদি দুষ্কর্মের বিবরণ সমস্ত সীরাত গ্রন্থে বিশদ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। খোদ কোরআনুল কারীমের সূরা হাশরে বনি নজির এবং সূরা আহজাবে বনি কোরাযার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা:) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পরিণতিতে রসূলুল্লাহ (সা:)-এর যুগেই তারা মদিনা হতে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত হয়ে যায়। যদিও ছিটেফোঁটা কিছু ইহুদি বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছিল, তাদের ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে; ‘আখরিজুল ইহুদা মিন জাযিরাতিল আরব’। অর্থাৎ ‘জাযিরাতুল আরব হতে ইহুদিদের বিতাড়িত করো’। তবে মদিনা হতে ইহুদিরা কিভাবে বিতাড়িত হয়েছে সে কাহিনী ইসলামি ইতিহাসের বিখ্যাত ঘটনা। কোরআনে মুসলমানদেরকে যাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রধান দুই জাতি হচ্ছে ইহুদি ও নাছারা (খ্রিস্টান)। যেসব মুসলমান এ নিষেধ অমান্য করেছে, মর্মে মর্মে তারা তার কুফল ভুগছে।
ইহুদিরা দাবি করে থাকে, মদিনা (পূর্ব নাম ইয়াসরব) তাদের পৈত্রিক শহর। তাই তারা মদিনা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখে থাকে, সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের এ দাবি ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন, তারা মদিনার আদিবাসী নয়, তবে প্রাচীনকালে ওরা এখানে এসে আবাদ হয়েছিল, ঐ প্রবাসীরা সেখানে বংশ বিস্তার লাভ করতে থাকে ব্যাপকভাবে, মদিনার আশপাশের এলাকাগুলো তারা অধিকার করে বসে এবং ঐ সব স্থানে তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুদৃঢ় দুর্গ নির্মাণ এবং তথায় বসবাস করতে থাকে। তারা বিপুল ধন-সম্পদের অধিকারী হয়। বংশবৃদ্ধির ফলে তাদের ২০-২১টি গোত্র সৃষ্টি হয়, তাই দূর-দূরান্ত পর্যন্ত তারা বসতি স্থাপন করে। ইহুদিদের মধ্যে ‘ফিতয়ুন’ নামক এক নেতা তৈরি হয়, সে ছিল বদ চরিত্রের অধিকারী, বিলাসী। সে সময় মদিনার আনসারদের নেতা ছিলেন মালেক ইবনে আজলান। লম্পট ইহুদি নেতা ‘ফিতয়ুন’ কে তিনি কৌশলে হত্যা করেন, মদিনায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির অবসান ঘটান। কিন্তু লম্পট ইহুদি সর্দার ফিতয়ুন’ এর বংশধরেরা মদিনায় বংশ বিস্তার করতে থাকে। মদিনায় বহিরাগত ইহুদিদের এটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
আরব ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, মদিনায় ইহুদিরা বংশগতভাবেই ইহুদি ছিল এবং তারা এ কারণেই আরবে আগমন করেছিল যে, হজরত মূসা (আ:) তাদেরকে ‘আমালেকাদের’ মোকাবেলা করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হলেও এতে ঐতিহাসিক প্রমাণাদির অভাব রয়েছে এবং এ তথ্য স্বীকৃত হয়ে যায়। ইহুদিরা সারা বিশে^ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু তারা তাদের নাম পরিবর্তন করেনি, তারা যেখানেই বসবাস করে সেখানেই তারা ইসরাইলি নাম রাখে। পক্ষান্তরে আরবের ইহুদিদের নাম বনি নজির, কায়নুকা, কোরায়জা, মারহাব, হারেস ইত্যাদি ছিল। এগুলো খাঁটি আরবি নাম, এরা স্বভাবত: ভীতু হয়ে থাকে, যার প্রমাণ কোরআনে বিদ্যমান। হজরত মূসা (আ:) যখন তাদেরকে যুদ্ধের জন্য যেতে বলেছিলেন, তখন তারা বলেছিল ‘ফাজহাব আনতা ওয়া রাব্বুকা, ফা কাতেলা, ইন্না হা হুনা কায়েদুন’। অর্থাৎ, ‘আপনি আপনার খোদার সঙ্গে যান এবং দু’জনেই যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকবো’। (মায়েদা)
বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণ হতে জানা যায় যে, বনি কোরায়জা ও বনি নজির আরব ছিল, পরে তারা ইহুদি হয়ে যায়। এরা ছিল ‘জুসাম’ গোত্রের লোক। মূসা (্আ:) এর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে এরা মূর্তি উপাসক ছিল। অত:পর সিরিয়া হতে স্থানান্তরিত হয়ে হেজাজে চলে আসে। এদুটি গোত্র ছাড়াও বনু কায়নুকা মদিনার আসে পাশে বসতি স্থাপন এবং বহু মজবুত দুর্গ ও টাওয়ার স্থাপন করে, যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বর্ণনার আলোকে প্রমাণিত যে, ইহুদিদের এই দাবি ভিত্তিহীন যে, তারা মদিনার আদিবাসী, বরং বলতে হয় উদ্বাস্তু হিসেবে মদিনায় এসে বসবাসের সুযোগ করে নেয়। ভাষার দিক থেকেও ওরা আরব নয়, তাদের ভাষা হচ্ছে, ইবরানি (হিবরু)। অবশ্য একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, লম্পট বদমায়েশ ইহুদি নেতা ফিতুয়ুনের বংশধর ইহুদি কারা?
তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান ‘তেল আবিব’ এর ইহুদিরা মদিনা দখলের স্বপ্ন দেখে বলে তাদের কৃতকর্মগুলির দ্বারা প্রমাণিত, ফিলিস্তিনের এক সিংহ ভাগ ভূখন্ড গ্রাস করে ফেলেছে এবং নতুন নতুন ফিলিস্তিনি এলাকায় বসতি স্থাপন করে চলেছে। ফলে এ উদ্বাস্তু ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসীদেরকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করে ফেলছে।
এ খবিস জাতির আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ও ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের ফলে খোদ রসূলুল্লাহ (সা:) এই অসভ্য জাতিকে মদিনা হতে চিরতরে বিতাড়িত করেছিলেন এবং পরবর্তীদের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছিলেন; ‘ইহুদিদেরকে আরব ভূখন্ড হতে বিতাড়িত করো’। ফিলিস্তিনিরা এ যাবত অনেক কিছু হারানোর পরও আরব মুসলমানসহ মুসলিম উম্মা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে ইহুদিদেরকে শায়েস্তা করা কঠিন হবে না। ফিলিস্তিনে বহিরাগত ইহুদিদের স্থায়ী বসবাসের স্থান নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন