আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আসতে নানান ধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সুযোগ পেলেই নানান কৌশলে নিজেকে জাহির করেন তারা। কেউ জনসমাবেশগুলোতে কর্মীবাহিনীর বিশাল বহর নিয়ে, কেউ এক রকমের পোষাক পড়ে, কেউ হাতি-ঘোড়া নিয়ে আসেন দলীয় প্রধানকে মুগ্ধ করতে। নানান ব্যতিক্রম আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চান। আর সকলের লক্ষ্য এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের টিকিট নিশ্চিত করা।
আগামী ২১ জুলাই দল ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত গণসংবর্ধনাকে জনসমুদ্রে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। দলীয় কর্মসূচি হলেও এদিন সরকারের জনপ্রিয়তার জানান দিতে পুরো মাঠ লোকে লোকারণ্য ঘটানো হবে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের নানা আয়োজনের মধ্যে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য্য বাড়াতে থাকছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নানান আয়োজন।
দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও এ নিয়ে নিচ্ছেন শো-ডাউনের প্রস্তুতি।
ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা সফল করার লক্ষে ব্যতিক্রম ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। জয়বাংলা স্লোগানে প্রায় ২হাজার ছোট-বড় নৌকা আর নেতাকর্মীদের হাতে হাতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূল চিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন ফ্যাস্টুন-ব্যানার এবং দুই শতাধিক পিকাপভ্যান সাজিয়ে সংবর্ধনায় যোগ দেবেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাতি-ঘোড়ার সাথে নৌকা নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা স্থান সোহরাওয়াদী উদ্যানে উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নেতৃত্বে সোনারগাঁও থেকে যোগ দেবে ১০ হাজার নেতাকর্মী। এ লক্ষে প্রতিদিনই সোনারগাঁও নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতদাকর্মীদের নিয়ে বিশেষ কর্মী সভা করছেন তিনি। বাস, মাইক্রোবাস এবং ঘোড়া নিয়ে নেতাকর্মীরা যোগ দেবেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসবেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।
২১ জুলাইয়ের সংবর্ধনা সফল করতে আগেরদিন রাজধানীর ফকিরাপুলে প্রায় অধিকাংশ আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়েছেন চাঁদপুর-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রেদওয়ান খান বোরহান। ঐদিন ব্যতিক্রম কিছু করে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে আসতে চান তিনি। রেদওয়ান খান বোরহান ২১ জুলাই চাদপুর থেকে ঢাকায় আগত নেতাকর্মী ও বসবাসরত প্রবাসিদের নিয়ে মিছিলে মিছিলে মুখরিত করতে চান প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা স্থান সোহরাওয়াদী উদ্যান।
ঢাকা-৬ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সোহরাওয়াদী উদ্যানের চারপাশে শোডাউন দিবেন। মেহেরপুর-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ কে এম কামরুজ্জামানসহ আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ উদ্যোগে সারাদেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সফল করতে সোহরাওয়াদী উদ্যানে হাজির হবেন।
এদিন ঢাকার পাশর্^বর্তী মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেবে। বাস, ট্রাক ও রেলপথে নেতাকর্মী ঢাকায় এসে বর্ণিল মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে সমবেত হবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সংসদ সদস্য ছাড়াও সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেবে। তাই পুরো জনসমাবেশ প্রাণবন্ত উয়ে উঠবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা।
গনসংবর্ধনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ জুলাই গণসংবর্ধনাটি স্মরণীয় একটি সভা হবে। ঢাকায় সাজ সজ্জা করা হবে। বিকেল ৩টা থেকে ওই অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানমালায় আধা ঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকবে। এছাড়া ১৮ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনার সারা জীবনের ছবির প্রদর্শনী হবে। তার লেখা সব বইও সেখানে প্রদর্শন করা হবে।
উল্লেখ্য, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং সর্বশেষ ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি অর্জন করায় দলনেতা শেখ হাসিনার এসব কৃতিত্বকে স্মরণীয় করতে গণসংবর্ধনার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে মঞ্চ, মাঠ ও আশপাশের সাজসজ্জা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমাবেশে সার্বিক নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ইনকিলাবকে বলেন, ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঐদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিশাল কর্মীবহর পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেবকের দায়িত্ব পালন করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ ইনকিলাবকে বলেন, দুই মহানগরসহ আশপাশের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহন থাকবে চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেন, ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া গণসংবর্ধনায় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ একটা সমাবেশে রুপ দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন