এককালের খরস্রোতা মহারশি নদীটি পানি শুণ্য মরা খালে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে গত ক’বছরে নদীটির দুই পাড় দখলে দখলে সরু খালে পরিণত হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অনেক বসতি। রাতারাতি তৈরি হচ্ছে বাড়িঘর। নদীটির দুই পাড় জুড়েই এই অবস্থা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ ব্যাপারে নেই কোন মাথা ব্যথা।
প্রকাশ্যে এই দখল প্রক্রিয়া চললেও নদীটি রক্ষার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। উপজেলার প্রবীণ লোকজন জানান, আজ থেকে মাত্র ৩০-৪০ বছর আগেও ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলা খরস্রোতা মহারশি নদীর ঢেউ ভেঙে চলতো বড় বড় নৌকা।
জেলেরা নৌকা নিয়ে যেমন মাছ ধরতে নেমে পড়তো তেমনি ব্যবসায়ীরাও পণ্যসামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করতে আসতো ঐতিহ্যবাহী ঝিনাইগাতী হাটে। আবার ব্যবসা-বানিজ্য শেষে দিনান্তে ওই নৌকায়ই চলেও যেতেন গন্তব্যে।
সেই ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা মহারশি নদী আজ অবিশ্বাস্য মরা খাল! খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর নদী সংলগ্ন দুইপাড়সহ পুরো নদীটির দুই পাড়ের মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো জেগে ওঠা চর দখলে নিয়েছে। জেগে ওঠা নদীর চরে বাড়ীঘর এমনকি নানা ধরণের বৃক্ষরোপন এবং ফসল আবাদ করছেন। এ দৃশ্য নদীর প্রায় সর্বত্র হলেও এ দিকে কতৃপক্ষের নেই কোন দৃষ্টি।
বর্তমানে দুই দিক থেকে দখলের ফলে মহারশি নদীটি এখন পরিণত হয়েছে সরু এবং মরা খালে। জানা যায়, এক শ্রেনীর বালুখেকো অবাধে পাম্পের সাহায্যে বালু উত্তোলন করায় বালু সাথে পানি উঠে যায়। এতে নদীটির পানির প্রবাহ ও মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমি অফিসের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক কর্মকর্তাসহ কর্মচারীরা জানান, নদী পাড়ের এ সব জমি একদিনে বেদখল হয়নি। তবে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
অপর দিকে ইতিপূর্বে এই মহারশি নদীতে পাওয়া যেতো প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃকি মাছ। তাও আজ হারিয়ে গেছে। ফলে ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী খরস্র্রোতা মহারশী নদীটি এখন হয়ে পড়েছে মৎস্যশূন্য মরা খাল ! নদীটি দু’পাড়ের শত শত একর জমি ভরাট ও বেদখলের কারণে রয়েছে চরম অস্তিত্ব সংকটে। ফলে গোটা ঝিনাইগাতী হয়ে পড়েছে মৎস্যশূণ্য। অথচ শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের এই মহারশি নদীটিকে ইতোপূর্বে বলা হতো মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডার।
প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদও ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমনি ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। প্রবীণ ব্যাক্তিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়. সাধারণত. মে-জুনে বেশীর ভাগ মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়তো মহারশীসহ স্থানীয় নদী-নালা,খাল-বিলে। আর এই ডিম ফুটতো জুলাই-আগষ্ট মাসে। পোনা মাছ আকারে এই সময়টায় বড় হতো। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে -জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত বলতে গেলে কোন বৃষ্টিই হয়না। আবার উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অনেক মাছের ডিম শুকিয়ে যায় মাছের পেটেই। জুলাই এর শেষের দিকে সামান্য বৃষ্টিতে পানি এলেও প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, সিং, টেংড়া, পুটি, দারকিনা, মলা, চেলা, ঢেলা,চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এখানে। কিন্তুু কালক্রমে বর্তমানে চলছে দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। যেখানে মাত্র ক’বছর আগেও কালে-ভদ্রে কিছু কিছু প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তুু এখন আর সে সব মাছ যেনো দেখাই যাচেছ না। বলতে গেলে এসব মাছের পোনার দেখাও মিলছেনা।
এলাকার প্রবীণ লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ২/৩ দশক আগেও মহারশী নদীর গভীরতা ছিল অনেক। কৃষকরা জানান, প্রতি বছর ইরি-বোরো মওসুমে মহারশী নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন মহারশী নদীর পানি সেচের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তুু প্রায় এক যুগ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীটিকে প্রায় মরা খালে পরিনত করা হলেও কতৃপক্ষের এ দিকে কোন দৃষ্টি নেই। ফলে পানির অভাবে সেচ দিতে না পারার কারণে নদীর দুই পাড়েরর শত শত একর ইরি-বোরো ক্ষেত পতিত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া নদীর উজানে রাবার ড্যাম নির্মনের জন্য বাঁধ এবং পার্শ্বে আরো একটি বেআইনী বাঁধ নির্মাণ করেছে নলকুড়া লোকজন। এতে ওই এলাকায় চুটিয়ে পানি বিক্রি করলে ভাটি এলাকা হয়ে পড়বে পানি শুণ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ তাদের সমীহ করায় ভাটি এলাকার কয়েক শত একর জমির ফসল পানির অভাবে আবাদ করা যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন