বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতীয় মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা প্রয়োজন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ভারতে মানবাধিকার কর্মীদের খুঁজে খুজে আটক ও মামলা দিয়ে বছরের পর বছর রাজনৈতিক বন্দীদের মতো কারাগারে আটকে রাখা এ যুগের একটি হতাশাজনক রাজনৈতিক বাস্তবতা। প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী স্বামী অগ্নিবেশ স¤প্রতি পরলোকগত সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার পথে দিল্লিতে আক্রমণের শিকার হন। গত জুলাই মাসেও এই দাস-শ্রম বিরোধী আন্দোলনকারীর উপর হামলা হয় ঝাড়খন্ডে। গত ৪ জুলাই সরকার জাতীয়তা বিরোধী আখ্যা দিয়ে একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। সরকার নাকি ‘পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুধা ভারদাওয়াজের লেখা একটি চিঠিতে কাশ্মিরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার প্রমাণ পেয়েছে। জুনে বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে পাঁচজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন টাটা ইন্সটিটিউট অব সোশাল সাইন্সের তরুন গ্রাজুয়েট মহেশ রাউত, যিনি খনির বিরুদ্ধে আদিবাসী গিদচিরলি গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করছেন। রয়েছেন মৃত্যুদন্ড বিরোধী ও রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য আন্দোলনকারী রোনা উইলসন। আছেন ড. সাই বাবা’র মতো রাজনৈতিক বন্দীদের মামলায় লড়ছেন এমন আইনজীবী সুরেন্দ্র গাদলিং। সংঘাতপ্রবণ এলাকায় নারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে সোচ্চার সোমা সেন ও দলিত স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনকারী সুধীর ধাওয়ালে। এরা সবাই বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ও অবৈধ কর্মকান্ড প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা করা হয়। বলা হয় এরা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত। যদিও এদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে সাধারণ মানুষ তেমন কান দেয়নি। যেমন : প্রধানমন্ত্রীর গ্রামের অধিবাসী মহেশ রাউত পঞ্চায়েত বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই আইন বাস্তবায়িত হলে উপজাতি এলাকায় খনি খনন করা যাবে না। খনির কারণে বাসস্থান ও জীবিকা হারনোর আশংকায় থাকা মানুষগুলোর পক্ষে লড়ছেন তিনি। একইভাবে এলগার পরিষদ আন্দোলনের কর্মী সুধীর ধাওয়ালেকে গ্রেফতার করা হয় বর্ণ ও ধর্মের নামে ভারতের ৩০ কোটি দলিত ও ২৬ কোটি অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিদিন যে অবিচার চলছে তা মোকাবেলার কৌশল খুঁজে পেতে একটি আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন মানবাধিকার কর্মী ভিকটিম হচ্ছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হিসাব মতে চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এ ধরনের ৩০টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা ও বেআইনি আটক, মিথ্যা অভিযোগ ও বেআইনি গ্রেফতার রয়েছে। এমন ২৯৩,০০০ বিচারাধীন আসামী রয়েছে, যারা ভারতের মোট কারাবন্দীর ৬৭.২%। তারা ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর ধরে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জেলখানাগুলোতে দিন কাটাচ্ছেন। মানুষের অধিকার লঙ্ঘন মানবাধিকার কর্মীদের পীড়া দেয়। ফলে তারা বড় ধরনের ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে হলেও অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষে এগিয়ে আসেন। তারা যুদ্ধ ও শান্তি দুই সময়েরই বীর। এরা অসাধারণ মানুষ। অর্থনীতিবিদ আশোক মিত্রের ভাষায়: একজন সৈনিক, জেনারেল বা একজন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে এদের অবদান কম নয়। এসএএম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন