বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে টানাপড়েন

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে পঞ্চাশের দশকে নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়াশিল্প স্থানান্তর করা হয় হাজারীবাগে। দূষণের মাত্রা বাড়ায় এরপর রাজধানী থেকে এই শিল্প সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় সাভারে। তবে গেল এক দশকেও এর বাস্তবায়ন নেই। সরকার ও ট্যানারি মালিকদের পাল্টাপাল্টি যুক্তি দেয়া চলছেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে সঠিক কোন কর্মপরিকল্পনা নেই; তাছাড়া এখনও শিল্প উপযোগী হয়ে ওঠেনি সাভার। আর কর্তৃপক্ষের দাবি, শেষ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ। নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়া শিল্প হাজারীবাগে স্থানান্তরিত হয় পঞ্চাশের দশকে। এরপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যেমন বেড়েছে এই শিল্পের বয়স, তেমনি এর ট্যানারি বর্জ্যে ছাড়িয়েছে দূষণের মাত্রাও। এমন অবস্থায় নদী ও নগরীর বিশুদ্ধতার গল্প বাঁচিয়ে রাখতে, বিংশ শতাব্দির শুরু থেকেই চেষ্টা চলে হাজারীবাগকে সাভারে স্থানান্তরের। তাদের মতে, একাধিকবার সময়ও বেঁধে দেয়া হয়, তবু পরিবর্তন আসেনি সেই দৃশ্যপটের। অবশেষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। কোন কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না হাজারীবাগে। তবে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, সাভারে এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। তাদের দাবি, আলটিমেটামে নয়, সমাধানে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপের। এক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুমের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। তিনি বলছেন, তারা প্রস্তুত, এখন অপেক্ষা কেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। সিইটিপি নির্মাণকারী চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার বক্তব্যও একই। প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন আবদুল কাইয়ুম। পাশাপাশি জানালেন, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার পরও, যেসব প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান নয়, বাতিল করা হতে পারে তাদের বরাদ্দকৃত প্লট।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে দেশের চামড়াশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাঁয়তারা চলছে অভিযোগ করে মাহবুব আলম বলেন, আমরা যদি চামড়া কিনতে না পারি তাহলে বিদেশি ক্রেতারা পাশের দেশে চলে যাবে। সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে কেন যাচ্ছেন না জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, কারখানার মালিক বাইরে আছেন। এ ছাড়া চামড়াশিল্প নগরীতে এখনো গ্যাস যায়নি। নেই ড্রেন, বর্জ্য-পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। অনেককে এখনো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই ট্যানারি বন্ধ হলে মালিক নয়, শ্রমিক-কর্মচারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।
ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়ার কারণ হিসেবে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, কারখানার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি না হওয়ার কথা জানান অ্যাপেক্স ট্যানারির মালিক আবদুল কাদির।
ট্যানারি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে আবদুল কাদির বলেন, যেখানে ১০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে সেখানে সরকার তো ২০ টাকাও ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরে এখনো ট্যানারি স্থানান্তরের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পারেনি সরকার। সেখানে পানি, ড্রেন ব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, গ্যাসের ব্যবস্থা কিছুই নেই। সাভারে গিয়ে আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়ব। এ ছাড়া সেখানে সব মালিকের মধ্যে এখনো প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কাজ হয়নি।
তবে ট্যানারির মালিকদের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন, শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা মিডিয়ার মাধ্যমে হাজারীবাগে থাকার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। শিল্পসচিব বলেন, সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থাপনের সুযোগ-সুবিধা নেই এটা মিথ্যা কথা। কেউ তার কারখানা সাভারে নিক, দেখুন সব সুবিধা দিতে পারি কি না। আর যারা এখনো প্লট বরাদ্দ পাননি, তাদের এই ব্যবসা করাই উচিত না। কারণ তারা প্লটের জন্য আবেদনই করেননি।
কারাখানা স্থানান্তরে ট্যানারির মালিকদের সময় দেয়ার বিষয়ে শিল্পসচিব বলেন, আমরাও তাদের সময় দেব। কিন্তু তার আগে তারা সাভারে গিয়ে ভবন নির্মাণ করুক। আমাদের দেখাক যে তারা সাভারে যেতে আগ্রহী। রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা ও বুড়িগঙ্গা দূষণ ঠেকাতেও ট্যানারিগুলো স্থানান্তর জরুরি বলে জানান শিল্পসচিব। তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি ব্যবসা বন্ধ না করতে পারলে কখনোই বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা যাবে না।
তবে, এতো কিছুর পরও কবে সাভারে স্থানান্তর চামড়া শিল্প, তা এখনো নির্দিষ্ট নয়। যদিও শিল্প মন্ত্রণালয় সবশেষ বক্তব্য, চলতি মাসের মধ্যে স্থানান্তর হবে এই শিল্প।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন