বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইঁদুর-বেড়ালের রাজত্ব

শাহজালাল বিমানবন্দরে দু’বছরে ছয়বার অগ্নিকান্ড

হোসাইন আহমদ হেলাল : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা অকেজো


বিমানবন্দর হলো বাংলাদেশের প্রবেশ দ্বার। সারাবিশ্বের লোকজন বিমানবন্দরে নেমেই বুঝে যায় সে দেশের চালচিত্র। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অন্যতম সেই প্রবেশ দ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই অবহেলা? এর সঠিক এর উত্তর কেউ দিতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তায় নিয়োজিত কোন কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না। গত দু’বছরে ছয়বার অগ্নিকান্ডের ঘটছে ঘটেছে। শুধু বলা হচ্ছে বিদ্যুতের গোলযোগ। বিদ্যুৎ এর ওপর দোষ চাপিয়ে শেষ হচ্ছে তদন্ত। সঠিক তদন্ত নিয়ে ভাবছে না কেউ। অপরদিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সিসি ক্যামেরা মাসের পর মাস অকেজো হয়ে থাকছে। সে খবরও সংশ্লিষ্টদের কেউ রাখেন না। যাত্রী সাধারণসহ অনেকে বলছেন বিষয়টি রহস্যাবৃত। কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো বিমানবন্দরে ইঁদুর-বেড়ালের রাজত্ব। ইঁদুর-বেড়ালের যন্ত্রণায় সাধারণ যাত্রীরাও অতিষ্ট। এ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ ও লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইঁদুর-বেড়ালের উৎপাত বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
জানা যায়, গত রোববার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১নং টার্মিনালের ইমিগ্রেশন বিভাগের দ্বিতীয় তলায় হঠাৎ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুরো ভবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ নিয়ে গত দু’বছরে ছয়বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবার বলা হয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সিলিংয়ে আগুন লেগেছে। সেখান থেকে কালো ধোঁয়ার উৎপত্তি হয়েছে। ধোঁয়ার উৎস খোঁজার চেষ্টা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটে হঠাৎ ইমিগ্রেশনের পাশে কয়েকটি কক্ষ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা বিভাগ সব লোকজনকে টার্মিনাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। এ সময়ে দ্রæত টার্মিনাল জনশূন্য হয়ে পড়ে। হজযাত্রীসহ সিডিউল ফ্লাইটের যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী ঘটনার বিষয়ে ইনকিলাবকে জানান, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সিলিংয়ে আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সদস্য এয়ার কমান্ডার এম মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, আগুন লাগেনি। ধোঁয়া হয়েছিল। বিমান বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো। শাহ জালাল বিমানবন্দরের ওসি ইমিগ্রেশন জানান, পুরো বিমানবন্দর ধোঁয়ার ভরে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। আধা ঘণ্টার মত ইমিগ্রেশনের কাজকর্ম বন্ধ থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট বিমানন্দরের টার্মিনাল-১-এ আগুন লাগে; ওই সময় প্রায় দু’ঘণ্টা বিমান উড্ডয়ন, অবতরণসহ টার্মিনালের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর এ বিমানবন্দরে আগুন লাগে। সে সময়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য ছিল বন্ধ। এ নিয়ে গত দু’বছরে বিমানবন্দরে ছয়বার আগুন লাগলেও একবারও সঠিক তদন্ত করা হয়নি। বারবার বিদ্যুৎ-এর গোলযোগের অভিযোগ আনা হচ্ছে, এটি রহস্যজনক। এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে ভুক্তোভোগীরা। একই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড’ শাখার সব কটি সিসি ক্যামেরা গত ৩ মাস যাবত অকেজো হয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানেন না তার শাখার সব সব ক’টি সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে রয়েছে। এই বিষয়টিও রহস্যাবৃন্দ।
জানা যায়, এ বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার পর খুঁজে পাওয়া অসংখ্য লাগেজ সংরক্ষণ করা হয় কাস্টমস হলের ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড’ শাখায়। গুরুত্বপূর্ণ এ শাখার কোন জিনিস যাতে হারিয়ে বা চুরি না হয় তার জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ৩ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত এ শাখার সব ক’টি ক্যামেরা অজ্ঞাত কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ সুবাধে যাত্রীদের খোয়া যাওয়া লাগেজ এখান থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ ওঠেছে, বিমানবন্দরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে সংঘবদ্ধ একটি চক্র এ শাখা থেকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মালামাল। বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়াও সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করে যেখানে এসব সংঘবদ্ধ চোরদের ধরা যায়নি, সেখানে দীর্ঘদিন সিসি ক্যামেরা অকেজো থাকার বিষয়টি কি হতে পারে এটি কারো জানার অপেক্ষা রাখছে না। এছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সিসি ক্যামেরা রহস্যজনকভাবে অকেজো হয়ে রয়েছে। বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট হওয়ার পরও এগুলো সংস্কারের জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বারবার তাগিদ দেয়া হলেও তারা কর্ণপাত করছে না। তিনি আরও বলেন, পুরো বিমানবন্দরে ইঁদুর-বেড়ালের রাজত্ব। এসব ইঁদুর-বেড়াল বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার তার কেটে ফেলছে। এটি সূত্র জানায়, অতিসম্প্রতি কাতার থেকে আসা এক যাত্রীর লাগেজ কেটে ল্যাপটপসহ মূল্যবান মালামাল খোয়া যায়। সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের কাছে অভিযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে তদন্তে গেলে ধরা পড়ে ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড’ শাখার সবকটি সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে আছে। যার কারণে আর্মড পুলিশ যাত্রীদের মালামাল কারা চুরি করেছে, তাদের শনাক্ত করতে পারছেন না। এ শাখার মালামাল অবাধে চুরি হলেও কেউ ধরতে পারবেন না চোরচক্রকে। সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-পরিচালক বেনি মাধব বিশ্বাস ইনকিলাবকে জানান, এ শাখার ক্যামেরা অকেজো এটি তিনি জানান না। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী যাত্রী জানান, পুরো বিমানবন্দর অরক্ষিত। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের কেউ কেউ অপরাধের সাথে জড়িত। এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা না করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে পারে বিমানবন্দর। যা বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
১৭ জুলাই, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
Aie shob khobor poray ROBIN HOOT hotay ecca koray.
Total Reply(0)
Nazmul Kabir Chowdhury ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৫২ পিএম says : 0
গতকাল এক ভয়াবহ হয়রানীর শীকার হই আমি ঢাকা এয়ারপোর্টের শুল্ক গোয়েন্দাদের দ্বারা। তল্লাশীর নামে প্রায় দেড় ঘন্টা তারা আমাকে চরম অপমান ও হয়রানী করে। এইসব শয়তানদের শায়েস্তা হওয়া খুবই জরুরী। কারো কোন সাজেসন থাকলে প্লিজ হেল্প করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন