অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে ফিলিপাইনের সিনেটে যখন তোলপাড় তখন দেশের সংসদীয় কমিটিগুলো এ ব্যাপারে নীরব কেন Ñ এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে, এই রিজার্ভ চুরি দেশের অর্থব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) দেশজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তাদের মতে, চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের কথা ছিল তা পূরণ হবে না। ৩৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। আর সম্পদ আহরণে সমস্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল আগামী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেটে সিপিডির সুপারিশমালা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। লিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের আভাস দিয়েছেন। সিপিডির মতে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের যে ধারা সেই বিবেচনায় বাজেট আরো বেশি হওয়া দরকার। আর নতুন বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কারণেই চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ ধরা হয়েছে। জিডিপির এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এছাড়া সংস্থাটি জানায়, গত কয়েক বছরে রাজস্ব আদায়ে প্রতি বছর গড়ে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই থেকে মার্চ) রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৭ হাজার ২১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ সময় পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নতুন বাজেট দেওয়া হয়, সেখানে কিছু অর্জনের প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, আগের বছরের বাস্তবায়নের হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না। তাই বাজেট করা উচিত বাস্তবায়নের সক্ষমতার নিরিখে। অর্থনীতির সমন্বয় বৃদ্ধি ও আর্থিক খাতে নানা ঘটনায় মধ্যে দেখা যায়, অর্থনীতির নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, বাজেট দেশের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে আরো বড় হওয়া উচিত। আমরা মনে করছি, সম্পদ আহরণের কাঠামোতে বড় ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই সমস্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের তথ্য অনুযায়ী সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। আর জিডিপির এই অর্জনের ৮০ শতাংশই সরকারি খাতের। প্রবৃদ্ধির এই উচ্চতর মাত্রাকে টেকসই করতে হলে এর গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। কারণ আমাদের একদিকে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, অন্যদিকে সেরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৪ বছরের সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি, যা বিভ্রান্তিকর।
এদিকে পানামা পেপারস প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, দেশ থেকে অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটি রোধ করতে হলে আয় ও সম্পত্তি দুটোই আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। এ জন্য অর্থনীতির খাতে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আর্থিক খাতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেটা আছে, তাদের আরো বেশি সক্রিয় হয়ে এসব বিষয়কে বিবেচনা করা উচিত এবং সেখানে উন্মুক্ত শুনানি করা উচিত। সংস্থাটি আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে বাজেটের কাঠামোর গুণগত মানোন্নয়ন এবং ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন