এসএম রাজা, ঈশ^রদী (পাবনা) থেকে
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামের আলহাজ্ব শেখ সিরাজুল ইসলামের দ্বিতীয় পুত্র শেখ মো. শামীম হোসেন বেকারত্বের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে আজ তিনি একজন সফল পোল্ট্রি খামারি। পরিশ্রম ঈশ্বরদীর পোল্ট্রি শামীমের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। পোল্ট্রি খামার করে শামীম এখন স্বপ্নজয়ের পথে একধাপ এগিয়ে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শামীম দ্বিতীয়। এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াতে পড়াশুনা বন্ধ করে বেকারত্ব ও অভিশপ্ত জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন শামীম। ১৯৯৯ সালে ধানাইদহ ব্র্যাক অফিস কর্মকর্তার পরামর্শে নিজ বসতবাড়ির পাশে ২০০ মুরগী দিয়ে পোল্ট্রি খামার করে যাত্রা শুরু করেন। শামীম নিজে পোল্ট্রি খামার করে এলাকার অন্যান্য বেকার যুবকদেরও পোল্ট্রি খামারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। শামীম জানান, বাবা একজন চাকরিজীবী ছিলেন। পড়াশুনা বন্ধ হওয়াতে যুব উন্নয়ন থেকে পোল্ট্রি, গবাদী পশু ও মাছের উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে নিজ বাড়িতেই ১৯৯৯ সালে বয়লার জাতের ২০০টি মুরগী পালন শুরু করেন। সেই থেকে আর থেমে থাকেননি শামীম। মুরগী পালন করে তিনি গোটা বছরের পারিবারিক ডিমের ও মুরগীর চাহিদা মিটানোর পর ডিম ও মুরগী বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয়ও করতে থাকেন। এরপর থেকে তিনি তার খামারকে প্রসারিত করতে থাকেন। বর্তমানে তার খামারে ৬ হাজার ডিম দেয়া মুরগী রয়েছে। প্রতিদিন তিনি ৫ হাজারের বেশি ডিম বিক্রি করে থাকেন। শামীম বলেন, বর্তমানে খামারে ১২ জন নিয়মিত শ্রমিক রয়েছে। ডিম বিক্রির টাকা থেকে যে মুনাফা পেয়েছি তা দিয়ে বেশ কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেছি। ১০ হাজার মুরগীর একটি আধুনিক সেড নিমাণ, গাভি পালনের জন্য সেড নিমাণ, ভেটেনারী ওষুধের একটি দোকান, মুরগীর খাবার তৈরির একটি মিল ও বেশ কয়েকটি পুকুর বানিয়েছি। আবির পোল্ট্রি খামারের স্বত্ত্বাধিকারী শামীম হোসেন আরও বলেন, ইতোমধ্যে এলাকার বেকার যুবকদের নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ চালু করেছি। তিনি বলেন, মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব একটি বড় মাপের বায়োগ্যাস প্লান্ট করেছি এতে নিজের পরিবারের রান্নার সমস্ত কাজ করে থাকেন। এতে কিছুটা হলেও রান্নার কাজে দেশের গাছ, কাঠ বেঁচে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা এবং পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক বেকার ছেলে পোল্ট্রি ও গবাদী পশুর খামার করে তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শামীম বলেন, সহজ শর্তে কোন ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারি-বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে আগামীতে একটি হ্যাচারী ও বড় মাপের গবাদী পশুর খামার স্থাপন এবং খামারটি আরও বেশি প্রসারিত করতে চাই। একই সাথে এলাকার বেকার ছেলেদের আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এতে বেকারত্ব ঘুচবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করার জন্য আহ্বান জানান। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, শামীম হোসেন পোল্ট্রি খামার করে সে এখন ঈশ্বরদীর একজন মডেল খামারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামের আলহাজ্ব শেখ সিরাজুল ইসলামের দ্বিতীয় পুত্র শেখ মো. শামীম হোসেন বেকারত্বের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে আজ তিনি উপজেলার মধ্যে একজন সফল পোল্ট্রি খামারী। শামীম পোল্ট্রি খামার করে কিছুটা হলেও দেশের মুরগী ও ডিমের চাহিদা পূরণ করছেন। সেই সঙ্গে পুষ্টির যোগানও দিচ্ছেন। শামীম সঠিক পদ্ধতিতে পোল্ট্রি খামার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শামীমের দেখা দেখি ওই এলাকার যুবকদের মধ্যে পোল্ট্রি খামারের প্রতিযোগিতা চলে এসেছে। শামীম এভাবে তার পোল্ট্রি খামারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারলে আগামীতে আরও ভালো করবে বলে আশা পোষণ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন