শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

নবজাতকের অমৃত মাতৃদুগ্ধ

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

পৃথিবী, প্রকৃতি এবং মা হচ্ছেন জীবনদায়িনী। মাতৃত্ব জীবজগতকে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত করে রেখেছে সৃষ্টির মাধ্যমে। স্তন্যপায়ী প্রাণী মাতৃত্ব লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির দান মাতৃদুগ্ধের সৃষ্টি হয়ে নবজাতকের প্রথম খাদ্যের জোগান দেয়। একটি স্বাস্থ্যবান নবজাতকের এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সৃষ্টিকর্তার দান ‘মাতৃদুগ্ধ’-এর উৎপাদন হয়। যা একটি নবজাতকের জন্য অমৃত সমান।
শুদ্ধভাবে স্তন্যপান করালে শিশু এবং মা সুস্বাস্থ্য লাভ করতে সফল হতে পারেন। নবজাতককে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর অন্যতম উপাদান হচ্ছে স্তন্যপান। মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে পাওয়া পরিপুষ্টিতে জীবনের মানদন্ড উন্নত হয়, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে মানসিক এবং আবেগিকভাবে সবল করে তোলে। স্তন্যপান মা এবং শিশুর মধ্যে এক মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার সঙ্গে মায়ের রক্তহীনতা রোধ করে এবং স্তন ও ডিম্বাশয়ের কর্কট রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
স্তন্যপানের শুরু ঃ শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্তন্যপান করানোটা খুব জরুরি। কারণ য় জন্মের ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে শিশু সক্রিয় হয়ে ওঠে। য় জন্মের পরেই শিশুটির দুধ চুষে খাওয়ার ইচ্ছা বেশি হয়। য় স্তন থেকে বেরোনো প্রথম দুধের ফোটা ‘কলস্ট্রাম’ শিশুটিকে খাওয়ানো উচিত এবং এ প্রথম দুধের ফোটা শিশুটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। য় মা এবং শিশুর আবেগিক সম্পর্ক ভালো হয়। য় শিশুটি জন্মের পরে তাড়াতাড়ি স্তন্যপান করলে মায়ের প্রসবকালীন রক্তক্ষয় রোধ হয়।
উল্লেখ্য, জন্মের পর মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার এমনকি পানি খেতে না দিয়ে একমাত্র মায়ের দুধ (ঊীপষঁংরাব ইৎবধংঃ ঋববফরহম) খাওয়াতে বলা হয়। শিশুর মুখে মধু, মিছরির পানি, চিনির পানি, পানি ইত্যাদি দিলে শিশুটিকে আরো একটি বিপজ্জনক পথে ঠেলে দেওয়া হয়। প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ দেওয়াটা খুব জরুরি। এবং শিশু যখন চাইবে তখন স্তন্যপান করানো উচিত। সাধারণত দিনে কম করে আটবার স্তন্যপান করাতে হয়। ছ’মাস পর শিশুটিকে স্তন্যপানের সঙ্গে অন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে পড়ে।
পরিপূরক খাবার এবং স্তন্যপান ঃ ছয় মাস পর শিশুটিকে পরিপূরক আহারের সঙ্গে দু’বছর বা ততোধিক বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান করিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ য় মায়ের দুধ শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। য় মায়ের দুধ শিশুর ওজন কম হওয়া এবং সংক্রামক রোগের সম্ভাবনা কমায়। য় শিশুর ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগ ইত্যাদি হলেও স্তন্যপান করিয়ে যাওয়া উচিত। য় ছ’মাস পর শিশুকে ঘরে তৈরি খিচুড়ি, দুধ, সুজি ইত্যাদি খাবার স্তন্যপানের সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে যাওয়া উচিত। য় শিশুর খাওয়া এমন হওয়া উচিত যা সহজেই হজম হতে পারে এবং শক্তিবর্দ্ধক হওয়া চাই। সে সময় ডাল, চাল, শাক-সব্জি, তেল ইত্যাদি দিয়ে শিশুর খাবার তৈরি করা উচিত। য় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণও বাড়ানো উচিত, এবং মাছ-মাংস-ডিম ইত্যাদি খাবার দেওয়া উচিত।
বর্তমান সমাজে জনগণের মধ্যে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতার উপর কোনো দ্বিমত নেই বলে নিশ্চিত বলা যায়। কিন্তু সামান্য কিছু কথার উপর গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য আজ অনেক নতুন মা স্তন্যপানের প্রক্রিয়াটি থেকে বুকের সন্তানকে সম্পূর্ণ উপকার দিতে পারেন না। তাই স্তন্যপান করানোর মাধ্যমে মা এবং শিশু দু’ জনেই সুস্বাস্থ্য অটুট রাখার মহামন্ত্র আয়ত্ত করে জন্মের আধ ঘন্টার মধ্যে কলস্ট্রামযুক্ত দুধের মাধ্যমে শিশুটির স্তন্যপান নিশ্চিত করা উচিত।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল-০১৭১২১০০০৭৭

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন