বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৯৫০ কোটি টাকা পাচ্ছে ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঢাকায় আজ আসছে চীনা প্রতিনিধি দল
শেয়ার হস্তান্তর মঙ্গলবার
পুঁজিবাজারের জন্য নতুন মাইলফলক বললেন বিশেষজ্ঞরা


ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশিদারের সব বিষয় চুড়ান্ত। শুধুমাত্র অর্থ হাতে পাওয়া ও চুক্তি অনুযায়ী অর্থের সমপরিমান শেয়ার হস্তান্তর করলেই শেষ। আর এই কাজ দুটি সম্পন্ন করতে আজ রোববার চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের (জোট) ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন। পরের দিন সোমবার ডিএসইর শেয়ার পেতে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করবে জোটটি। এর পরের দিন আগামী মঙ্গলবার জোটটির কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার হন্তান্তর করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ডিএসই’র নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা ডিএসই’র চীনের কাছ থেকে কৌশলগত অংশিদারের অর্থ পাওয়ার বিষয়টিকে ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক বলছেন। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী হবে পুঁজিবাজার। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেছেন তারা। তাদের মতে, এর মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মর্যাদায় উন্নীত হলো। এটি কারিগরি সহায়তা ও পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। চীনের প্রথম সারির এই দুই স্টক এক্সচেঞ্জের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।  
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিষ্ঠান দুটি চীনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুঁজিবাজার। বাজার মূলধনের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ দশে রয়েছে। এ রকম প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র মালিকানায় আসায় দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। এখন বিদেশীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন। একই সঙ্গে কারিগরিভাবেও শক্তিশালী হবে বলে উল্লেখ করেন মির্জা আজিজুল ইসলাম।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিটা অ্যাকাউন্ট (বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ টাকায় রূপান্তরের বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) খোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যে অনুমিত পেয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে এই অ্যাকাউন্ট খুলে ডিএসইর শেয়ারের জন্য অর্থ পরিশোধ করার সব প্রক্রিয়া শেষ করেছে চীনা জোট।  
সূত্রটি জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোট কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার পেতে অর্থ পরিশোধের পর মঙ্গলবার বোর্ড সভা করবে ডিএসই। সকালে অনুষ্ঠিত ওই বোর্ড সভায় জোটটির একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, যিনি পরবর্তীতে ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের সদস্য হবেন। বোর্ড সভার মাধ্যমেই শেয়ার হন্তান্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে শেয়ার হন্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোটকে নিটা অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অনুমতির বিষয়টি পরের দিন ২৭ আগস্ট ডিএসই থেকে জোটটিকে জানানো হয়।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গত ১৪ মে চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি সই করে ডিএসই। ওই চুক্তি অনুযায়ী, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোট ডিএসইর ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনবে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২১ টাকা দরে মোট ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পরিশোধ করবে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোট।
ডিএসইর শেয়ারের বিপরীতে চীনা জোটের দেয়া অর্থ ডিএসইর সদস্য ব্রোকারদের ভাগ করে দেওয়া হবে। বর্তমানে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন ২৩৭ ব্রোকার। এ হিসাবে প্রত্যেক ব্রোকার কৌশলগত শেয়ার বিক্রি থেকে পাবেন প্রায় চার কোটি টাকা করে।
অবশ্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ২১ টাকা দরে বিক্রি করায় মূলধনী মুনাফার ওপর কর দিতে হবে। তবে ব্রোকাররা অন্তত তিন বছরের জন্য শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের শর্তে এ লেনদেনে কর ছাড় চেয়েছেন।
ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, চীনা কনসোটিয়াম অর্থ জমা দেওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী  অ্যাকাউন্টে থাকবে, শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন বলে ইতোমধ্যে ডিএসই’র বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান জানান, সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যায়ে। মাজেদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ কর্মকান্ডের পর বিশ্বের অন্যতম স্টক এক্সচেঞ্জ চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসই’র কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় ডিএসই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এতে কৌশলগত ও কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ভারতের প্রতিষ্ঠানকে নেয়ার চাপ ও নানা তালবাহানার পর চলতি বছরের ৩ মে চীনা জোটটিকে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। অবশ্য এ অনুমোদনের সঙ্গে বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে রয়েছে- কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সকল কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন ও দেশের প্রযোজ্য অন্যান্য আইনসহ এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এবং ডিএসই’র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী পরিপালন করা। চুক্তির বাস্তাবায়ন প্রক্রিয়া চুক্তি সই’র পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশনের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত চুক্তির শর্তাবলি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। পরে ১৪ মে রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএসই’র স্ট্রাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) হিসেবে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন