শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনিয়মের ডিপো আইসিডি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বেসরকারি স্থল কন্টেইনার ডিপোসমূহ (আইসিডি) ঘিরে অভিযোগের যেন শেষ নেই। অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও অনিয়মের ডিপোতে পরিণত হয়েছে প্রাইভেট আইসিডি। চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বক্ষণিক সচলতার জন্য সহায়ক ও পরিপূরক হয়ে ওঠেনি। বরং থমকে দিচ্ছে বন্দরের গতিশীলতা। আমদানি ও রফতানিকারকগণই প্রতিনিয়ত এসব অভিযোগ করছেন। আইসিডির অব্যবস্থাপনার জেরে আমদানি ও রফতানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকেই ত্যক্ত-বিরক্ত। নানামুখী হয়রানির নিরসন চান তারা।
পোর্ট-শিপিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত বছরের পয়লা আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম সার্বক্ষণিক সচল রাখা হয়েছে। বন্দর সচল থাকার সঙ্গে বন্দর-শিপিং নির্ভর ভেতরের ও বাইরের সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংস্থা, সংগঠন-সমিতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি স্থল কন্টেইনার ডিপোসমূহ (অফডক)। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। কন্টেইনারের বিরাট অংশই মজুদ, হ্যান্ডলিং ও পরিবহন করা হয় অফডকে। সেখানে প্রতিদিনই শত শত কোটি টাকা মূল্যের শিল্প কাঁচামাল, তৈরি পোশাকসহ হরেক ধরনের পণ্যসামগ্রী ওঠানামা করা হচ্ছে।
কিন্তু বেসরকারি আইসিডির নানামুখী অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব প্রকট। কন্টেইনার ওঠানামায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অফডক পরিচালনার ক্ষেত্রে নেই সুষ্ঠু নীতিমালা। যার খেসারত দিতে গিয়ে লোকসান গুণছেন ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা মহল। সেই লোকসান পুষিয়ে তুলতে বাজারে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ভোক্তা সাধারণের ওপর পড়ছে তার বিরূপ প্রভাব।
এদিকে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি মীর্জা আবু মনসুর গতকাল শনিবার এ প্রসঙ্গে আলাপকালে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বেসরকারি আইসিডির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স হাতে তুলে দেয়ার সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া দরকার। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে অফডক ব্যবস্থাপনা এখনও বলতে গেলে নতুন অবস্থাতেই চলছে। তিনি অবিলম্বে বেসরকারি আইসিডির পরিচালনায় ব্যবসা-বান্ধব নীতিমালা তৈরির তাগিদ দেন। এর মাধ্যমে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা দূরীভূত হবে। এই খাতটি জাতীয় অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বেসরকারি আইসিডির অব্যবস্থাপনা ছাড়াও নানামুখী বিশৃঙ্খলায় ব্যাহত হচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়া। বৃদ্ধি পাচ্ছে আমদানি খরচ। সময়মতো আমদানি চালান বিশেষত শিল্পের কাঁচামাল গন্তব্যে এবং রফতানিমুখী পণ্যভর্তি কন্টেইনার বন্দরের টার্মিনালে পৌঁছায় না। এরজন্য পদে পদে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে রয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। তাছাড়া যখন যেমন খুশী অফডকের মালিকরা একতরফা চার্জ বৃদ্ধি করে বসেন। আইসিডিগুলোতে কন্টেইনারবাহী পণ্যের চাপ যতই বাড়ে ততই বেড়ে চলে অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার সুযোগে যথেচ্ছভাবে পরিচালিত হয় বেশিরভাগ আইসিডি। লাগামহীন চার্জ উসুল, ন্যুনতম ভারী-মাঝারি-হালকা যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি, সময়মতো পণ্য হ্যান্ডলিং না করা, মজুদে নিরাপত্তাহীনতা, সুষ্ঠু তদারকির অভাব ইত্যাদি অভিযোগ উঠছে প্রায় সময়েই। অথচ অভিযোগের নেই প্রতিকার।
চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে যত্রতত্র ও অপরিকল্পিত গড়ে ওঠা কয়েকটি আইসিডির অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা চাপা পড়ছে। মহানগরীতে যানজট ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সড়কের পাশেই তৈরি এসব আইসিডি। সেখানে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, মজুদ-স্টেকিং ও পরিবহনের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের সংগ্রহের যেন গরজ নেই। বন্দরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরী, শহরতলী ও নগরীর কাছাকাছি বড় ও মাঝারি আকারের বেসরকারি আইসিডির সংখ্যা ১৭। আইসিডিসমূহে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো, লক্কর-ঝক্কর ও সেকেলে। কন্টেইনার ওঠানামা, স্থানান্তর, মজুদের জন্য অপরিহার্য স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, রীচ স্টেকার, ফর্ক লিফট, স্প্রেডার, ফর্ক, কন্টেইনার মুভার, এম্পটি হ্যান্ডলার, টার্মিনাল ট্রাক্টর, ট্রেইলর, মোবাইল ক্রেন, লগ হ্যান্ডলার, লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাক্টর, হেভি ট্রেইলর ও লাইট ট্রেইলরে ঘাটতির কারণে সময়ক্ষেপণ এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আশরাফ আল মামুন ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১:০১ এএম says : 0
চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল ও গতিশীল করতে হলে বেসরকারি আইসিডিগুলোকে সকল অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম থেকে মুক্ত করা দরকার। এই জন্য একটা নীতিমালা হতে হবে।
Total Reply(0)
রেজাউল হাসান ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 0
প্রাইভেট আইসিডিগুলোর সার্ভিসমান অত্যন্ত বাজে। হয়রানি এবং তাদের ইচ্ছা মাফিক চার্জ আদায় করা হয়। বন্দরে কনটেইনার জট হওয়ার জন্য তারা বেশী দায়ী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন