শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাম আক্রান্ত ত্রিপুরা পল্লীর শিশুরা

হাটহাজারীতে স্বাস্থ্য বিভাগের টিম

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

হাম ভাইরাসেই মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার উদালিয়া সোনাইর কূল ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের তিনজনসহ চার শিশুর। আক্রান্ত ছয় শিশুর রক্তের নমুনা পরীক্ষা শেষে গতকাল (সোমবার) বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আক্রান্ত ছয় শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রোববার জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠানো হয়। গতকাল পরীক্ষা শেষে ছয় শিশুর মধ্যে চারজনের রক্তে প্রাথমিকভাবে মিলেছে হাম ভাইরাস। তিনি বলেন, রোগটি এখন আর অজ্ঞাত নয়। ভাইরাসজনিত হাম রোগেই ওই চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং বাকি শিশুরাও একই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে ধারণা করছি। তবে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও কিছু নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এ রোগ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার থেকে রোববার পর্যন্ত ওই ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের অন্ন রায় (৫), সুমা রায় ও (৩) অন্ন বালা (৭) মারা যায়। এ ছাড়া আরেকজন শিমুনী ত্রিপুরাও (৩) অজ্ঞাত রোগে মারা যায়। পরে ত্রিপুরা পাড়া থেকে ২২ শিশুকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লক্সে ভর্তি করা হয়। যাদের শরীরে জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট এবং র‌্যাশের চিহ্ন রয়েছে।
তাদের মধ্যে তিন শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাতেই তিন শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফৌজদারহাটের এই হাসপাতালে স্থানান্তর করার কথা জানান হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি বলেন, হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ত্রিপুরা বাকি ১৯ শিশুর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ত্রিপুরাপল্লী ছয়মাস থেকে ১৫ বছরবয়সী শিশুদের তালিকা করে তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া হবে। এছাড়া তারা সকলেই টিকা নিয়েছে কি না তা দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার সদস্যের গবেষক দল হাটহাজারী যান। তারা রক্তের নমুনা সংগ্রহর করেন ও শিশুদের অবস্থা দেখেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি ডা. রেজাউর রহমান খান, আইইডিসিআরের ডা. মুরাদুজ্জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ডা. মোস্তাফা ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন প্রতিনিধি দলে ছিলেন। গতকাল আক্রান্ত আরো ৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হল মনি ত্রিপুরা (৯), সাগর ত্রিপুরা (৭), সাম ত্রিপুরা (৬)। ত্রিপুরা পল্লীতে আগত চিকিৎসা টিমের সদস্যরা জানান, এলাকায় অপুষ্টিজনিত সমস্যা প্রকট। এসব শিশুদের টিকা দেয়া হয়েছিল কিনা তাও অনিশ্চিত। এ কারনে নানা রোগে তার আক্রান্ত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই পল্লীতে ৫২ পরিবারের ৩৫০ জনের জন্য তিনটি পানির নলকূপ থাকলেও সবকটি অকেজো। প্রায় দেড় কিলোমিটার ছরা থেকে পানি এনে তা পান ও ব্যবহার করে থাকে। গতকাল স্থানীয় কিছু মুসলিম পরিবারের যুবক উক্ত এলাকায় এসে একটি নলকূপ সচল করে দেয়। এতে করে ত্রিপুরাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। পল্লীতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাব। ফুলমতি ত্রিপুরা, শান্ত ত্রিপুরা, নিশিরং ত্রিপুরা ও ধনপতি ত্রিপুরা এদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজাতি পল্লীটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় তারা দূরের কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা ও স্বাস্থ সেবা গ্রহণ করতে যান না। আর দায়িত্বপ্রাপ্তরাও নির্ধারিত স্থান ছাড়া অবেহেলিত এই এলাকায় গিয়ে টিকা দেয়না।
সচেতনতার অভাবে ত্রিপুরাপল্লীর জনগোষ্ঠি সরকারী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ধনমিয়া ত্রিপুরা জানান, শুধুমাত্র ভোটের সময় প্রার্থীরা এলাকায় আসে। ভোট শেষ হলে কেউ তাদের খবর রাখেনা। অনেক পরিবারের সন্তানদের জন্মনিবন্ধন নেই। সোনাই ত্রিপুরা পল্লী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার হওয়ায় এবং যাতায়াতের কোন ধরনের যানবাহন না থাকায় আর্থিক কারণে তারা পরিষদে গিয়ে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে পারেনা। নিশিচন্দ্র ত্রিপুরার কন্যা উদালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না ত্রিপুরা (১৩) জানান, তারা কোন সময় টিকা নেয়নি। জন্ম নিবন্ধনও করেনি, এমনকি জন্মনিবন্ধন কাকে বলে তাও জানেনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন