বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

বন্যানিরোধ ও নদী বাঁচাতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

মোহাম্মদ আবু তাহের | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মৌলভীবাজার জেলা একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মৌলভীবাজার পৌর এলাকারও অনেক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। সিলেট বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলে অনেক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। মানুষের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এধরনের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়া অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অল্প সময়ে যে কোন স্থানে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উজানে ভারী বৃষ্টিপাত, নদীসমূহের ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া- নদনদীর প্রতিরক্ষা কার্যসমূহ নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রায় প্রতিবছরই মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধের কোথাও না কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। ফসলের জমি, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। এ বছরও বর্ষার শুরুতেই মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হয়েছে। মৌলভীবাজার শহর রক্ষা বাঁধ ছাপিয়ে শহরে পানি ঢুকেছে। বন্যার সময় আতংকের শহরে পরিণত হয়েছিল মৌলভীবাজার। শহরের পশ্চিম প্রান্তে বড়হাট এলাকায় এবং পূর্বে কদমহাটা এলাকায় মনুনদীর বাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। মনু ও ধলাই নদের বাঁধ ভেঙ্গে মৌলভীবাজার জেলার প্রায় তিন লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার বার বন্যা কবলিত হয়ে অনেক মানুষকে ভিটেবাড়ি হারাতে হচ্ছে। প্রতি বছর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মনু নদীতে পলি জমেছে। এটি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই বাঁধ ভাঙ্গছে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে বড় বাঁক রয়েছে। সেখানে স্রোত বেশী থাকে। স্রোতের কারণে বাঁধে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। বাঁধ কেটে নদী সোজা করলে পানি দ্রুত ভাটির দিকে নেমে যাবে। মানুষ ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
বন্যা আসলে বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠির কষ্টের সীমা থাকে না। ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেলে গবাদিপশু পালনের জায়গাটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। দিন মজুররা কোন কাজ পায় না। নিরাপদ পানিরও সংকট দেখা দেয় যার কারণে পানিবাহিত রোগেরও প্রকোপ দেখা দেয়। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার মিলে ৫৭টি আন্তঃসীমান্তীয় নদী রয়েছে। এর বাইরে আরও অনেক আন্তঃসীমান্তীয় নদী রয়েছে। যখন অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলা হয় তখন ৫৭টি নদীর কথাই বলা হয়। বাংলাদেশের উজানে ভারত। ফলে ভারতের অনেক নদীর প্রবাহ ভাটির দিকেই নেমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। দেশে কিংবা দেশের বাইরে উজানে কোন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত কিংবা ভয়াবহ বন্যা হলে সেই তথ্য সময় মতো জনগণ জানতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধির কারণে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় হিমবাহ গলে যাওয়ার হার দ্রæত বৃদ্ধির কারণেও ঘন ঘন বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নদ-নদী আমাদের বৈচিত্রময় সম্পদের এক অফুরান ভান্ডার। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। অসংখ্য ছোট-বড় নদ-নদী দেশের চিরায়ত সৌন্দর্যকে দিয়েছে রূপময়তা। নদী হলো বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন ধরে রাখতে হলে নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে বেশীর ভাগ নদী এখন মৃত প্রায়। কিছু সংখ্যক পরিবেশ ও সভ্যতা বিরোধী মানুষের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশের নদীগুলো গ্রাস করছে। তারা নদী গ্রাস করেই ক্ষান্ত হচ্ছে এমন না। নদীর মধ্যে বর্জ্য ফেলে মানুষের জীবনকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভরাট ও নদীর মৃত্যুই দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। দেশের কৃষি, অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় বাংলাদেশে একদা ছোট-বড় মিলে নদীর সংখ্যা ছিল সাতশত। খাল ও বিল ছিল অসংখ্য। সাতশত নদ ও নদীর মধ্যে এখন কোন রকম টিকে আছে প্রায় দুইশত। এসব বেশির ভাগ নদীই শুষ্ক মৌসুমে পানিশুণ্য হয়ে পড়ে। কিছু কিছু নদী একবারেই মরে গেছে। বহুনদী, খাল, ঘরবাড়ি ও স্থাপনার নিচে পড়ে গেছে। এককালের উম্মত্ত পদ্মা নদীতেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এর মূল কারণ হলো বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য সংকটের শিকার। মানবদেহের শিরা-উপশিরার মতোই বাংলাদেশের বেঁচে থাকার কাজ করে এসব নদ-নদী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ঢাকার হৃতপিন্ড বলে পরিচিত বুড়িগঙ্গার পানিদূষণ এতটাই মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে যে, এখানে মাছ তো দূরের কথা পানির কীট-পতঙ্গও বাচঁতে পারেনা। বুড়িগঙ্গার বক্ষে বাতাসেও এখন দুর্গন্ধ। শিরা-উপশিরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে মানবদেহকে যেমন অসুস্থ করে তোলে সেরকম অবস্থাই হয়েছে আজ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের। মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই নদী সহ সিলেটের অন্যান্য নদীগুলোও নাব্যতা সংকটের শিকার। বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য মৌলভীবাজারের সচেতন মানুষ আন্দোলন করছে, অনলাইন মিডিয়া রেডটাইমস এর উদ্যোগে গত ১ জুলাই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মনু ও ধলাই বাঁচাও’ আন্দোলন শুরু হয়েছে। ৪ জুলাই মনু ও ধলাই পাড়ের জনগোষ্ঠির ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়েছে। ‘মনু ও ধলাই নদী খনন চাই’ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে দেশ ও বিদেশে মৌলভীবাজারের মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এই গ্রুপ থেকে বন্যা সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে সেমিনারও করা হয়েছে। পাউবো সূত্র থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীকে (নকশা) প্রধান করে ১১ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের সর্বস্তরের মানুষ উক্ত কমিটির কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায়। মানুষ বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
১। নদী ধ্বংসের কারণসমূহ সনাক্ত করা জরুরি।
২। নদীর নাব্য রক্ষার জন্য ড্রেজিং এবং পুনঃখনন জরুরি।
৩। খাল খনন কর্মসূচী চালু করা যেতে পারে।
৪। হেজেমজে মজিয়া যাওয়া খাল, ছোট-ছোট শাখা নদী খনন করা হলে দেশের প্রধান নদী প্রণালীতে এর প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে।
৫। শুকিয়ে যাওয়া নদী এবং নদীর পাড় দখল করা থেকে মুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬। বর্জ্য পদার্থ নদীতে ফেলা বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭। নদীর তীরে সুইচ গেইট এবং নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল খনন করা যেতে পারে।
৮। নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিলে মানুষকে সচেতন করার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়
৯। বর্ষা মৌসুমে নদীতে যে অতিরিক্ত পানি আসে সে পানি কিভাবে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের কাজে লাগানো যায় দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
১০। নদী ও খাল রক্ষার জন্য এবং নাব্যতা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।
১১। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও পরিবেশ বিধিমালা ১৯৯৭ এর কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।
সত্তরের দশকে খাল খনন কর্মসূচীর মাধ্যমে হেজেমজে যাওয়া অনেক ছোট নদী ও খালের পূনর্জীবন সম্ভব হয়েছিল। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। নদী ও খাল পুনঃখনন কর্মসূচী চালু থাকলে ভয়াবহ বন্যায় দেশের মানুষ এত ক্ষতিগ্রস্থ হতো না। এজন্য খাল খনন কর্মসূচী আবারও চালু করা যেতে পারে। নদ-নদী ও খাল-বিলের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এছাড়া নির্বিচারে বনসংহার ও ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। অসংখ্য গাছপালা, নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এখনই রুখে দিতে না পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া চরম বিপর্যয়ের সম্মুখিন হবে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খড়া এবং প্রাকৃতিক নানা প্রতিকুলতার কারণে শুধু বাংলাদেশেই ৩ কোটি মানুষ নতুন করে ছিন্নমূল হবে। বৃদ্ধি পাবে গণদারিদ্র। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকেই মূল ভূমিকা রাখতে হবে, পাশাপাশি পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সংগঠন, সকল প্রকার গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন, রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি। মনে রাখতে হবে, স্যাটেলাইট বা উপগ্রহের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। মহাকাশেও ঘোষিত হয়েছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশকে আশা ও উদ্দীপনার এক আলোকবর্তিকা হিসেবে মতামত ব্যক্ত করেছেন। অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে বন্যা সমস্যার সমাধান করতেই হবে। অন্যথায় দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে সবার আগে মৃত এবং মৃতপ্রায় নদীগুলোর হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা জানি, নদী, খাল পুনরুদ্ধারে এবং বনায়নের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এখনই এটিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের সকল সচেতন মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। নদ-নদীর পানি দূষণ এবং নদীর পার দখল নেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই এ আত্মঘাতি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যথাযথ আইনের প্রয়োগ আবশ্যক। প্রয়োজনে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের কোন অপূর্ণতা থাকলে তারও নিরসন করা দরকার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনারও গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত এর মধ্যে বাস্তবভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনে যে সমস্যা এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে একা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করাও সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উদ্যোগ একান্ত আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, নদীর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আমাদের এই বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত আর একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশের নদ-নদীতে প্রতি বছর গড়ে জমা পড়ছে চার কোটি টন পলি। দিনের পর দিন পলি জমা হয়ে ভরাট হয়ে গভীরতা ও নাব্য দুটোই হারাচ্ছে নদী। ফলে নৌপথ ছোট হয়ে আসছে। স্বাধীনতার আগে দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজারেরও নিচে। তাই নদী বাঁচানোর জন্য খনন এবং তীর বাঁধার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, অধিক হারে পলি জমা, সংরক্ষণে অবহেলা, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, জলবায়ু পরিবর্তন, খনন যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেছেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নৌপথ সংকুচিত হচ্ছে। বিঘ ঘটছে নৌপথের স্বাভাবিকতা। দুর্ঘটনায় পড়ছে নৌযান। নদনদীর স্বাভাবিক গতি রক্ষায় নৌপরিবহন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
লেখক: ব্যাংকার, কলামিস্ট ও গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন