দশ দিন হলো বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। এরপরও ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। তবে তা মাঠের ফুটবলের কারণে নয়, মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে। ব্যাপারটা বাংলাদেশের জন্যে যতটা না উদ্বেগের তার চেয়ে বেশি লজ্জার। বিশ্বকাপকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে ফিফা ফ্যান আইডি প্রান্ত অনেকেই। তাদের মধ্যে রয়েছে দুই শতাধীক বাংলাদেশী যুবকের নাম।
তিন হাজার নয়শজন ফিফা ফ্যান আইডি প্রাপ্ত বাংলাদেশী রাশিয়া ভ্রমণের সুযোগ পায়। এদের মধ্যে অধিকাংশই বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে দেশে ফিরেছেন। অনেকে ভøাদিমির পুতিন সরকারের দেওয়া বিশেষ সুবিধা (ফ্রি ভিসা) কাজে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাশিয়াময়। অনেকে আবার এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে পার্শবর্তী দেশ দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের সংখ্যা দুই থেকে তিনশ বলে সূত্র থেকে জানা গেছে। ছোট ছোট বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা বিভিন্ন সিমান্তরেখায় অবস্থান করছে। এরপর স্থানীয় দালালের মাধ্যমে তারা বেলারুশ, পোল্যান্ড, ফিনল্যন্ড ও ইউক্রেনে প্রবেশের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার কোন সিমান্ত প্রাচীর বা ইমিগ্রেশন নেই, পুরোটাই উন্মুক্ত।
এই সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়ে সম্প্রতি ৩০ জন বাংলাদেশি বেলারুশ পুলিশের কাছে আটক হয়েছেন। মস্কো প্রবাসী এক বাংলাদেশী সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্থানীয় দালালদের দুই গ্রুপের মাঝে অর্থ লেন-দেন নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ার পর একে অপরকে ফাঁসানোর প্রতিহিংসার জের ধরে উক্ত সংখ্যক বাংলাদেশী গ্রেফতার হন বলে জানা গেছে।
উক্ত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্তৃক প্রেরিত একটি ভিডিও ফুটেজে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ফুটেজটি অবশ্য বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ের। সেখানে চারজন বাংলাদেশী যুবককে বেলারুশ পুলিশ কতৃক আটক হতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ট্যাক্সিকে থামিয়ে টিয়ার সেল দিয়ে চারপাশ অন্ধকার করে দায়ীত্বরত পুলিশ। এরপর ট্যাক্সির ভিতর থেকে চার যুবককে বের করে রাস্তার উপর উপুড় করে হাতকড়া পরানো হয়। এসময় তাদের নাম জানতে চাইলে চারজনই তাদের নাম জানায়। তারা হলেন, ফরহাদ, রাইসুল ইসলাম, ইকবাল ও ফয়সাল আহমেদ। তবে তাদের বিস্তারিত ঠিকানা জানা যায়নি। ৩০ জন আটকের ঘটনা ঘটে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর। সব মিলে এ পর্যন্ত ৩৪ জন বাংলাদেশী আটকের খবর পাওয়া গেছে।
অনেকে আবার ইউক্রেন দিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের আইনকে তারা সহায়ক হিসেবে নিচ্ছে। দেশটির আইন অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের দুই দিনের মধ্যে তারা ৬০ দিন দেশটিতে থাকার অনুমতি পান। উক্ত দুই মাসের মধ্যে পার্শবর্তী অন্য দেশে প্রবেশের সুযোগ নিতে চায় তারা।
বাংলাদেশী ছাড়াও সীমান্তবর্তী দেশ দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের তালিকায় বড় পরিসরে রয়েছে মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার নাম। এই ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নিতে আজ ২৫ জুলাই থেকে বিশেষ অভিযানে নামছে রাশিয়ার পুলিশ। তবে যে সকল ফিফা ফ্যান আইডি প্রাপ্তরা মস্কো বা অন্যান্য শহরে ঘোরাফেরা করছেন তাদের কোন সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্বকাপ দেখতে আসা ফুটবলপ্রেমী ও সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করে রাশিয়া। এমনকি ফিফা ফ্যান আইডি ও অ্যাক্রিডিটেশন প্রাপ্তদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফ্রি ভিসার সুবিধা প্রদাণ করে রাশিয়া সরকার।
প্রথমে ফিফা ফ্যান আইডি প্রাপ্ত ৬ জন যুবক ফিনল্যান্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় ফিনল্যান্ড পুলিশ কতৃক আটক হন। ফিনল্যান্ড বিষয়টি সরাসরি ফিফাকে জানায়। ফিফা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পরবর্তিতে ব্যাপারটা তীব্র আকার ধারণ করলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দেশগুলোকে পরবর্তিতে ফিফা ফ্যান আইডি দেয়ার ব্যাপারে স্বতর্ক থাকবে বলে জানায় ফিফা। সেই হিসাবে কিছু সংখ্যক যুবকের চেচ্ছাচারিতার দায় পড়তে পারে পুরো বাংলাদেশের কাধে। তাদের বিপথগামীতায় বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে পুরো দেশের। শুধু তাই নয়, কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ফ্যান আইডি দেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি প্রদান করা হবে বলে জানায় ফিফা। এমনকি তা বাতিলও করা হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন