ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, বিদেশে ৯৮ শতাংশ মানুষ আইন মানলেও আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ ট্টাফিক আইন মানে না। তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্টাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে এখন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্টাফিক সপ্তাহ আরও তিন দিন বাড়িয়ে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। আপনারা অনেক তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতার অডিও-ভিডিও রেকর্ড শুনেছেন। এমন আরও কয়েকজন তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতার অডিও রেকর্ড পুলিশের হাতে রয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ট্টাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ট্টাফিক সপ্তাহে আইন প্রয়োগ ও শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এটা বেগবান করার জন্য আরও তিন দিন সময় বাড়ানো হচ্ছে। এতে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাবে। রাজধানী রাস্তাগুলো অপ্রশস্ত কিন্তু গাড়ি বেশি। এ ছাড়া রোড মার্কিং স্বল্পতা, যেখানে–সেখানে পার্কিং, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এত কিছুর মধ্যেই ট্রাফিক পুলিশ শৃঙ্খলা ফেরানো কাজ করছে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল না থাকায় হাতের ইশারায় পুলিশকে কাজ করতে হচ্ছে। এতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ।
তিনি আরো বলেন, কোমলমতি শিশুরা আমাদের ট্রাফিক পুলিশের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাদের বার্তা যৌক্তিক ছিল। ওদের দাবিকে সামনে রেখেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলমান ট্রাফিক সপ্তাহে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠাননির্বিশেষে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ছয় দিনে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫২ হাজার ৪১৭টি যানবাহন, ১১ হাজার ৪০৫ চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফিটনেস নেই এমন ৫৫৭ যান ডাম্পিং করা হয়েছে। তিন কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কোনোভাবেই সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে দেয়া যাবে না।
গত দুই বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এর আগে হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল। গত দুই বছরে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ৪৪ হাজার ৪৮৫টি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উল্টো পথে গাড়ি চালানোর ঘটনায় ৪৪ হাজার ১৬১টি যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নাগরিকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাস্তায় বাস রেষারেষি করে চালানোর কারণে দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। তাই চালক না হেলপার কে গাড়ি চালাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবৈধ গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। গাড়িতে বৈধ কাগজপত্র রাখতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি পাওয়া গেলে ডাম্পিং করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলতে দেয়া হবে না।
ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের কারণে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলে মনে করেন কি? এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা অনেকটাই ফিরে এসেছে, তবে তা অপ্রতুল। ঈদুল আজহার পরে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান আরও জোরালো ও বেগবান করবে। ট্রাফিক ব্যবস্থা টেকসই করার জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখনো চুক্তিতে গাড়ি দেয়ার কারণে চালকেরা বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছেন। মালিকেরা চালকদের মাসিক বেতনে গাড়ি চালানোর সুযোগ দিতে পারেন। শুধু আইন প্রয়োগ করে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। সবার সহযোগিতা দরকার।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত না করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। হামলার শিকার সাংবাদিকেরা চাইলে মামলা করতে পারবেন।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ধংসাত্মক করতে একটি মহল চেষ্টা করেছে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, আপনারা অনেক তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতার অডিও-ভিডিও রেকর্ড শুনেছেন। এমন আরও কয়েকজন তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতার অডিও রেকর্ড পুলিশের হাতে রয়েছে। কিভাবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করিয়ে ধংসাত্মক পরিবেশ তৈরি করা হবে, সেসব তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতার অডিওতে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। অনেককেই আমরা চিহ্নিত করেছি। যারা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে এবং আগামীতেও যেন এমন সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ছাত্রদের ভ্যাট আন্দোলন, কোটা আন্দোলনে সহিংসতা এবং ২০১৪ সালের দেশজুড়ে জ্বালাও পোড়াও একই সূত্রে গাঁথা বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন