বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রথম ট্রায়াল রানে গতিবেগ বাড়েনি

ভারত থেকে আনা লাল সবুজ কোচের মান নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা ; ভারত থেকে আনা ব্রডগেজের লাল সবুজ কোচের ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক দৌড়) হয়ে গেলো। বুধবার সকালে সৈয়দপুর রেল কারখানা থেকে ১৩টি কোচ নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেন সিরাজগঞ্জের জামতৈল স্টেশন পর্যন্ত এসে আবার সৈয়দপুরে ফিরে গেছে। ৫২২ কিলোমিটার ট্রায়াল রানের নেতৃত্ব দেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। ট্রায়াল রান শেষে ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন করে কোচগুলো রেলের যন্ত্রকৌশল বিভাগ থেকে ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এগুলো আন্তনগর ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে।  
রেল সূত্র জানায়, ভারত থেকে আমদানি করা লাল সবুজ কোচগুলো সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রাথমিক পর্যক্ষেণ করা হয়েছে। ভারতীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে স্থানীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, শ্রমিকরা যৌথভাবে কোচগুলোর কারিগরি খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ সময় কোচগুলোর বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি লক্ষ্য করেছেন তাঁরা। যা মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র ভারত থেকে আমদানি করা এলএইচবি কোচগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সৈয়দপুর  রেল কারখানায় যারা কোচগুলো পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে কোচগুলোতে বেশ কিছু ত্রুটির কথা জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে কোচগুলোকে স্টেইনলেস স্টিলের তৈরী বলা হরেও আসলে সেগুলো স্টেইনলেস স্টিলের নয়। ভেতরের ফ্রেমও স্টিল নয়। কারণ এগুলোতে চুম্বক ধরলে আটকে যায়। স্টিলের মধ্যে চুম্বক আটকানোর কথা নয়। সৈয়দপুর রেল কারখানার একজন কর্মচারী বলেন, ভারতীয় প্রকৌশলীর কাছে কয়েকজন এ নিয়ে প্রশ্ন করলে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘ইয়ে ইন্ডিয়াকা স্টিল হ্যায়। স্টেইনলেস স্টিল নেহি।’ সূত্র জানায়, কোচগুলোর ফিটিংস সুগঠিত নয়। কয়েক মাস চললেই এগুলো নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। ইলেকট্রিক ওয়ারিং করা হয়েছে পেস্টিংয়ের মাধ্যমে। ইলেকট্রিক ক্যাবলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আংশিক মেরামত করার সুযোগ রাখা হয়নি। পেস্টিং ভেঙ্গে পুরোটাই খুলে বা ভেঙ্গে মেরামত করতে হবে। এসি কোচে যে সব এসি মেশিন লাগানো হয়েছে সেগুলোতে কোনো ফ্যান নেই। এতে করে কোচগুলোতে ঠান্ডা স্থায়ী না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফ্রিজগুলোতে বোতল রাখার জন্য যে সব ক্লিপ লাগানো সেগুলো খুবই নি¤œমানের। ট্রায়াল রানের সময় এগুলোর বেশিরভাগ নড়বড়ে হয়ে গেছে। পাওয়ার কারগুলোর শব্দও বিকট। আবার কোচগুলো তুলনামূলক উঁচু বেশি। এ কারণে যাত্রীদের ওঠানামা করতে অসুবিধা হবে। ব্রডগেজের এই কোচগুলোর রঙ নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক বিতর্ক হয়েছে। অনেকের মতে, রঙের ফিনিশিং একেবারেই নি¤œমানের। এদিকে, বুধবার ট্রায়াল রানের আগে বিশেষ ট্রেনটির গতিবেগ নির্ধারণ করা হয়েছিল ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার। কিন্তু একশ’ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ বাড়ানো হয় নি। একাধিক সূত্র দাবি করেছে, কোচগুলোর ফিটিংস এর সমস্যার কারনে ট্রেনটি চলার সময় শব্দ হচ্ছিলো। এ কারনে ট্রেনে উপস্থিত কর্মকর্তারা গতিবেগ একশ’র মধ্যে রাখার নির্দেশ দেন। তবে একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, কোচের জন্য নয়, মূলক ট্র্যাকের  (রেল লাইন) জন্য গতিবেগ বাড়ানো যায় নিস। কারণ সৈয়দপুর থেকে ঈশ্বরদী হয়ে জামতৈল পর্যন্ত দূরত্বে অনেক স্থানেই পুরাতন স্লিপার রয়েছে। যেগুলোর উপর দিয়ে একশ’র বেশি গতিবেগে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। ওই কর্মকর্তা বলেন, লাল সবুজ কোচ দিয়ে ট্রেনের গতিবেগড় ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার করতে হলে আগে ট্র্যাকের পুরাতন স্লিপারগুলো বদলাতে হবে।  ভারত থেকে আমদানি করা ব্রডগেজের জন্য৪০টি  লাল সবুজ কোচের মধ্যে ২০টি আসে গত ২০ মার্চ। বাকী ২০টি আসে ৪ এপ্রিল। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারকানার প্রাথমিক পরীক্ষা নীরিক্ষা ও লোড টেস্টিং শেষে  প্রথম দফা ট্রায়াল রান সম্পন্ন হলো। খুব শিগগিরি দ্বিতীয় দফা ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হবে। রেল সূত্র জানায়, ট্রায়াল শেষে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এই কোচগুলো দিয়ে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-নীলফামারী রুটের আন্তনগর ট্রেনের বহরে কোচগুলো যুক্ত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন