মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ম্যারাডোনার হৃদয়ে ফিলিস্তিন

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৮, ৬:০৪ পিএম

‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের এই ছোট্ট ব্যবচ্ছেদটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ গভীর। এই যেমন ধরুন, ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে প্রায় সপ্তাহ হতে চললো। তবে এখনও এই ঘোর থেকে বেরুতে পারছে না আয়োজক রাশিয়া, না পারছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণ, এমন কি বের হতে পারছে না আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও। প্রতি দিনই এই খবর সেই খবরের ভিড়ে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ঠিকই স্থান করে নিচ্ছে শিরোনামগুলোয়। এবার ‘ম্যারাডোনার হৃদয়ে ফিলিস্তিন’- নামের শিরোনামে আবারও আলোচনায় রাশিয়া।


গত ১৫ জুলাই রাজধানী মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ফাইনালে এবারের চ্যাম্পিয়ন পেয়ে গেছে বিশ্ব। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ফুটবলের রাজমুকুট নিজেদের মাথায় তুলেছে ফ্রান্স। সেই ম্যাচেরই একটি খবর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশ্বমিডিয়ায়। এই সংবাদের সঙ্গে যুক্ত নামটিই যে এই আকর্ষণের কারণ- ডিয়াগো ম্যারাডোনা। তার সঙ্গের নামটি সেই আকর্ষণকে নিয়ে গেছে আরো উঁচুতে- মাহমুদ আব্বাস।


ফাইনাল দেখতে বিশ্বের প্রায় দশটি দেশের প্রসিডেন্টদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøদিমির পুতিন। সেই তালিকায় ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও। আর ভেনিজুয়েলা সরকার পরিচালিত নিউজ নেটওয়ার্ক চ্যানেল টেলিসুর’র ভাষ্যকার হিসেবে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ কভার করেছেন ম্যারাডোনা। রোমাঞ্চকর ঐ ফাইনাল শেষেই দুই জগতের দুই মানুষকে নিয়ে আসে এক কাতারে। যেখানে ‘ফিলিস্তিন আমার হৃদয়ে’ বলে আব্বাসকে জানিয়েছেন ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি ম্যারাডোনা।
ব্যাস! তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো উঠে পড়ে লেগেছে এই খবরের গভীরে প্রবেশ করতে। অনেকেই এর ভেতরে রাজনৈতিক যোগসাজশের গন্ধ খোঁজার চেস্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কারণটা স্পষ্ট করতে আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম পেইজে প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে আলিঙ্গনের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ফিলিস্তিন আমার হৃদয়ে, আমিও ফিলিস্তিনি’।


ঘটনাটি আরব ও ইসরায়েলি মিডিয়ায় তুমুল আলোচনার ঝড় তোলে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। যাতে কেউ ঘেলা পানিতে মাছ শিকার না করতে পারেন পরক্ষণেই একটি ভিডিও আপলোড করেন ম্যারাডোনা। যেখানে আব্বাসের সাথে কোলাকুলি করে ম্যারাডোনাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রেসিডেন্ট আব্বাসের একটা দেশ আছে এবং সেখানে তার অধিকার আছে। এই মানুষটা ফিলিস্তিনে শান্তি চায়।’ ম্যারাডোনা ফিলিস্তিনের আন্দোলনের ব্যাপারে পূর্ণ সহনুভুতিশীল। ম্যারাডোন ফিলিস্তিনকে অতি দ্রুত দেশ হিসেবে স্বাধীনতা দেয়ার আহবান জানান। এসময় মাহমুদ আব্বাস ম্যারাডোনাকে ধন্যবাদ জানান এবং তাকে একটি চিত্রকর্ম উপহার দেন। যেখানে শান্তির প্রতীক কবুতর ফিলিস্তিনের জলপাই ডালে বসে আছে।


এর আগেও ফিলিস্তিনের সঙ্গে ম্যারাডোনার সম্পর্কের খবর শোনা গিয়েছিল। ২০১২ সালে ম্যারাডোন বলেছিলেন, ‘আমি ফিলিস্তিনের এক নম্বর সমর্থক। আমি তাদের সম্মান করি, তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই।’ ২০১৪ সালে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ফুটবল ইশ্বর বলেছিলেন, ‘ইসরাইল ফিলিস্তিনের সাথে যা করছে তা লজ্জাজনক।’ এ বছরের গোড়ার দিকে শোনা গিয়েছিল এ আর্জেন্টাইন তারকা ফিলিস্তিন ফুটবল টিমের সাথে কোচ হিসেবে যোগ দিবেন। যদিও পরবর্তিতে আর হয়নি।


এই ফুটবল তারকা বিশ্বের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। এছাড়া তার একটি গোল ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। এবছর ইসরাইলের সাথে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল আর্জেন্টিনা। যার কারণে বিশ্বজুড়েই সমাদৃত হয়েছিল ম্যারাডোনা-মেসির দেশ। এবার মুসলিম বিশ্বের নির্যাতিত এই দেশিটির পাশে দাঁড়িয়ে সেই মানবতারই নতুন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন