বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

প্রাক-বাজেট আলোচনা কর কমানোর দাবি বিজিএমই’র হয়রানি বন্ধ চায় বিকেএমইএ

প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে দশমিক ৩০ করার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এদিকে রপ্তানির ওপর সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত অডিট সিস্টেম এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদপ্তরের অডিট হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিকেএমইএ।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। এই বাজেট অলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিজিএমইএ, বিকেএমই এবং বিজিএপিএমইএ-সহ ১৫ সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর থেকে দেশের পোশাক খাত সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে গার্মেন্টস খাতের এখনো উত্তরণ হয়নি। দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে অ্যাকর্ড এলাইন্স এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৯৬টি ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছেন। তাদের সুপারিশ অনুসারে আমাদের কারখানা শেয়ার বিল্ডিং ভিন্ন স্থানে স্থানান্তর, নতুন-পুরাতন বিল্ডিংয়ে ফায়ার ডোর লাগানোসহ যাবতীয় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমি অন্তত দুই থেকে তিন বছরের জন্য করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের জুন মাসে হঠাৎ করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। বর্তমানে এই সেক্টরে ৪৪ লাখ লোক কাজ করছেন। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন রপ্তানিতে যাওয়া। তাই আমি দাবি জানাচ্ছি করপোরেট কর পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া ও রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা এই দুইটি সুবিধা অন্তত ২০২০ সাল পর্যন্ত চাই।
বিজিএমইএর প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, অগ্নি-নিরাপত্তাসংক্রান্ত সকল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি করার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে সকল পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত সুবিধা ও এই শিল্পকে সুরক্ষা দিতে আগামী তিন বছর ইউরো জোনভুক্ত দেশে পোশাক রপ্তানির জন্য এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড) মূল্য অর্থাৎ জাহাজিকৃত পণ্যের মূল্যের ওপর ২ শতাংশ হারে এবং নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির জন্য এফওবি মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তার ব্যাখ্যায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগ পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে পোশাকের আমদানি মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান কমেছে ২১ দশমিক ৩৫ ভাগ।
ইউরোর এই অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিজিএমইএর বাজেট প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, জাতীয় অর্থনীতি ও রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ১০ ভাগ হ্রাসকৃত হারে করারোপের মেয়াদ আগামী পাঁচ বছর বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারি করা দরকার। এ ছাড়া উৎসে করের অতিরিক্ত নিট মুনাফার ক্ষেত্রেও ১০ ভাগ হারে কর নিষ্পত্তি করা দরকার।
অডিটের নামে হয়রানি বন্ধ চায় বিকেএমইএ : বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের নিট শিল্পের সুরক্ষায় এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সরকার নগদ সহায়তা প্রদান করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োজিত অডিট প্রতিষ্ঠান এ সহায়তা প্রদানে অডিটের নামে কালক্ষেপণ করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন অডিট ফার্ম এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদপ্তরের অডিট কর্মকর্তাগণ সার্কুলারসমূহের অপব্যাখ্যা করে থাকেন। ফলে শিল্পমালিকরা তাদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্পের অডিট কার্যক্রম দুই বছর অন্তর করা এবং অডিট সহায়ক প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিলের সময়সীমা তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করা ও বিশেষ ক্ষেত্রে আবেদনের অতিরিক্ত সময় গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরো কিছু দাবি পেশ করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক খাতে নাজুক অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানায় বিকেএমইএ। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে রপ্তানিতে উৎসে কর শুধু কাটিং এন্ড মেকিং (সিএম) দশমিক ৬০ শতাংশ করা, অগ্নি-নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি করার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত আমদানি সুবিধাসহ ২৫টি দাবি জানানো হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন