বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাঠ্যসূচি হতে ইসলামী ভাবধারা বিলুপ্তি বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচি -হেফাজতে ইসলাম, ঢাকা মহানগর

প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস হতে ইসলাম ও মুসলিম ভাবধারা বিলুপ্ত করে সেক্যুলার শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তথা মুসলমানদের তাহজিব, তামাদ্দুন, ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে হিন্দুত্ববাদের পাঠ্যসূচি অনুসরণে বাধ্য করার চক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল দুপুরে হেফাজতে ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আমীর আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে যার যার ধর্মকর্ম স্বাধীনভাবে মেনে চলতে পারা। তাহলে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই থেকে বেছে বেছে ইসলামী বিষয়সমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে হিন্দুত্ববাদের ধারণামূলক লেখাসমূহ যুক্ত করা হচ্ছে কেন? মূলত ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যে ধর্মহীনতা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এতদিনকার ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের সেই অভিযোগই যথার্থ বলে এখন প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা মনে করি জাতিকে ধর্মহীন তথা ইসলাম বিদ্বেষী করার এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিকে অনৈসলামিকরণ প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অস্তিত্ব, স্বাতন্ত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় মুসলমানরা নীরবে বসে থাকতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ৫ দফা দাবী উল্লেখ করে বলেন, এ দাবীগুলো আদায়ে আগামী ২২ এপ্রিল শুক্রবার বায়তুল মুকাররম উত্তর গেইটে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপরও দাবী মানা না হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচী আসবে। ৫ দফা দাবী হচ্ছে: অনতিবিলম্বে শিক্ষা সংস্কৃতির অনৈসলামিকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারা পুনঃস্থাপন করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ও ইসলামী ভাবধারা মুছে ফেলার সাথে জড়িত মহল এবং প্রশ্নপত্রে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কওমী মাদরাসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। একই সাথে ধর্মহীন সেক্যুলার শিক্ষানীতি-২০১০ বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনাসমৃদ্ধ শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে এবং বর্তমান ধর্মহীন সেক্যুলার শিক্ষানীতি আলোকে শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা থেকে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির বিলোপ ও হিন্দুত্ববাদের সংযুক্তির বাস্তবচিত্র প্রতিটি মুসলমান ও অভিভাবককে আশংকিত ও আতংকিত করে তুলছে। এ সিলেবাস পড়িয়ে আমাদের সন্তানদেরকে হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার দোহাই দিয়ে শতকরা ৯২ জন মুসলমানের শিক্ষা থেকে ইসলামকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। পাঠ্যক্রম থেকে ইসলাম সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় উচ্ছেদ করে সেখানে হিন্দুধর্মীয় তত্ত্ব ও সংস্কৃতি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় মূলনীতিতে সেক্যুলারিজম যদি প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের নিজ নিজ ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালনের অধিকার বোঝানোর জন্য হয়, তাহলে ৯২ ভাগ মানুষের ধর্ম ও ধর্মীয় সংস্কৃতি উচ্ছেদ করা হবে কেন? নতুন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম বাস্তবায়িত হলে আগামী প্রজন্ম মুসলমান থাকবে কিনা সন্দেহ। তরুণ বয়সে ধর্মহীনতা, নাস্তিকতা আর পৌত্তলিকতার শিক্ষা পেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম নাস্তিক মুরতাদ হবে এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম বাদ দিয়ে হিন্দুত্ব শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য কী, জাতির সামনে আজ এটাও প্রশ্ন। নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি ও ধর্মবিদ্বেষী পাঠ্যক্রম অবিলম্বে সংশোধনের দাবি উঠেছে। ৯২ ভাগ মুসলমান অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এ অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ ছাড়া ঈমান রক্ষার আর উপায়ই বা কী আছে। আগামী প্রজন্মকে সুকৌশলে যারা ঈমানহারা নাস্তিক বা পৌত্তলিক প্রজন্ম হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট সবাই মিলে সোচ্চার না হলে তাদের রোখা যাবে না। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বার্থেই তাদের রুখে দাঁড়ানো অপরিহার্য।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন: হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা আবুল কালাম, জনাব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, আল্লামা মোস্তফা আজাদ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মুজিবুর হামিদী, যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা অধ্যাপক আব্দুল করীম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মো: ফয়সাল আহমদ, মুফতী ফখরুল ইসলাম ও মুফতী শরীফুল্লাহ, মাওলানা হাবীবুল্লাহ ইসলামপুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত শ্রেণীভিত্তিক বাদ দেয়া বিষয়গুলো হচ্ছে: দ্বিতীয় শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
তৃতীয় শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
চতুর্থ শ্রেণীÑ খলিফা হযরত ওমর-এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণীÑ ‘বিদায় হজ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যাতে বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত, তা বর্ণনা করা হয়েছিল।
পঞ্চম শ্রেণীÑ শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রবন্ধটিতে মুসলিম নেতা শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ঘটনার উল্লেখ ছিল।
ষষ্ঠ শ্রেণীÑ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণীÑ মুসলিম দেশ ভ্রমণ কাহিনী ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক মিশর ভ্রমণের ওপর লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণীÑ মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণীÑ বাদ দেয়া হয়েছে ‘মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
অষ্টম শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি।
অষ্টম শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা।
নবম-দশম শ্রেণীÑ সর্বপ্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ইসলাম ধর্মভিত্তিক কবিতাটি।
নবম-দশম শ্রেণীÑ এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’-এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।
নবম-দশম শ্রেণীÑ আরো বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আবদুল হাকিমের লেখা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি।
নবম-দশম শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে শিক্ষণীয় লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি। কবিতাটি মুঘল বাদশাহ বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা।
নবম-দশম শ্রেণীÑ বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি।
উপরের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নতুন স্কুল পাঠ্যবইয়ে নিচের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছেÑ পঞ্চম শ্রেণীÑ হুমায়ুন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআনবিরোধী কবিতা। ষষ্ঠ শ্রেণীÑ প্রবেশ করানো হয়েছে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক একটি কবিতা। যেখানে রয়েছে হিন্দুদের ‘দেবী দুর্গা’র প্রশংসা। ষষ্ঠ শ্রেণীÑ সংযুক্ত হয়েছে ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোটগল্প। যা দিয়ে কোটি কোটি মুসলিম শিক্ষার্থীকে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। ষষ্ঠ শ্রেণীÑ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী। সপ্তম শ্রেণীÑ ‘লালু’ নামক গল্পে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে পাঁঠাবলির নিয়মকানুন। অষ্টম শ্রেণীÑ পড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’-এর সংক্ষিপ্তরূপ। নবম-দশম শ্রেণীÑ প্রবেশ করানো হয়েছে ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা। কবিতাটি হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত ‘মঙ্গল কাব্য’-এর অন্তর্ভুক্ত যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার কাছে প্রার্থনাসূচক কবিতা। নবম-দশম শ্রেণীÑ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালমৌ’-এর ভ্রমণ কাহিনী। নবম-দশম শ্রেণীÑ পড়ানো হচ্ছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী। নবম-দশম শ্রেণীÑ ‘সাকোটা দুলছে’ শিরোনামের কবিতা দিয়ে ’৪৭-এর দেশভাগকে হেয় করা হয়েছে, যা দিয়ে কৌশলে ‘দুই বাংলা এক করে দেওয়া’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। নবম-দশম শ্রেণীÑ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘সুখের লাগিয়া’ নামক একটি কবিতা, যা হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের লীলাকীর্তন। প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয়েছে ‘নিজেকে জানুন’ নামক যৌন শিক্ষার বই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন