মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রোহিঙ্গা সঙ্কট অনন্তকাল চলতে পারে না

প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে দু’শতাধিক

বিবিসি | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না, এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় মঙ্গলবার এ রকম জোরালোভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সংস্থাটির মহাসচিব।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার এক বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব গণ জুলাই মাসে তার কক্সবাজার সফরের সময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যে মর্মস্পর্শী বর্ণনা শুনেছেন, এই সভায় তা তুলে ধরেন। নিরাপত্তা পরিষদের চলতি আগস্ট মাসের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্যের আয়োজনে এতে আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপি›র অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তেগেগনিঅর্ক গেট্টু এবং ইউএনএইচসিআর›র শুভেচ্ছা দূত ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী মিজ কেইট ব্ল্যানশেট। সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক মাহমুদ আহমাদ।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের বাইরে এই সভায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
মহাসচিব আরও বলেন, ‘সংকটটি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণের সময় যে একতা দেখিয়েছিল, সেই একতা ধরে রাখতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা আবারও তুলে ধরেন তিনি। জাতিসংঘ এবং এর বিভিন্ন সংস্থাকে রাখাইন রাজ্যে বাধাহীন প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। একবছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ব্যক্তিগণ পদক্ষেপসহ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় যে সকল ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
‘আমরা যেন আর ব্যর্থ না হই’- এমন আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচসিআর›র শুভেচ্ছা দূত মিজ কেইট ব্ল্যানশেট বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মুভেদের উর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত একবছরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে রেখে এর সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানান। সঙ্কট সমাধানে গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদ‚ত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সুপারিশমালার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে।
মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পদক্ষেপ সমূহের টেকসই বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, এই সঙ্কট একই সঙ্গে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেবে।
গণহত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত এবং সুপরিকল্পিত পদ্ধতি অনুসরণ করেই অপরাধীরা এই হীন অপরাধ সংঘটিত করেছে-মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টের এই উদ্বৃতি উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করার জন্য দেশটিকেই এগিয়ে আসতে হবে। তার জন্যে তিনি চারটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো হলো রাখাইন প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ও শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর-কে স্বাধীনভাবে ঢুকতে দিতে হবে, সীমান্তে আটকে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে এবং ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিতে হবে, রাখাইন রাজ্যের আইডিপি ক্যাম্প উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং সেখানে আটকরা যাতে নিজ বাসভূমিতে স্বাধীনতা নিয়ে টেকসইভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে, রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং হিংসার জন্ম দেয় এমন কর্মকান্ড দমন করতে হবে।
জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দুঃখ ও দুঃস্বপ্নের এক বছর পূর্তিতে কক্সবাজারের ক্যাম্পে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাাকার্ডের একটি ‘এক বছর কেঁদেছি, এখন আমি ক্রোধান্বিত’-এই বক্তব্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই শোকানুভূতি এবং ক্রোধের প্রতিধ্বনি আজ এই কাউন্সিলেও আমরা শুনতে পেলাম।
এ সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদ‚ত তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার দেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নিজেদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
প্রবেশের অপেক্ষায় দু’শতাধিক রোহিঙ্গা
আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানায়, সীমান্তে আরও দুই শতাধিক রোহিঙ্গা দেশের ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যেই সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ দেশে নিরাপদে আশ্রয় নিতে আরও কয়েকশ রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষা করছে।
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে দু’শর বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ইতোমধ্যেই সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। তারা ওই এলাকায় কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে।
বিজিবি ছাড়াও নাফ নদে টহল দিচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা জারি রয়েছে।
লেদা শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা আব্দুল মোতালেব মাতের বলেন, তিনি তার পরিবার এবং মিয়ানমারে থেকে আসা অন্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, নাফ নদের পূর্ব পাশে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নতুন করে নির্যাতন-নিপীড়ন চালালে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তে অপেক্ষা করছেন।
ওন্তারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ওআইডি) জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে ১ লাখ ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বর্বরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোরীকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মামুন ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৫:০০ এএম says : 0
দ্রুত তাদেরকে নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নেয়া হোক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন