রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রানী ভিক্টোরিয়া বনাম দ্বিতীয় এলিজাবেথ কে কার চেয়ে এগিয়ে

প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উপমহাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্রিটিশরা। তাদের শাসনের পরিধি এত ব্যাপক ছিল যে, প্রবাদই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না। স্বাভাবিকভাবেই এ বিশাল সা¤্রাজ্যের প্রজাদের কাছে মর্যাদার আসন পেতেন রাজা বা রানীরা। উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজা-রানীর আমল শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালে। তবু এখনো রানী শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে ব্রিটিশ রানীদের কথা। সিংহাসনে থাকার মেয়াদে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ যেহেতু ছাড়িয়ে গেছেন রানী ভিক্টোরিয়াকে সেহেতু কে কার চেয়ে এগিয়ে এমন একটা জরিপ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নামি গণমাধ্যমে উভয়ের শাসনামলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করছেন। রানী ভিক্টোরিয়া বনাম দ্বিতীয় এলিজাবেথ : কে কার চেয়ে এগিয়ে? ব্রিটিশ শাসন ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় স¤্রাজ্ঞী হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সাম্প্রতিক সময়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রতি ১০ জনের সাতজন রানীকে সমর্থন করেন। তারা রানীর কাজকর্মে সন্তুষ্ট। দুই রানীর মধ্যে এত এত তুলনা, আলোচনা-সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও দি টেলিগ্রাফ পত্রিকা মনে করে, উভয় রানীই ব্রিটিশদের পরম পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ব্রিটিশরা প্রাপ্য সম্মান দেয়, তেমনি মহারানী ভিক্টোরিয়া বিতর্কিত হলেও ইংল্যান্ডবাসী তাকে তার সম্মান দিতে কখনো কার্পণ্য করেনি।
১৮১৯ সালের ২৪ মে রানী ভিক্টোরিয়া জন্মগ্রহণ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিশু ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা ইংরেজি ছিল না। তার মা ছিলেন একজন জার্মান ডিউকের মেয়ে, যিনি ইংরেজিতে কথা বলতেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন রানী ভিক্টোরিয়া। তার শাসনামলেই ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সীমা বিস্তৃত হয় সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আসে তার সময়ে। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল অংশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে আসে রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে। এই বিশাল সা¤্রাজ্যের শাসনভার তার হাতে থাকায় তিনি রানী থেকে হয়ে ওঠেন মহারানী। সা¤্রাজ্য বিস্তারে রানী সিদ্ধহস্ত হলেও নানা কর্মকা-ের জন্য তিনি নিজ দেশ ইংল্যান্ডে ছিলেন বিতর্কিত। এমনিতেই ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যধিক উত্তেজিত, স্বার্থপর, পক্ষপাতদুষ্ট, বাচাল এবং অলস।
সিংহাসনে থাকাকালীন তিনি বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। অল্প বয়সে রানী মনোনীত হওয়ার পর তাকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করতেন প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্ন। তারা বেশ ভালো বন্ধুও ছিলেন। ১৮৩৯ সালে তাদের এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। এই বিরোধের জের ধরে লর্ড মেলবোর্ন ১৮৪১ সালে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্লাডস্টোনের সঙ্গে রানী ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল।
রানীর তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৮৭২ সালে সিক্রেট বালট অ্যাক্ট এবং ১৮৮৪ সালে রিফর্ম অ্যাক্ট পাস হয়েছিল ইংল্যান্ডে। দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও রানী ও প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোনের সঙ্গে তীব্র বিরোধ ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রেমের গুজব ও রাজকর্মচারী লেডি ফ্লোরাকে অন্তঃসত্ত্বা বলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া রানীকে ইংল্যান্ডে চরম অজনপ্রিয় করে তোলে। লেডি ফ্লোরার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ রটানোয় ইংল্যান্ডবাসী চরমভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এরই জের ধরে ইংল্যান্ডের রাস্তায় রানী প্রথমবারের মতো আততায়ীর হামলার শিকার হন। প্রকৃতপক্ষে মহারানী ভিক্টোরিয়া তার সা¤্রাজ্য বিস্তারে ইংল্যান্ডে যতটা জনপ্রিয় ছিলেন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ততটাই অজনপ্রিয় ছিলেন।
অন্যদিকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন ২৫ বছর বয়সে। নামের সঙ্গে দ্বিতীয় থাকলেও তিনি অদ্বিতীয়। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন। এক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছেন রানী ভিক্টোরিয়াকে। ২৫ বছর বয়সে রানী এলিজাবেথের মাথায় ওঠে রাজমুকুট। সেই থেকে ইংল্যান্ডের জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় রানী হয়ে কাটিয়ে দিলেন ৬৪ বছর ২ মাস ১৫ দিন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রানী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার মাধ্যমে দ্বিতীয় এলিজাবেথ কাজ করেছেন ১২ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, যাদের অনেকের জন্ম হয়েছে তিনি সিংহাসনে বসার পরে।
দীর্ঘ এ শাসনামলে তিনি দেখেছেন নিজ দেশ ও বিশ্বের নানামুখী পটপরিবর্তন। কিন্তু প্রতিটি পটপরিবর্তনে তিনি দক্ষ হাতে তার সা¤্রাজ্য শাসন করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়ার সময়ে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের আয়তন বাড়লেও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময় তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তবু নিজ গুণের কারণে তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর রানী হিসেবেই অধিষ্ঠিত আছেন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২১ এপ্রিল রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯১ বছরে পা দিলেন। দীর্ঘ এই সাড়ে ছয় দশকের শাসনকালে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য বিতর্ক তাকে ছুঁতে পারেনি। তিনি কখনো কোনো কাজে আপস করেননি। কখনো নিজের ওপর আস্থা হারাননি। এখনো তিনি শাসন কাজে সহজ ও সাবলীল। ইডিপেনডেন্ট, টেলিগ্রাফ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন