শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

এই ভারতই বিশ্বসেরা!

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। টেস্ট ব্যাটসম্যানের তালিকায় সর্বাগ্রে দলটির অধিনায়ক বিরাট কোহলির নাম (লর্ডসে হারের পর নেমে গেছেন দুইয়ে)। আর দলীয় টালিতে ইংল্যান্ডের অবস্থান পাঁচে। বোলিং টালিতে দলটির জেমস অ্যান্ডারসন ধরে রেখেছেন শীর্ষস্থান। ইংলিংশদের দৌড় ঐ পর্যন্তই। পরের চার আসনের দুজনই ভারতীয়- রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবীচন্দ্রন অশ্বিন। আর অলরাউন্ডার তালিকায় বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান শীর্ষস্থান সুসংহত রাখলেও পরের দুটি আসর দখলে রেখেছেন জাদেজা-অশ্বিন। তবুও এবার ইংল্যান্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা ভারত দেখছে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময়। সত্যিই কি তাই?
শুধু এই সিরিজই নয়, পরিসংখ্যান বলছে ২০১৭-১৮ সালে অ্যাওয়ে সিরিজে সবশেষ ৫ টেস্টে মাত্র এক ইনিংসেই তিনশো’র্ধ রান করতে পেরেছে কোহলির ভারত! দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড সফরে কোহলি ছাড়া আর কেউই সুবিধা করতে পারেনি। ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এজন্যই ভারত নিজেদের মাঠে বেশি বেশি ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী হয়। ভেন্যু, উইকেট এবং কোটি ভক্তের সমর্থনের সুযোগ নিয়ে যাতে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান উচুঁতে দেখানো যায়। তাতে ‘কতৃত্ব’ আরো সুসংহত হয়!
প্রথম টেস্টে তবু লড়াই হয়েছিল। এজবাস্টনে বিরাট কোহলির ধ্রæপদি এক ইনিংস কিছুটা হলেও মান বাঁচিয়েছিল ভারতীয়দের। কিন্তু লর্ডসে ইংল্যান্ডের সুইং বোলিংয়ে কোনো জবাবই দিতে পারল না বিরাট কোহলির দল। বৃষ্টিবিঘিœত দ্বিতীয় টেস্টে তো দুইদিনেই অসহায় আত্মসমর্পণ ভারতের। কোহলির অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মতো ইনিংস পরাজয় জুটল ভারতের। প্রশ্ন উঠছে, ইংল্যান্ডে গিয়ে কি ব্যাটিংটাই ভুলে গেল ভারত! লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের কাছে ওমন হারের কোহলিদের উপর ভীষণ ক্ষেপেছেন সাবেকরা। উত্তরসূরীদের রীতিমত ধুয়ে দিচ্ছেন কিংবদন্তিরা।
ভারতজুড়েই এখন সমালোচনা কোহলির দলের। টাইমস অব ইন্ডিয়ার শিরোনাম, ‘লর্ডসে ভিখারি ভারত’। তা ভিখারির মতোই সিরিজ কাটছে ভারতের, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতি ১৬.৮২ রানে একটি করে উইকেট হারিয়েছে ভারত। ব্যাটিং গড়টা ২০০২ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের পর ভারতের সর্বনিম্ন। দেশের বাইরে ঠিক আগের সিরিজটাতেও ভারতের ব্যাটিং ভালো হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই সিরিজে ভারতের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২০.৬০।
ইংল্যান্ডে সর্বশেষ দুই সফরে অবশ্য এতটা বাজে ছিল না ভারতের ব্যাটিং। ২০১৪ সালে যে সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে হার সেই সিরিজে ভারতের ব্যাটিং গড় ছিল ২৫.৭৩। ২০১১ সালে ৪-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হওয়া সিরিজেও ২৫-এর ওপরে ছিল কোহলিদের গড়। লর্ডসে ভারতের ব্যাটিং কত বাজে হয়েছে, তার প্রমাণ একটি তথ্যেই আছে। দুই ইনিংসেই দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান রবিচন্দ্রন অশ্বিনের।
অ্যান্ডারসন-ব্রডদের সুইংয়ের সামনে ভারতীয়দের অসহায়ত্বটাই ফুটে উঠছে। সমালোচনাটা ব্যাটিংয়ের টেকনিক নিয়েই বেশি। টানা দুই টেস্টে ভারতের হার দেখে সাবেক ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ টুইট করেছেন, ‘খুবই বাজে পারফরম্যান্স ভারতের। যখন আমরা সবাই দলের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থন দিচ্ছি, তখন তারা ভালো করছে না। নিদেনপক্ষে লড়াইটাও করতে পারছে না, এটা দেখা আসলেই খুব হতাশার। আশা করছি এই অবস্থা থেকে আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শক্তি নিয়ে ফিরতে পারবে।’
কিংবদন্তি স্পিনার বিষেণ সিং বেদী লিখেছেন, ‘লর্ডসে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভারত। যারা দূর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই জানেন সমস্যাটা কি কিংবা কোথা থেকে এটার উৎপত্তি। তবে তারা দলকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোনো কথা বলবেন না। ব্যাটিং বিপর্যয়ের চেয়ে এটা বেশি হতাশাজনক।’ সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষন লিখেছেন, ‘প্রতিকূল কন্ডিশনে ধরা পড়তে হলো। ভারতের লর্ডস টেস্ট দেখে মনে হলো, প্রতিপক্ষ কি ছুঁড়ছে, সেটা বুঝতে পারছ না তারা। লড়াইটাও করতে পারল না।’
আরেক সাবেক মোহাম্মদ কাইফের টুইট, ‘দুই ইনিংসে মাত্র ৮২ ওভার টিকতে পারল ভারত। ভুল থেকে তারা শিখছে না, যেটা দেখা খুবই হতাশার। এই টেস্টে তো সব ডিপার্টমেন্টেই ভেঙে পড়েছে।’ শচিন টেন্ডুলকারের বন্ধু ও সাবেক ব্যাটসম্যান বিনোদ কাম্বলি লিখেছেন, ‘এই টেস্টে আমাদের পুরো মনোভাবই ছিল রক্ষণাত্মক। তার চেয়ে বড় কথা, আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা না খেলে ইংলিশ বোলারদের চড়ে বসতে দিয়েছি। সামনের দিনগুলোর জন্য টিম ইন্ডিয়ার থিংক ট্যাংককে আরও অনেক বেশি ভাবতে হবে।’
ইংল্যান্ডের সিরিজে প্রশ্ন উঠেছে রবি শাস্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য শাস্ত্রীর নিয়োগ কতটা উপকার বয়ে এনেছে, সেটি নিয়ে ভাবা শুরু করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা। বিসিসিআইয়ের অন্তঃবর্তীকালীন কমিটি ইতিমধ্যেই শাস্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছে। সেখানে স্পষ্টই বলে দেওয়া হয়েছে, ইংল্যান্ডে ভারতীয় দল যা খেলেছে, সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভারতীয় বোর্ডের এক কর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না রবি শাস্ত্রী ও দলের বর্তমান কোচিং স্টাফের অধীনে আমরা ২০১৪-১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হেরেছিলাম। গত বছর হেরেছি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। দুটিই ছিল বড় টেস্ট সিরিজ। এখন আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খাদের কীনারায় আছি।’
নাজেহাল হওয়ার পর থেকে স্বস্তিতে নেই কোহলিরাও। শুধু সাবেকরাই নন, ভক্ত-সমর্থকরাও ধৈর্যহারা হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন কোহলিদের। ভক্তদের এমন আচরণের পর থেকে আবেগ মথিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে বাধ্য হয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। ভক্তদের বলেছেন, আস্থা না হারাতে। ফেসবুক পেজে কোহলির অনুরোধ, ‘কখনও আমরা জয় পাই, আবার কখনও আমরা শিক্ষা নেই। আপনারা কখনও আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারাবেন না। আমারও হারাবো না প্রতিজ্ঞা করলাম। সামনে আরও এগিয়ে যেতে চাই।’
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতীয় ক্রিকেট দল শেষ কবে পড়েছিল অনেকেরই হয়তো মনে নেই। ৫ ম্যাচ সিরিজে ভারত এখন পিছিয়ে ২-০ তে। ভারতকে মাত্র একবারই ৫-০ তে হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে ইংল্যান্ড, ১৯৫৯ সালে। এবার সেটির পুনরাবৃত্তির ভালো সুযোগ দেখছেন জো রুট। তবে কাজটা যে সহজ হবে না, তা ভালো করেই জানা ইংলিশ অধিনায়কের। কোহলিও জানিয়েছেন, নটিংহ্যামে তারা ব্যবধানটা ২-১-এ নামিয়ে আনতে চান। আগামী শনিবার ট্রেন্ট ব্রিজে শুরু হবে তৃতীয় টেস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন