শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জেআরসি বৈঠক ও তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলবেন

তিন দিনের সফরে দিল্লী যাবেন পররাষ্ট্র সচিব

প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : তিস্তার পানি ভাগাভাগিসহ অভিন্ন নদীর সমস্যা তুলে ধরতে তিন দিনের সফরে দিল্লী যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। সেখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) এর বৈঠক ডাকার ব্যপারে ভারতকে তাগিদ দেবেন। দিল্লীর উদাসীনতায় দীর্ঘ ছয় বছর ঝুলে রয়েছে জেআরসি’র ফিরতি বৈঠকটি। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে দেশের নদ-নদীগুলোতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক দিল্লী যাবেন এবং ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি ছাড়াও তিনি রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ভারতীয় কোম্পানির বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে বিনিয়োগ, বিএসএফ’র গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
পরাষ্ট্র সচিবের ভারত সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পররাষ্ট্র সচিব ভারত সফরে গেলে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়টি থাকবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ভারত সফরে যেয়েও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর বিষয় নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করেছেন।
এদিকে, চলতি শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেশের প্রধান প্রধান সকল নদ-নদী ধুঁকছে নাব্যতা সঙ্কটে। অসংখ্য নদী মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। পদ্মা, যমুনা, মেঘনাসহ দেশের সকল নদ-নদীর নৌ-পথ সচল রাখা হয়েছে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে। গড়াই, ফেনী, মুহুরি, সুরমা, কুশিয়ারা ও তিস্তা নদীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এসব নদী নির্ভর সেচ প্রকল্পগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। পানির অভাবে তিস্তা, জিকে, মহুরি, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে এবার সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির এই ভয়াবহতা নিরূপণে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় একেবারেই ব্যর্থ। যার চরম মূল্য দিচ্ছে এদেশের কৃষকরা।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৪শ’ কিলোমিটার নদী সীমান্ত রয়েছে। এসব নদী সীমান্তের অধিকাংশ জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিলেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাঁধার কারণে প্রতিরোধ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে, মহানন্দা, সুরমা, কুশিয়ারা, মহুরি, ফেনী, তিস্তা, ইছামতি ও পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে দেশের মূল্যবান ভূমি ভারতীয় অংশে চলে যাচ্ছে। ভারতীয় অংশে জেগে উঠা ভূমি ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থাপন করলেও এতে দিল্লীর সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত নদী সংক্রান্ত সমস্যাদি সমাধানে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের উপরই গুরুত্বারোপ করেছেন।
জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ ৩৭তম বৈঠকটি বসেছিল ২০১০ সালে মার্চে দিল্লীতে। আর ৩৮তম বৈঠকটি হওয়ার কথা ঢাকায়। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায় জেআরসি’র ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। ওই সময় ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্ত প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দিল্লীর পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করা হয়। কেন এবং কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল-তার বিশেষ কোনো কারণও বাংলাদেশকে জানানো হয়নি।
পরবর্তিতে ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি পাঠায়। এর জবাবে ভারতের পানিসম্পদ ও নদী উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আপাতত জেআরসি’র বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এই চিঠিটি পাঠানো হয়। ওইসময় পানিসম্পদমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উমা ভারতী জানান, বর্তমানে ভারতের সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছে। পরবর্তীতে পারস্পরিক সুবিধা মতো সময়ে বাংলাদেশে সফরে আসবো। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৭ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি তার একটি প্রমাণ।
পানি সম্পদমন্ত্রীকে এমন চিঠি দিলেও জেআরসি’র বৈঠকের দিনক্ষণ আজও জানাননি উমা ভারতী। ফলে জেআরসি’র বৈঠক না হওয়ায় দু’দেশের মধ্যে আঁটকে আছে ৫৪টি অভিন্ন নদী সংক্রান্ত অনেক অমিমাংসিত সিদ্ধান্ত।
দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেআরসির বৈঠকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়টি। বিশেষ করে জেআরসি’র বৈঠক না বসার অর্থ তিস্তা চুক্তি নিয়ে কালক্ষেপণ করা। চুক্তি না থাকার কারণে তিস্তার নব্যতা সঙ্কট মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, তিস্তায় যে হারে পানি কমে আসছে, ্এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তীব্র পানি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। তিস্তায় ভয়াবহ পানি হ্রাসের ফলে হাজার হাজার বিঘা জমিতে সেচকাজের ব্যাঘাত ঘটবে।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা প্রকল্পে সেচযোগ্য জমির পরিমান ১০ হাজার হেক্টরে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া নীলফামারীর তিন উপজেলার বাহিরে তিস্তার সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ তিস্তায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ থাকলে সেচযোগ্য জমি দাঁড়াতো ৬৬ হাজার হেক্টরে। গেল বছর তিস্তায় সর্বনি¤œ পানি ছিল ২৪০ কিউসেক। এবার তিস্তায় সর্বনি¤œ পানি কত পাওয়া যাবে-তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসনসহ নদী অববাহিতার কৃষকরা।
তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে সরকার ১৫ বছর মেয়াদি একটি অন্তবর্তিকালীন চুক্তিতে উপণিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন। অপরদিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসলেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ভারতের সাবেক এবং বর্তমান দুই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেই তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে উপণিত হওয়ার আশ্বাস দেয়া হয় এবং বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সাথে আলেচনা করবেন বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়।
গেল বছর ২১ ফ্রেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঢাকা সফর করে গেছেন। তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন-দেশে ফিরে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে কেন্দ্রের সাথে কথা বলবেন। কিন্ত তিস্তার পানি চুৃক্তির ব্যপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন